Home লাইফ স্টাইল এক বিলিয়নেরও বেশি তরুণ হেডফোন এবং উচ্চ শব্দের কারণে শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে

এক বিলিয়নেরও বেশি তরুণ হেডফোন এবং উচ্চ শব্দের কারণে শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে

শব্দের তীব্রতা পরিমাপের একক হলো- ডেসিবল। নিরিবিলি কোনো পাঠাগারে নিচু স্বরের কথোপকথনের শব্দের মাত্রা প্রায় ২৫ ডেসিবল। ব্যস্ত সড়কে যানবাহনের শব্দমাত্রা ৫০ থেকে ৬০ ডেসিবল পর্যন্ত হতে পারে। আবার ড্রিল মেশিনের ক্ষেত্রে তা ১০০’র বেশিও হতে পারে।

কিন্তু, মানুষের শ্রবণ সীমার স্বাভাবিক মাত্রা ৪৫ ডেসিবল। এর বেশি হলে শব্দদূষণ হয়; যার ফলে মানুষের দেহে নানান সমস্যার তৈরি হয়। বিজ্ঞান বলছে, অল্প, মধ্য অথবা দীর্ঘ সময়ের জন্য ৮০ ডেসিবলের বেশি মাত্রার শব্দ দীর্ঘসময় ধরে কানে আসতে থাকলে- শ্রবণ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। এমনকি এর ফলে কোনো ব্যক্তি শ্রবণশক্তিও হারাতে পারেন বা বধির হয়ে যেতে পারেন। এসব তথ্য উঠে এসেছে এল পাইসের এক প্রতিবেদনে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, পোর্টেবল অডিও ডিভাইসে ১০০ ডেসিবলে ১৫ মিনিট ধরে কোনো কিছু শুনলে- তা কোনো কারখানা কর্মীর আট ঘণ্টা কাজের ৮৫ ডেসিবল মাত্রার শব্দ- অভিজ্ঞতার সমান হয়। একজন শ্রোতা সাধারণত ৭৫ থেকে ১০৫ ডেসিবল মাত্রায় অডিও শোনেন- যা ডব্লিউএইচও’র মতে ‘উদ্বেগের বিষয়।’

কারো শব্দ সহ্যক্ষমতার সীমা কত হতে পারে- তা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। বহুদিন ধরে উচ্চশব্দের সংস্পর্শে থাকলে, তা ব্যক্তির শ্রবণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়। শব্দদূষণের কারণে- বিশেষ করে মানুষের অন্তকর্ণে ‘ককলিয়া’ নামক যে শামুকের আকৃতির প্যাঁচানো নালিকার মতো অংশ থাকে, সেটিই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ডব্লিউএইচও’র হিসাবমতে, বিশ্বজুড়ে বর্তমানে ৪৩ কোটি মানুষের শ্রবণশক্তি অক্ষম এবং উচ্চ শব্দ প্রতিরোধে কোনো পদক্ষেপ না নিলে এ সংখ্যাটি অচিরেই দ্বিগুণ হতে পারে।

ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল গ্লোবাল হেলথ-এ প্রকাশিত এক গবেষণার প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বেচ্ছায় অনিরাপদ মাত্রায় অডিও শোনার অভ্যাসের কারণে বিশ্বজুড়ে ৬৭ কোটি থেকে ১৩৫ কোটি কিশোরকিশোরী ও তরুণ শ্রবণশক্তি হারানোর ঝুঁকিতে আছেন। তরুণদের ২৩.৮ শতাংশ ডিভাইসে উচ্চ শব্দে গানসহ নানান অডিও নিয়মিত শুনে থাকেন। বিশেষ করে, তারাই শ্রবণ সংক্রান্ত ক্ষতির সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে, গবেষকরা নিরাপদ শ্রবণ অভ্যাস গড়ে তোলা ‘জরুরি প্রয়োজন’ বলে সতর্ক করেছেন।

গবেষণাটিতে প্রতি সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ৮০ ডেসিবল মাত্রার শব্দকে ‘অনিরাপদ শ্রবণ অভ্যাস’ বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এতে গবেষকরা দুই ধরনের ঝুঁকির ওপর আলোকপাত করেন। প্রথমত, মুঠোফোন বা মিউজিক প্লেয়ারে হেডফোনের সাহায্যে গান শোনা এবং দ্বিতীয়ত, উচ্চ শব্দযুক্ত পরিবেশ বা স্থান যেমন- কোনো বার বা ক্লাবে উপস্থিত থাকা।

আরও পড়তে পারেন-

গবেষক লরেন ডিলার্ড বলেন, ‘উচ্চশব্দের ফলে কানের সেন্সরি কোষ এবং অন্যান্য গঠন বিবশ হয়ে একসময় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়াও সাময়িক শ্রবণশক্তি হারানোসহ টিনিটাস (কানে ঝিঁঝিঁ পোকার বা স্টিমারের মতো আওয়াজ শোনা) এর মতো সমস্যা হতে পারে।

আর কোনো ব্যক্তি নিয়মিত বা অনেক সময় ধরে উচ্চস্বরের সংস্পর্শে থাকলে টিনিটাসের পাশাপাশি স্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি হারাতে পারেন, যা নিরাময় করা সম্ভব নাও হতে পারে।

