Home ইসলাম ইবাদত কবুল না হওয়ার ৭ কারণ

ইবাদত কবুল না হওয়ার ৭ কারণ

মুফতি ইবরাহিম সুলতান   

মানব সৃষ্টির প্রধান উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত করা। ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ঈমানের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধিত হয়। তবে শর্ত হচ্ছে, এই ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুলযোগ্য হতে হবে। কিন্তু মহামূল্যবান এই ইবাদত অনেক সময় শয়তানের ধোঁকা বা প্ররোচনায় অর্থহীন ও নষ্ট হয়ে যায়।

এখানে ইবাদত কবুলের অন্তরায় প্রসঙ্গে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো।

ঈমান ছাড়া আমল ও ভালো কাজ : ইবাদত গ্রহণের প্রথম শর্ত হলো ইবাদতকারীর মুসলিম হওয়া। কারণ ইসলাম গ্রহণ ছাড়া যতই ভালো কাজ বা ইবাদত করা হোক না কেন আল্লাহর কাছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম অন্বেষণ করে, তার কাছ থেকে তা কখনোই কবুল করা হবে না এবং ওই ব্যক্তি আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ৮৫)

হাদিস শরিফে এসেছে, আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল ইবনু জুদআন জাহেলি যুগে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখত এবং দরিদ্রদের আহার দিত। পরকালে এসব কর্ম তার উপকারে আসবে কি? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো উপকারে আসবে না। সে তো কোনো দিন এ কথা বলেনি যে, ‘হে আমার রব! কিয়ামতের দিন আমার অপরাধ ক্ষমা করে দিও। ’ অর্থাৎ সে আল্লাহর অনুগত হয়নি। তাই তার আমল কোনো কাজে আসবে না। (মুসলিম, হাদিস : ২১৪)

আরও পড়তে পারেন-

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, কাফের যদি দুনিয়ায় কোনো সৎ আমল করে তবে এর প্রতিদানস্বরূপ দুনিয়াতেই তাকে জীবনোপকরণ প্রদান করা হয়। আর মুমিনদের নেকি আল্লাহ আখিরাতের জন্য জমা করে রেখে দেন এবং আনুগত্যের প্রতিফলস্বরূপ আল্লাহ তাদেরকে পৃথিবীতেও জীবিকা দান করেন। (মুসলিম, হাদিস : ২৮০৮)

শিরক পর্যায়ের কাজ : আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য ইবাদত করা, তাঁর সঙ্গে  কোনো কিছু শরিক করা কিংবা আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য কোনো কিছু দান ও মানত করা বা জবাই করা ইত্যাদি শিরক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের (নবীদের) প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়েছে যে, যদি তুমি শিরক করো, তাহলে অবশ্যই তোমার সমস্ত আমল নষ্ট হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। ’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ৬৫)

অন্য আয়াতে বলেন, ‘তবে যদি তারা শিরক করত, তাহলে তাদের সমস্ত আমল নিষ্ফল হয়ে যেত। ’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৮৮)

বিদআতি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়া : আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ইসলামে নতুন কিছু প্রবর্তন করা হারাম, যদিও তা ভালো উদ্দেশ্য হোক না কেন। যে ব্যক্তি এর মাধ্যমে আমল করবে, তা আল্লাহর কাছে কবুল হবে না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলো, আমরা কি তোমাদেরকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে জানিয়ে দেব? তারা হলো সেই সব লোক যাদের সব প্রচেষ্টা পার্থিব জীবনে বিফলে গেছে। অথচ তারা ভেবেছে যে, তারা সৎকর্ম করছে। ’ (সুরা : কাহফ আয়াত : ১০৩-১০৪)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বিনে (ইসলাম ধর্মে) কোনো নতুন কিছু সৃষ্টি করে, যা (যার ভিত্তি) তার মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৬৯৭)

ধর্ম ত্যাগ করা : মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যে প্রথমে মুসলমান ছিল, এরপর ইসলামের কোনো অকাট্য বিষয় অস্বীকার বা অবমাননা করে কাফের হয়ে গেছে। এ ধরনের ব্যক্তির পূর্বে কৃত সকল আমল ও ইবাদত বাতিল হয়ে যায়, যখন সে ধর্মত্যাগী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ  বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বধর্ম ত্যাগ করবে, অতঃপর কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে, তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে। তারা জাহান্নামের অধিবাসী হবে এবং সেখানেই চিরকাল থাকবে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২১৭)

রিয়া বা প্রদর্শনপ্রিয় আমল : লোক-দেখানো বা প্রদর্শনপ্রিয় ইবাদতকে রিয়া বলা হয়। এটি ইবাদতকে ধ্বংস ও মূল্যহীন করে দেয়। মুসলিম শরিফে বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) কিয়ামতের দিন লোক-দেখানো আমলকারীদের বিচারের একটি চিত্র তুলে ধরেছেন, যাতে একজন শহীদ (আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী), একজন কোরআনের শিক্ষক ও একজন দানবীরের আলোচনা এসেছে। যারা খ্যাতি ও সুনামের মোহে জিহাদ, কোরআন শিক্ষা ও দান করত। তারা তাদের আমলের প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হয়। আল্লাহ তাদের বলেন, ‘তোমরা যা চেয়েছ পৃথিবীতে তা পেয়েছ। সুতরাং আজ আমার কাছে তোমাদের কোনো প্রাপ্য নেই। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৫২৭)

অশুদ্ধ নিয়তের আমল : ইসলামী পরিভাষায় নিয়ত সাধারণত ভালো কাজের ইচ্ছাগুলোকেই বোঝায়। ইমাম বায়দাবি (রহ.) বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর বিধান পালনার্থে কোনো কাজের ইচ্ছা করাকে নিয়ত বলে। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া কেউ যদি কোনো কাজ বা ইবাদত করে তা কবুল হয় না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আখিরাতের ফসল কামনা করে আমরা তার জন্য তার ফসল বাড়িয়ে দিই। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে, আমরা তাকে তা থেকে কিছু দিয়ে থাকি। কিন্তু আখিরাতে তার জন্য কোনো অংশ থাকবে না। ’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ২০)

উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এই উম্মতকে গৌরব, উচ্চ মর্যাদা, বিজয় ও পৃথিবীতে শক্তিশালী হওয়ার সুসংবাদ দাও। অতঃপর তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আখিরাতের আমল করবে দুনিয়ার জন্য, আখিরাতে তার কোনো অংশ থাকবে না। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১২৫৮)

নির্জনে গুনাহ করা : এ সম্পর্কে সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, আমি আমার উম্মতের কতক দল সম্পর্কে অবশ্যই জানি, যারা কিয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমলসহ উপস্থিত হবে। মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের নিকট বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বললেন,  তারা তোমাদেরই ভ্রাতৃগোষ্ঠী এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতোই ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হবে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৪৫)

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।