Home শিক্ষা ও সাহিত্য ভ্রান্ত আক্বিদার মোকাবেলায় তরুণ আলেমদেরকে দক্ষ হয়ে গড়ে ওঠতে হবে: আল্লামা মুফতি...

ভ্রান্ত আক্বিদার মোকাবেলায় তরুণ আলেমদেরকে দক্ষ হয়ে গড়ে ওঠতে হবে: আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন

জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেছেন, হাদীস সংকলন রাসূল (সা.) ও খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগ থেকে চলে আসছে। সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) রাসূলুল্লাহ (সা.)এর কাছ থেকে সরাসরি শুনে ও অবলোকন করে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সুতরাং যারা রাসূল (সা.)এর হাদীসকে অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখায়, তারা কখনোই মুসলমান হতে পারে না। এদের ভ্রান্ত আক্বিদা সম্পর্কে সচেতন হতে সাধারণ মুসলমানদেরকে সতর্ক করতে হবে। এই লক্ষ্যে তরুণ আলেমদেরকে ভালভাবে পড়াশোনা, গবেষণা এবং বিষয়ভিত্তিক সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে যোগ্যরূপে গড়ে উঠতে হবে।

মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগের উদ্যোগে “ইনকারুস সুন্নাহ: পরিচয়, প্রকৃতি, ইতিহাস, মতবাদ ও যুক্তির অপনোদন; আমাদের করণীয়” শীর্ষক এক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন এসব কথা বলেন।

বক্তব্যে আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন আরো বলেন, আল্লাহ তায়ালা মানুষের হিদায়াতের জন্য দুনিয়াতে এক লাখ বা ২ লাখ ২৪ হাজার নবী এবং ৩১৩/৩১৫ জন  রাসূল পাঠিয়েছেন। তন্মধ্যে ৫ জন বিশিষ্ট রাসূল আল্লাহ তায়ালা দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। যথা- ১) হযরত নূহ (আ.), (২) হযরত ইব্রাহীম (আ.), ৩) হযরত মূসা (আ.), ৪) হযরত ঈসা (আ.) এবং ৫) সর্বশেষ রাসূল হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (সা.)। এভাবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের রাসূলের উপর পবিত্র কুরআন নাযিল করেছেন। সেই কুরআনের মধ্যে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী ব্যতিত নিজে থেকে কোনো কথা বলেন না।

তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তাআলা নবীকে নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। নবীর সব কথা আল্লাহ তায়ালা ওহীর মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। তাহলে আমাদের নবীর হাদিসকে অস্বীকার করা মানে নবীকে অস্বীকার করা। আর নবীকে অস্বীকার করা মানে আল্লাহর কথাকে অস্বীকার করা। এর মানে আল্লাহকে অস্বীকার করা।

তিনি বলেন, নবীর হাদিস হচ্ছে হুজ্জাতে দ্বীন। আমাদের দ্বীন ইসলামের জন্য যে নবী প্রেরণ করেছেন সেই দ্বীনের হুজ্জাত হিসাবে  তিনটি জিনিস, যথা- (১) পবিত্র কুরআনুল কারীম, (২) হাদীসে রাসূল এবং (৩) ফিকহে ইসলাম (ইজমা কিয়াস)। হাদিসকে অস্বীকার করা মানে হুজ্জাতে দ্বীনকে অস্বীকার করা। আর যারা হুজ্জাতে দ্বীনকে অস্বীকার করবে তারা কুরআনের অসংখ্য আয়াতকে অস্বীকার করে।

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, হযরত ওসমান (রাযি.)এর যামানা থেকে শুরু হয় এই ভ্রান্ত আকিদা। উপমহাদেশের মধ্যে এই ভ্রান্ত আকিদা শুরু করে আবদুল্লাহ ছকড়ালভী ১৯৫০ ইংরেজীতে গোলাম আহমদ পারভেজ-এর তত্ত্বাবধানে ‘তুলুয়ে ইসলাম’ পত্রিকার মাধ্যমে এই ইনকারে হাদীসের ভ্রান্ত তত্ত্ব প্রচার করেছে।

আরও পড়তে পারেন-

ওলামায়ে হক্কানী রাব্বানী আকাবিরে দেওবন্দ এই ভ্রান্ত মতবাদের উৎখাতে এমন জোরালো দাওয়াতী কাজ জারি করেছেন যে, চক্রান্তকারীরা সফল হতে পারেনি।

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন আরো বলেন, এই ইনকারুল হাদিস তথা হাদীস অস্বীকারকারীদের অন্যতম এক ভ্রান্ত আক্বিদা হলো, তারা বলে থাকে- “কুরআন এবং হাদিস হলো রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করার জন্য। কিন্তু যখন একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম হয়ে যাবে, তখন কুরআন ও হাদিসকে মানার আর কোন প্রয়োজন নেই। বরং যারা রাষ্ট্র পরিচালক হবেন রাষ্ট্রপরিচালকদের আদেশ-নিষেধকে সম্পূর্ণভাবে মানতে হবে”। এই আক্বিদা সম্পূর্ণ কুফরী।

