Home ইসলাম শিশুদের কাঁধে নিলে কি ফেরেশতারা কষ্ট পান

শিশুদের কাঁধে নিলে কি ফেরেশতারা কষ্ট পান

।। মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ।।

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে কিছু দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। দুনিয়ার জীবনে আমাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রত্যেকের সঙ্গে দুজন ফেরেশতা নিয়োজিত করেছেন। তাঁরা আমাদের নেক ও বদ আমল সবই লিখে রাখেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ রেখো! দুই গ্রহণকারী ফেরেশতা তার ডানে ও বাঁয়ে বসে তার কর্ম লিখে রাখেন।’ (সুরা : ক্বফ, আয়াত : ১৭)

তাফসিরবিদদের মতে, মানুষের দুই কাঁধে দুজন ফেরেশতা থাকেন। ডান কাঁধের ফেরেশতা তার ভালো কাজগুলো লিখে রাখেন, আর বাঁ কাঁধের ফেরেশতা তার মন্দ কাজগুলো লিখে রাখেন। (কুরতুবি)

উপরোক্ত আয়াত দেখে অনেকে মনে করে, মানুষের দুই কাঁধে দুই ফেরেশতা থাকেন। এর সূত্র ধরে গ্রামেগঞ্জে প্রচলিত আছে, শিশুদের কাঁধে নেওয়া যাবে না। তাদের কাঁধে নিলে কাঁধে থাকা ফেরেশতাদের কষ্ট হয়। তাঁরা বদদোয়া দেন। এটি একটি ভুল ধারণা। পবিত্র কোরআনের উল্লিখিত আয়াতের তাফসিরে বেশির ভাগ তাফসিরবিদই বলেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য মানুষের দুই কাঁধে দুজন ফেরেশতা থাকেন।

আরও পড়তে পারেন-

দুই কাঁধে ফেরেশতা আছেন—এমন দাবি কেউ করেছে কি না তা আমার বোধগম্য নয়। যদি কেউ এই ব্যাখ্যা করেও থাকে তবু শিশুদের কাঁধে নেওয়া অনুচিত বলা যাবে না। কারণ রাসুল (সা.) নিজেই শিশুদের কাঁধে নিয়েছেন। যদি এটি ফেরেশতাদের জন্য কষ্টকর হতো, তাহলে তিনি কখনো এই কাজ করতেন না।

আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একদা আমরা মসজিদে বসা ছিলাম। এমন সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বীয় কন্যা জয়নবের মেয়ে উমামাহ বিনতে আবুল আস ইবনে রবিকে নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। তখন উমামাহ শিশু ছিলেন, রাসুলুল্লাহ তাঁকে কাঁধে নিয়ে নামাজ আদায় করেন। তিনি রুকু করার সময় তাঁকে নামিয়ে রাখতেন এবং দাঁড়ানোর সময় আবার কাঁধে উঠিয়ে নিতেন। এভাবে তিনি নামাজ আদায় শেষ করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৯১৮)

উল্লেখ্য, এই হাদিস দ্বারা এখানে শুধু রাসুল (সা.) কর্তৃক শিশুদের কাঁধে নেওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু শিশুদের কাঁধে নিয়ে নামাজ পড়া জায়েজ হবে কি না—সে ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে। অবশ্য রাসুল (সা.)-এর প্রিয় নাতিদেরও বিভিন্ন সময় আদর করে কাঁধে তুলেছেন। বারা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হাসানকে নবী (সা.)-এর কাঁধের ওপর দেখেছি। সে সময় তিনি [রাসুল (সা.)] বলেছিলেন, হে আল্লাহ! আমি একে ভালোবাসি, তুমিও তাকে ভালোবাসো। (বুখারি, হাদিস : ৩৭৪৯)

উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায়, শিশুদের কাঁধে না নেওয়ার ব্যাপারে গ্রামগঞ্জে প্রচলিত কথাটি সঠিক নয়। আমরা চাইলে রাসুল (সা.)-এর সুন্নত পালনের নিয়তে শিশুদের কাঁধে তুলে নিতে পারি। তাদের জন্য দোয়া করতে পারি।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।