।। মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী ।।
আব্বাসীয় খলীফা হারুনুর রশীদ এর শাসন আমলে বাহলুল নামে এক পাগল ছিলো, যে অধিকাংশ সময় কবরস্থানে কাটাতেন। কবরস্থানে থাকা অবস্থায় একদিন বাদশাহ হারুনুর রশীদ ঘোড় সওয়ার হয়ে তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন।
তখন বাহলুল পাগল কবরস্থান থেকে জোরে জোরে ওহে হারুন, ওহে পাগল বলে ডাকতে ডাকতে বাদশাহ হারুনের কাছে এসে বললেন, “কখন তোমার বুঝ হবে?”
বাদশাহ গাছের নিচে এসে বাহলুলকে বললেন, “আমি পাগল, নাকি তুমি পাগল- যে সারা দিন কবরস্থানে বসে থাকে?”
বাহলুল বললেন, ‘ওহে হারুন, আমিই তো বুদ্ধিমান’।
বাদশাহ অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে ঘোড়া থেকে নেমে বললেন, ‘কীভাবে, কখন থেকে তোমার বুঝ আসা শুরু হয়েছে, শুনি?’
বাহলুল রাজপ্রাসাদের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বললেন- ‘আমি জানি এই রঙিন জৌলুসময় দালান ক্ষণিকের আবাসস্থল এবং এটি (কবরস্থান) স্থায়ী নিবাস। আমি এই কবরস্থানকে আবাদ করা শুরু করেছি। অথচ তুমি তোমর ক্ষণস্থায়ী রাজপ্রাসাদকে আবাদ করে এই স্থায়ীনিবাসকে (কবর) অনাবাদ রেখেছো। তাই তো তুমি আবাদি রাজপ্রসাদ থেকে এই অনাবাদি কবরস্থানে আসাকে অপছন্দ করো। যদিও তুমি ভালভাবেই জানো এটাই তোমার চূড়ান্ত শেষ গন্তব্য, এখানের বাসিন্দা তোমাকে হতেই হবে। এবার বলো, আমাদের মধ্যে কে পাগল? এই কবরস্থানে এসে আমি ডাক দিয়ে বলেছি, ওহে সম্মানিত ও লাঞ্ছিতরা, আজ কোথায়? রাজত্বের কারণে দাম্ভিক ব্যক্তিরা আজ কোথায়? কোথায় আজ অহংকারি ও প্রশংসিত ব্যক্তিগণ? তোমার এই কাজগুলো কি পাগলামো নয়, হারুন?
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
বাহলুলের মুখে এ কথা শোনার পর বাদশাহর অন্তর কেঁপে উঠলো- তিনি কেঁদে ফেললেন। তাঁর দাড়ি ভিজে গেলো। তিনি বললেন, ‘খোদার কসম ! তুমিই সত্যবাদী। আমাকে আরও কিছু উপদেশ দাও।
বাহলুল বললেন, উপদেশের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট। আল্লাহর কিতাব কুরআনকে যথার্থভাবে আঁকড়ে ধরো। এই কুরআনে যেমন রয়েছে সংবাদ, তেমন রয়েছে শিক্ষা।
বাদশা বললেন, তোমার কোনও কিছুর অভাব থাকলে আমাকে বলো, আমি তা পূরণ করে দেবো।
বাহলুল বললেন, ‘হ্যাঁ, আমার তিনটি অভাব আছে। এগুলো যদি তুমি পুরণ করতে পারো, তবে তুমি ধন্যবাদ পাওয়ার উপযুক্ত হবে।
বাদশাহ বললেন, ‘তুমি নিঃসঙ্ক চাইতে পারো।
বাহলুল বললেন, তাহলে আমার বয়স বাড়িয়ে দাও।
বাদশাহ মাথা নীচু করে বললেন, ‘আমার পক্ষে এটা সম্ভব নয়।’
বাহলুল বললেন, ‘আমাকে মৃত্যুর ফেরেশতা আজরাঈল থেকে রক্ষা করতে হবে’।
বাদশাহ: ‘আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’
বাহলুল: ‘আমাকে জান্নাতে স্থান করে দিতে হবে এবং জাহান্নাম থেকে আমাকে দূরে রাখতে হবে।’
বাদশাহ: ‘আমার পক্ষে এটাও সম্ভব নয়।’
বাহলুল বললেন, ‘তবে জেনে রাখ, তুমি বাদশাহ না, বরং তুমি অন্য কারও অধীনস্থ। অতএব, তোমার কাছে আমার কোনও চাওয়া বা প্রার্থনা নেই।’
বাহলুলের কথায় খলীফা হারুনুর রশীদ অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