Home লাইফ স্টাইল কর্মক্ষেত্রে কানাগলিতে আটকে আছেন? স্টিভ জবসের পরামর্শ, ‘অতীত থেকে শিক্ষা নিন’

কর্মক্ষেত্রে কানাগলিতে আটকে আছেন? স্টিভ জবসের পরামর্শ, ‘অতীত থেকে শিক্ষা নিন’

- প্রতিকী ছবি।

জেফ হেডেন, ইনক: উচ্চাকাঙ্ক্ষী এক উদ্যোক্তার সাথে দেখা হলো একদিন, যিনি কলেজের পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে এমন একটি কাজে যোগ দিয়েছেন যেখানে তিনি অনেকটা ‘ডেড-এন্ড’ বা কানাগলিতে আটকে গেছেন, অর্থাৎ এই কাজে মন বসছে না তার।

নবীন এই উদ্যোক্তা বললেন, “আমি ল্যান্ডস্কেপিং করছি, আর এই কাজটা আমার মোটেও ভালো লাগে না, স্রেফ সময় নষ্ট। তার কথা শুনে আমার মনে হলো তাকে বলি, প্রতিটি কর্মক্ষেত্রেই সঠিকভাবে নিজের কাজ করা যায়। লক্ষ্য থেকে যত দূরেই থাকুন না কেন বা কানাগলিতে এসে আটকে যান না কেন, এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায়ও আছে। আর সেই উপায় বাতলে দিয়েছিলেন অ্যাপল এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা, প্রযুক্তি দুনিয়ার অন্যতম পথিকৃৎ স্টিভ জবস।

স্টিভ জবস বলেছিলেন, “আপনি সামনের দিকে তাকিয়ে ডটগুলো (বিন্দু) একটা আরেকটার সাথে মেলাতে পারবেন না, আপনাকে ফিরে তাকাতে হবে পেছনে।”

তবে স্টিভ জবসের কথা প্রথমেই না বলে, আমি এই উদ্যোক্তাকে মার্কিন অভিনেতা থিও রসির গল্প শোনালাম।

ঝানু অভিনেতা থিও রসিকে আমি প্রথমবার দেখি ‘সনস অব অ্যানার্কি’ চলচ্চিত্রে। তার অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে আর্মি অব দ্য ডেড, ট্রু স্টোরি, লুক কেজ ইত্যাদি। সম্প্রতি এমিলি দ্য ক্রিমিনাল-এ প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

রসি তার অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন একেবারে তলানি থেকে, শ্যুটিং সেটে এক্সট্রা হিসেবে কাজ করতেন তিনি। এছাড়াও, বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের ব্যাকগ্রাউন্ড শিল্পী হিসেবে কাজ করতেন। ছোটখাটো যাই কাজ পেতেন তা লুফে নেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ি করতেন! কিন্তু তার ক্যারিয়ারের এই সময়টুকু কিন্তু নষ্ট হয়নি!

অভিনেতা রসির ভাষ্যে, “আমি ২৪ বছর বয়স পর্যন্ত কোথাও অভিনয়ই শুরু করিনি। সে কারণেই আমি বহিরাগত হিসেবে বিবেচিত হয়েছিলাম। কিন্তু বহিরাগত হওয়ার কারণেই আমি বাইরে থেকে এই ইন্ডাস্ট্রিকে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছি। অভিনয়ে নামতে হলে কী কী করতে হবে, আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা- কী কী করা যাবে না, সেগুলো শেখার সুযোগ পেয়েছি। আমি অন্যদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আমি সবকিছুই নিজের মাথার মধ্যে গেঁথে রাখতাম যে এমন পরিস্থিতিতে যদি কখনো পড়ি, তখন আমি কী করবো?”

