Home ইসলাম মাতৃভূমির প্রতি মুসলমানের ভালোবাসা

মাতৃভূমির প্রতি মুসলমানের ভালোবাসা

সম্মানিত সুধী! আমরা এখন সম্মেলনের শেষ পর্বে আছি। শিগগিরই আপনারা নিজ অঞ্চল ও প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাবেন। আমি চাই, সম্মেলন শেষে আপনারা একটি বার্তা নিয়ে ফেরেন; এই সম্মেলনে আল্লাহর সঙ্গে যে অঙ্গীকার করেছেন তার ওপর অটল থাকবেন এবং নিজেদের প্রতি যে প্রতিজ্ঞা করেছেন, যার সঙ্গে আপনাদের জীবনের প্রশ্ন জড়িত তা আঁকড়ে ধরবেন। নিশ্চয়ই আপনাদের ভবিষ্যৎ এই অঙ্গীকারের ওপরই নির্ভর করছে।

এই অঙ্গীকারের দুটি অংশ : এক. আপনারা বিশ্বাস করবেন এই দেশ, এই ভারতই আমাদের দেশ, আমাদের মাতৃভূমি। দেশমাতৃকার সন্তানের মতোই আমরা এখানে বসবাস করব। এই দেশের ওপর আমাদের অধিকার আছে। আমাদের অধিকার দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী ও অগ্রসর জাতিগুলো থেকে কোনো অংশে কম নয়; এমনকি ভারতের কোনো মহান ব্যক্তিত্ব থেকেও কম নয়। এই সুবিশাল সুন্দর ভূমির প্রতিটি ইঞ্চি আমাদের বিরল অবদান ও অগ্রযাত্রার কথা স্বীকার করে এবং মুসলিম শাসনের সোনালি যুগের সাক্ষ্য বহন করে। নিশ্চয়ই এ দেশের জন্য আমাদের অবদান, এই দেশের উন্নতি, অগ্রযাত্রা ও সৌন্দর্যবর্ধনে আমাদের অংশগ্রহণ, এই দেশকে শাসন করেছে এমন সব জাতি-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের চেয়ে বেশি।

আমাদের শাসনামলে এই দেশের নবজন্ম হয়েছিল। আমাদের হাত ধরেই ভারত সভ্যতা-সংস্কৃতির সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। কেউ যদি জানতে চাই মুসলিমরা এই দেশে সভ্যতা-সংস্কৃতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে কী ফল বহন করে নিয়েছে এবং তার সৌন্দর্য-সামর্থ্যে কী যোগ করেছে সে যেন মুসলিম আগমনের পূর্বকার ভারতকে দেখে নেয়। তারপর সে যেন মুসলিম আগনের পরের ভারত, মুসলিম শাসনামলে ভারতের সমৃদ্ধি এবং মুসলিম শাসনাবসানের পর ভারতের বর্তমান অবস্থার মধ্যে তুলনা করে।

এই দেশ আমাদেরই দেশ। এটা আমাদের সেই নীড়, যাতে আমরা আশ্রয় নিই এবং তা থেকে উড়ে যাই। এই দেশের ওপর আমাদের অধিকার তেমন, পাখির যেমন অধিকার থাকে তার বোনা বাসার ওপর, তার সেই বাগানের ওপর, যেখানে সে জন্মগ্রহণ করে, যেখানে সে জীবনযাপন করে, সে তার ঝরনাধারা ও গাছ-গাছালি উপভোগ করে, তার ফুল-ফল থেকে খুশিতে গান গায়, সে যে ডালে খুশি বসে এবং মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে উড়ে বেড়ায়, ভয়হীন ও ভালোবাসা নিয়ে।

আমাদের দেশপ্রেম নিখাঁদ। আমাদের অধিকার অনস্বীকার্য। এটাই আপনাদের বিশ্বাস করা আবশ্যক এবং তা আস্থা ও স্পষ্টতার জায়গা থেকে হওয়া আবশ্যক। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ ও সংশয় যেন আপনাদের কষ্ট না দেয়, কোনো ভয় যেন চেপে না বসে। আমরা ভারতের সন্তান। আমরা সেখানে সন্তানের মতোই, দেশের নাগরিকদের মতোই বসবাস করব। আমরা আনন্দ ও আগ্রহের সঙ্গে, পূর্ণ উৎসাহ ও উদ্যমের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক অবস্থানের উন্নতি, জীবনযাত্রার মান্নোয়ন, দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় অবদান রাখব। আমরা দেশের সম্মান, মর্যাদা, সংবিধানের প্রাণসত্তার রক্ষক হব। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে যাব, যদিও সমগ্র ভারত ও ভারতবাসী তা পালন করা থেকে পিছুপা হয়। আমরা নেককার মানুষের সন্তান, অভিজাত বংশের অধিকারী এবং অঙ্গীকার পূরণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই অঙ্গীকারই আমরা নিজেদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছি এবং এই সম্মেলনে তা পুনর্ব্যক্ত করছি।

