Home ইসলাম দেশের সেবায় মুমিনের ১০ করণীয়

দেশের সেবায় মুমিনের ১০ করণীয়

।। মো. আবদুল মজিদ মোল্লা ।।

প্রতিটি মুমিনই দায়িত্বশীল। সে দায়িত্বশীল আচরণ করে তার নিজের প্রতি, তার পরিবার ও সমাজের প্রতি এবং তার প্রিয় মাতৃভূমির প্রতি। সবার দায়িত্বশীল আচরণেই সমাজ ও দেশ সুন্দর হয়। দেশের ভবিষ্যৎ আলোকিত হয়।

নিম্নে দেশের প্রতি মুমিনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে কয়েকটি বিষয় তুলে ধরা হলো।
১. দেশকে ভালোবাসা : মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা মুমিনের বৈশিষ্ট্য পৃথিবীর সব নবী-রাসুল মাতৃভূমিকে ভালোবাসতেন। সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন প্রিয়নবী (সা.)। এ জন্য মহান আল্লাহ তাঁকে মাতৃভূমি মক্কায় ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যিনি আপনার জন্য কোরআনকে বিধান করেছেন তিনি আপনাকে অবশ্যই জন্মভূমিতে ফিরিয়ে আনবেন। ’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ৮৫)

২. দেশের কল্যাণ কামনা করা : মুমিন সব সময় দেশের কল্যাণ চায়। সে কখনো দেশের অকল্যাণ চায় না। কোরআনে মুমিনদের দোয়া শেখানো হয়েছে, ‘স্মরণ কোরো, যখন ইবরাহিম বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! এটাকে নিরাপদ শহর করুন। আর এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ পরকালে ঈমান রাখে তাদের ফলমূল দ্বারা জীবিকা প্রদান করুন। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৬)

৩. শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা : মুমিনের দায়িত্ব সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা। শান্তি-শৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কাজ না করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তোমরা জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি কোরো না। ’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৫৬)

৪. নিরাপত্তা নিশ্চিত করা : দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রধানত রাষ্ট্রের। তবে যেহেতু মানুষই অপরাধ কর্মের অনুঘটক, তাই ইসলাম মানুষকে অন্যের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নষ্ট হয়—এমন সব কিছু থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ কোরো না। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের জীবন, সম্পদ ও সম্ভ্রম পরস্পরের জন্য নিষিদ্ধ। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১০৫)

৫. মানবিক সমাজ গঠন করা : ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কে যদিও এক মুমিন অপর মুমিনকে প্রাধান্য দেবে; কিন্তু মুসলমান ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সবার জন্য মানবিক মর্যাদা ও সাম্য নিশ্চিত করবে। কেননা সব মানুষই আদম (আ.)-এর সন্তান এবং আল্লাহ সবাইকে সম্মানিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি; স্থলে ও সমুদ্রে তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি; তাদের উত্তম জীবিকা দান করেছি এবং যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের ওপর তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। ’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭০)

৬. দেশের উন্নয়নে কাজ করা : দেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হলো দেশ ও জাতির উন্নয়নে সচেষ্ট হওয়া। কেননা জাতির উন্নয়নের চাবিকাঠি আল্লাহ তার হাতেই দিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থার পরিবর্তন করে না, যতক্ষণ না তারা নিজ অবস্থা নিজে পরিবর্তন করে। ’ (সুরা রাদ, আয়াত : ১১)

আরও পড়তে পারেন-

৭. পরিবেশ রক্ষা করা : আধুনিক পৃথিবীতে পরিবেশ গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্ট। বিজ্ঞানীদের মতে, এর ওপর নির্ভর করছে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ। ইসলাম প্রতিটি নাগরিককে পরিবেশ রক্ষায় সচেতন হতে বলে। এ জন্য ইসলাম অনর্থক বৃক্ষ নিধন, পশু-পাখি হত্যা, জলাধার নষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। বিপরীতে পরিবেশের উন্নয়ন হয় এমন কাজে উৎসাহিত করেছে। যেমন বৃক্ষ রোপণ। নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তাকে ওই বৃক্ষের ফলের সমান প্রতিদান দেবেন। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৩৫৬৭)

৮. জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা : জাতীয় সম্পদ রক্ষায় প্রতিটি মুমিন সচেষ্ট হবে। যেমন ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) রাষ্ট্রীয় কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অর্থে জ্বালানো প্রদীপ নিভিয়ে দিতেন। বলতেন, ‘আমি মুসলমানের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম, তাই তাদের সম্পদ দিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়েছিলাম। এখন তুমি আমার অবস্থা জানতে চেয়েছ, তাই আমি আমার ব্যক্তিগত অর্থে প্রদীপ জ্বালালাম। ’ (আল ইকতিসাদুল ইসলামী, ২৫৬)

৯. ঐক্যবদ্ধ থাকা : সুনাগরিক হিসেবে মুসলমানের দায়িত্ব হলো আল্লাহর নিদের্শনার ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থরক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকা। কেননা অনৈক্য জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধোরো এবং পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হইয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কোরো, তোমরা ছিলে পরস্পর শত্রু এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা তো অগ্নিকুণ্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০৩)

১০. স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা : মুমিন দেশকে ভালোবাসে। তাই দেশের স্বাধীনতা-সার্ভভৌমত্ব রক্ষায় সে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। আল্লাহর ভয়ে যে চোখ কান্না করে এবং আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ (নিরাপত্তার জন্য) পাহারা দিয়ে নিদ্রাহীন রাত পার করে। ’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৬৩৯)

আল্লাহ সবাইকে সত্যিকার দেশপ্রেমিক হিসেবে কবুল করুন। আমিন

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।