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ওই সময়টা রসিকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছে। আর তা হলো- অভিনয় কিংবা কোনো ব্যবসা শুরু করা বা পরিচালনা করা, সবক্ষেত্রেই, আত্মবিশ্বাস আসে প্রস্তুতি থেকে।

আরও পড়তে পারেন-

“যখন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, তখন সাথেসাথেই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলার মতো কিছু পাওয়া যায় না। আত্মবিশ্বাস আসে পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে। প্রতিবার যখন আমি একটা চাকরিতে যোগদান করেছি, আমি ভয় পেয়েছি, ভেবেছি যে এই কাজটা আমি পারবো না। কিন্তু এরপরেই আমি সেই ভয় কাটানোর ব্যবস্থা করেছি, আমি বিষয়টা নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। বুঝতে চেয়েছি এখানে মূল চরিত্রটি কে, তিনি কেমন গান পছন্দ করেন, কী খান, কিভাবে হাঁটেন, তার আর্থসামাজিক অবস্থান কী, কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন…”, বলেন রসি।

অভিনেতা আরও যোগ করেন, “কাজের মাধ্যমেই আমরা নিজের মধ্যে সত্যিকার আত্মবিশ্বাস খুঁজে পাই, পূর্ণ দক্ষতা আনতে পারি, নিজের উদ্বেগ-ভয়কে কবজায় রাখতে পারি।”

আমি যখন থিও রসির গল্প বলা শেষ করলাম, তখন নবীন উদ্যোক্তা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন, “এটা তো খুবই দারুণ! কিন্তু এর সাথে আমার সম্পর্ক কী?”

যেহেতু এই উদ্যোক্তা তার ল্যান্ডস্কেপিং এর কাজকে ঘৃণা করেন, তাই তিনি কখনো এই কাজের সুবিধার দিকে মনোযোগই দেননি। কলেজে যাওয়ার পেছনে টাকা খরচ করার বদলে নতুন কিছু একটা শেখার জন্য উল্টো তাকে টাকা দেওয়া হচ্ছে। শুধু ল্যান্ডস্কেপিংই নয়, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্ব ও দলীয় কাজ সম্পর্কেও অনেক কিছু জানতে পারছেন তিনি। এছাড়াও, মানুষ কী কী দেখে অনুপ্রাণিত বা অননুপ্রাণিত হয়, কিভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানুষ বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখায়, কিভাবে ক্রেতাদের সাথে আচরণ করতে হয়- এই সবকিছুই তিনি কর্মক্ষেত্র থেকে শিখতে পারবেন। তাকে শুধু মনোযোগ সহকারে শুনত ও দেখে যেতে হবে।

উচ্চাকাঙ্ক্ষী, নবীন উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ে নামার আগের প্রতিটি চাকরি বা কাজই গুরুত্বপূর্ণ। তা নাহলে সরাসরি ব্যবসায়ে নেমে পদে পদে ভুল করবেন কিংবা ধাক্কা খাবেন এবং কষ্টকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শিক্ষা নিতে হবে।

থিও রসি বলেন, “আমার সামনে যা-ই প্রস্তাব আসে, আমি আগ্রহ নিয়ে দেখি। ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন, এই মুহূর্তে আমি যে কাজ করছি- আমি ঠিক করে ফেলি যে এটাই আমার জন্য এখন সঠিক। তার চেয়ে বড় কথা হলো, আমি কাজটা এমনভাবে করি যেন জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে পেছনে ফিরে তাকিয়ে বলতে পারি যে, হ্যাঁ, তখন আমার সিদ্ধান্তটা সঠিকই ছিল। কাজটা যেমনই হোক না কেন, আমি যে অভিজ্ঞতা নিয়েছি তা যেন বৃথা না যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখি।”

“আর এটা সব ধরনের চাকরির ক্ষেত্রেই যে প্রযোজ্য তা বলাই বাহুল্য। কারণ এসব চাকরির মাধ্যমে আমি একই সাথে অভিজ্ঞতা লাভ করছি, কাজ শিখছি এবং এর জন্য পারিশ্রমিকও পাচ্ছি। তাই আপনি যে কাজই করেন না কেন, সেটাই একটা ‘সুযোগ’। এসব অভিজ্ঞতার জোরেই আপনি ভবিষ্যতে কোনো সমস্যায় পড়লে পেছনে ফিরে তাকিয়ে নিজের ‘ডট’ বা বিন্দুগুলো মেলাতে পারবেন এবং আসলে কোনো কানাগলিতে আটকে যাবেন না। যতদিন পর্যন্ত আপনি এভাবে ভাববেন, ততদিন পর্যন্ত সুযোগের সদ্ব্যাবহার করতেই হবে!”

সূত্র- টিবিএস।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।