এভাবে তাদের আরো কয়েকটি আক্বিদা হলো- * দুই ওয়াক্ত নামাযই কেবল ফরয, বাকীগুলো সব নফল। * নবীর সিলসিলা যখন শেষ হয়ে গেছে, এখন মানুষ নিজের ফায়সালায় নিজে চলবে। এদের জন্য নবীর অনুসরণ করা জরুরী নয়। * নবীর জন্য কোন অধিকার নেই যে, মানুষকে একথা বলা- আমার অনুসরণ করো। * নামায, রোযা, সদকা, খয়রাত; এগুলো সব মানুষের সুনাম অর্জন করার জন্য। * হজ্ব মুসলমানদের একত্রিত হওয়া এক জমায়েতের নাম; এটা কোন ইবাদত নয়। * কুরবানীর ঈদের দিন ১২টার মধ্যে (পশু যবেহর মাধ্যমে) কোটি মানুষ কোটি কোটি টাকার সম্পদ অপচয় করে। কুরবানী কোন আবশ্যিক ইবাদত নয়। * হাদীস একটা ইতিহাসের নাম, এটা হুজ্জাতে দ্বীন তথা দ্বীনের প্রমাণাদি নয়। * মৃত জন্তু, রক্ত এবং শূকর, অপরের নামে উৎসর্গ করা জন্তু- এগুলো ব্যতীত দুনিয়াতে হারাম বলে কোন খাদ্য নেই। এসব উক্তি তাদের মুখপত্র ‘তুলুয়ে ইসলাম’ এবং তাদের বিভিন্ন দায়িত্বশীলদের কাছে লিখিত বার্তার মধ্যে দেখা গেছে।

এভাবে তাদের ১১ থেকে ৩০টা ভ্রান্ত আক্বিদা রয়েছে। আমাদের আকাবের আসলাফগণ এসব বিষয়ে প্রচুর কিতাব লিখে গেছেন। জাতির ভবিষ্যৎ রাহবার হিসেবে পূর্ণরূপে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হলে আপনাদেরকে ভালোভাবে এসব কিতাবাদি পড়াশোনা করে দলিল সহকারে বিষয়গুলোর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। হকের আওয়াজ তুলে ধরলে এসব বাতিল ফিরকা লেজতুলে পালিয়ে যাবে।

এভাবে তাদের ১১ থেকে ৩০টা ভ্রান্ত আক্বিদা রয়েছে। আমাদের আকাবের আসলাফগণ এসব বিষয়ে প্রচুর কিতাব লিখে গেছেন। জাতির ভবিষ্যৎ রাহবার হিসেবে পূর্ণরূপে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হলে আপনাদেরকে ভালোভাবে এসব কিতাবাদি পড়াশোনা করে দলিল সহকারে বিষয়গুলোর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। হকের আওয়াজ তুলে ধরলে এসব বাতিল ফিরকা লেজতুলে পালিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের উত্থান এবং বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ইসলামের প্রতি ব্যাপক আগ্রহবোধ তৈরি ও দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে থাকায় ইসলামবিদ্বেষী ও নাস্তিক্যবাদি অপশক্তি ইসলামের মধ্যে বিতর্কের বীজ বুনতে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে আসছে। বর্তমানেও এসব ষড়যন্ত্রকারীরা থেমে নেই। এখন তারা হাদীসের অপব্যাখ্যা ও হাদীস নিয়ে নতুন নতুন বিতর্ক তৈরির ষড়যন্ত্র জোরদার করেছে। তাই নায়েবে নবী উলামায়ে কেরামকে এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হয়ে তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে উপযুক্ত জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে দক্ষতার সাথে নিজেদেরকে তৈরি করতে হবে। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দারুল উলূম হাটহাজারীর আকাবির হযরতগণ হাদীস গবেষণার উপর অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করে উলূমে হাদীস বা উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগ চালু করেছেন।

আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন বলেন, আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও সন্তুষ্ট যে, বর্তমানে এই বিভাগে একদল তরুণ উদ্যোমি আলেম গবেষণায় যুক্ত আছেন। এ ধরণের বিষয়ভিত্তিক সেমিনার যাতে নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়, বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। এতে করে ষড়যন্ত্রকারীদের তৈরি করা নতুন নতুন সংকট যেমন চিহ্নিত হবে, তেমনি এসব সংকটের মোকাবিলায় নিজেদেরকে উপযুক্ত ও দক্ষ আলেম হিসেবে গড়ে তোলা সহজ হবে।

উচ্চতর হাদীস গবেষণা বিভাগের যিম্মাদার মাওলানা ড. নূরুল আবছার আযহারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীর মহাপরিচালক আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া।

অন্যান্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন- বিভাগীয় শিক্ষক মাওলানা মোশাররফ হোসাইন আযহারী, মাওলানা মুহাম্মদ নোমান আযহারী প্রমুখ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।