তবে প্রত্যেক গবেষণার মতো এ গবেষণাটিতেও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন, গবেষকরা নিম্ন আয়ের দেশে এই জরিপ পরিচালনা করেননি। সুতরাং, তারা যেসব দেশের ওপর নিরীক্ষা করে ফলাফল দিয়েছেন- তা অন্য দেশের ক্ষেত্রে ঠিক নাও হতে পারে।

কিন্তু, এটির ফলাফলের সাথে বিজ্ঞানের আরও অন্যান্য গবেষণার ফলাফলের খুব একটা পার্থক্য নেই। অটোলজি কমিশন অব দ্য স্প্যানিশ সোসাইটি অব অটোল্যারিঙ্গোলোজি-এর প্রেসিডেন্ট লুইস ল্যাসালেটা মনে করেন, উচ্চশব্দের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে এই গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ।

ডব্লিউএইচও’র হিসাবমতে, ১২ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ শতাংশ ব্যক্তিগত ডিভাইসে উচ্চশব্দে গান শোনেন।

শ্রবণশক্তি হারানো এবং টিনিটাস

চারপাশ নিস্তব্ধ থাকার পরও কানে অস্বাভাবিক কোনো শব্দ যেমন ঝিঁঝিঁ পোকা বা স্টিমার কিংবা ঢাক পেটানোর শব্দ শোনার সমস্যাকে টিনিটাস বলা হয়।

উচ্চশব্দে অডিও শোনার ফলে সাময়িকভাবে শ্রবণশক্তি হারানো বা তীব্র মাত্রায় টিনিটাস হতে পারে। অল্প বয়স থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে উচ্চশব্দের সংস্পর্শে আসলে– বার্ধক্যে শ্রবণশক্তিতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেন, শিশুদের ক্ষেত্রে শ্রবণ ক্ষমতা হারানো স্কুলের পারফর্ম্যান্সে ক্ষতি ও মনোযোগ নষ্ট হতে পারে। আর বয়স্কদের ক্ষেত্রে- মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি থেকে শুরু করে চিন্তার বৈকল্যের মতো গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।

তবে গবেষকরা এটিও স্বীকার করেন যে, কিশোরকালে অধিক সময় ধরে উচ্চশব্দে অডিও শোনার সাথে স্থায়ী শ্রবণশক্তি হ্রাসের সম্পৃক্ততার উদাহরণ কম। তবে এতে শ্রবণের স্নায়বিক সিস্টেমের ক্ষতি হওয়ার প্রমাণ মিলেছে নানা গবেষণায়।

লরেন বলেন, উচ্চশব্দের কিছু শোনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে সাময়িক ক্ষতি, টিনিটাস এবং শোনার ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটতে পারে। তবে তা কিছুদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।’

সাময়িক হোক কিংবা স্থায়ী; উচ্চশব্দে যে ক্ষতি হয়- তা নিশ্চিত। ল্যাসেলেটা বলেন, ‘কেবল অস্বস্তিকর টিনিটাস এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি নয়, ইস্কেমিক হৃদরোগ হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। টিনিটাস সাধারণ একটি সমস্যা হতে পারে, কিন্তু যাদের এটি একাধিক বার বা প্রতিনিয়ত হতে থাকে– এর প্রভাবে তাদের মানসিক সাহায্য (চিকিৎসা) জরুরি হয়ে পড়ে।’

শ্রবণ সমস্যাকে গুরুত্ব না দেওয়া

অনেকে শ্রবণ সংক্রান্ত সমস্যাগুলোকে তুচ্ছ করে এড়িয়ে চলেন। এতে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায় বলে চিকিৎসকরা নিরাপদ শ্রবণ অভ্যাস গড়তে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির সুপারিশ করেন।

উচ্চশব্দ সংক্রান্ত নানা নীতিমালা প্রণয়নের ওপর বিশেষ জোরদার করেন গবেষকরা। উদাহরণস্বরূপ, সুইজারল্যান্ডে বিনোদনমূলক স্থানে শব্দমাত্রা নিয়ন্ত্রণের বিধিমালা রয়েছে। এ নিয়ম অনুসারে, প্রতি ঘণ্টায় শব্দের মাত্রা গড়ে ১০০ ডেসিবলের মাঝে রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে বিনামূল্যে ইয়ারপ্লাগ (শব্দের তীব্রতা বাড়লে, শ্রবণশক্তির নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত) বিতরণ করতে হবে।

ক্ষতি এড়িয়ে যেতে চাইলে, দৈনন্দিন জীবনে হেডফোনে গান বা যেকোনো অডিও শোনার অভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। ৬০ শতাংশ ভলিউমের বেশি উচ্চশব্দ এক ঘণ্টার বেশি শোনা উচিত নয় বলে সুপারিশ করেন ল্যাসেলেটা। হেডফোনে ভলিউম কমিয়ে গান শুনতে এবং কোনো কনসার্টের উচ্চশব্দ থেকে নিজের কান রক্ষায় জোর দেন তিনি।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।