অঙ্গীকারের দ্বিতীয় ভাগ হলো, আমরা অঙ্গীকার করব যে আমাদের সব ধর্মীয় বৈশিষ্ট্য, ইসলামী সভ্যতা, ধর্মীয় নিদর্শন ও প্রতীক, সামাজিক চরিত্র ও সুষ্ঠু ব্যক্তিত্ববোধের সঙ্গে এই দেশে বাস করব। যদি না আমরা আমাদের বিশ্বাস ও সভ্যতার উত্তরাধিকার আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ও সন্তানদের কাছে পৌঁছে দিতে না পারি, তাদের জন্য অনুরূপ অবদান না রাখি যেমনটি রেখেছেন আমাদের পূর্বসূরিরা, তবে আমরা তাদের যোগ্য উত্তরসূরি হতে পারব না। আমরা যেন অঙ্গীকার করি, স্বাধীন ও আত্মসম্মানবোধের অধিকারী মানুষের মতো জীবনযাপনের, মনুষ্যত্বের অধিকারী মানুষের মতো জীবন ধারনের নিশ্চয়ই আমরা এ দেশেরই সন্তান। আমরা এই দেশ ও এই সভ্যতার নির্মাতা।

আরও পড়তে পারেন-

এ দেশের প্রতি আমাদের অবদান ও অনুগ্রহ আছে। পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই আমাদের এই আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার, এই সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে। কোনো সম্প্রদায়ের অধিকার নেই যে অপর সম্প্রদায়কে দাস বানিয়ে রাখবে। কোনো সভ্যতার অধিকার নেই যে অপর সভ্যতাকে হত্যা করবে। কোনো ভাষার অধিকার নেই যে অন্য ভাষাকে নিশ্চিহ্ন করবে।

প্রিয় সুধী, বহু ক্ষেত্রে এমন হয় যে মানুষ যেসব দুর্বলতা ও নিজের ব্যাপারে হীনম্মন্যতার শিকার হয়, সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে যা কিছুকে সংকট বলে কল্পনা-জল্পনা করে, একসময় বাস্তব বলে বিশ্বাস করতে থাকে; ফলে সে ভয় পেয়ে পিছুপা হয়, অথচ বাস্তবে তার কোনো ভিত্তি বা অস্তিত্ব নেই। সব সংশয় ঝেড়ে ফেলুন এবং অঙ্গীকার করুন আপনারা ভারতে স্বাধীনভাবে আত্মমর্যাদার সঙ্গে বাস করবেন, মুসলমানের মতো ঈমান-আকিদা, সভ্যতা-সংস্কৃতির সঙ্গে বসবাস করবেন, আপনাদের সন্তানদের মুসলিমসুলভ বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিত্বের সঙ্গে গড়ে তুলবেন। আমাদের সৌভাগ্য, ভারতের সংবিধান এসব অধিকার সংরক্ষণ করে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সব নাগরিক, সম্প্রদায় ও ধর্মের জন্য অধিকার ও সমতা রক্ষার দায় স্বীকার করে।

অঙ্গীকার করুন আপনার সন্তানদের ইসলামী শিক্ষা ও দীক্ষার প্রতি মনোযোগী হবেন। কেননা রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম নেই। রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব নয় সব সম্প্রদায়ের ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করা। সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা আপনাদের প্রধান দায়িত্ব জ্ঞান করবেন। এটা সন্তানদের জন্য খাদ্য-পানীয়, বস্ত্র, জাগতিক শিক্ষার চেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। কেননা আপনাদের ওপর আপনাদের দ্বিন সংরক্ষণের দায় আছে এবং এ ব্যাপারে আপনাদের দুনিয়া ও আখিরাতে দায়িত্বশীল করা হয়েছে।

প্রিয় ভাইয়েরা, নিশ্চয়ই রাতের এই শেষভাগে যখন আল্লাহর অনুগ্রহ বর্ষিত হয় এবং দোয়া কবুল করা হয়, তখন আপনাদের অন্তরগুলোকে একতাবদ্ধ করুন, আমরা একনিষ্ঠভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হব যে আমরা এই দেশে ইসলামের সঙ্গে, আমাদের পূর্বপুরুষদের ইসলামী রীতি-নীতির সঙ্গে টিকে থাকব। এই পথে আমাদের ধনী-দরিদ্র্য সবাই অবদান রাখব, আমরা সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় এই মিশনকে ধারণ করব। আমরা পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এই দুই শ্রেণির যেকোনো এক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হব। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ শাহাদাতবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় আছে। তারা তাদের অঙ্গীকারে কোনো পরিবর্তন করেনি। ’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ২৩)

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।