।। মুফতি ইসহাক ওমর কাসেমী ।।
বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলায় প্রিয় দলের গোল উদযাপন করতে গিয়ে খাদে পড়ে প্রাণ গেল বাইশ বছর বয়সি এক যুবকের। ঘটনাটা ঘটে যশোর জেলায়। এ ছাড়া আর্জেন্টিনার জয়ে উল্লাস করতে হার্ট এট্যাক করে মৃত্যুবরণ করে পঁচিশ বছরের আরেক যুবক। কাতার বিশ্বকাপের পুরো আসরজুড়ে বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে পতাকা টাঙ্গানো, আনন্দ-উল্লাস এবং খেলা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করতে গিয়ে প্রায় ১৫ তরুণ-যুবক প্রাণ দিয়েছে এবং আহত হয়েছে অর্ধশতের কাছাকাছি। এ তথ্য বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদমাধ্যমের। এছাড়া বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে বিগত ২৮ দিনে কত কোটি কোটি মানুষের লক্ষ-লক্ষ মিনিট সময়ের অপচয়, হারাম ও অশ্লীলতায় লিপ্ত হয়েছে, তার হিসেব করাও অসম্ভব!
আমাদের তরুণ-যুব শক্তির এমন নৈতিক অধঃপতন, সামাজিক পঁচন দেখে অবাক হওয়ার পাশাপাশি মাথায় হাতও দিতে হয়- এটাই মুসলিম যুবকের পরিচয়? এটাই কি তাদের নৈতিকতা? এটাই কি আমাদের দায়িত্ব ছিল? যে বয়সে আমাদের যুব সমাজ প্রিয় দলের জয়ের নিষ্ফল উল্লাস করতে গিয়ে তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ‘প্রাণ’ বিসর্জন দিচ্ছে। আমরা যদি অতীত ইতিহাস দেখি, ঠিক সেই বয়সী যুবক মুহাম্মদ বিন কাসিম (রহ.) মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে সিন্ধু বিজয় করেছিল। নিষ্ঠুর রাজা দাহিরের দাম্ভিকতা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল। সেই বয়সেই মুসলিম সেনাপতি তারেক বিন যিয়াদ রহ. স্পেনের রাজা রডারিকের সিংহাসন তছনছ করে দিয়েছিল।
খলিফায়ে রাশেদ উমর ইবনু আব্দিল আযীয (রহ.) যখন শাসন করে মৃত্যু বরণ করেন, তখন তিনি ছিলেন চল্লিশের ঘরে পৌঁছা এক যুবক। এ ছাড়া ইসলামি ইতিহাসে চোখ বুলালে আমরা দেখতে পাবো, ইসলামী জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে যাঁরা অমর কীর্তি গড়ে তুলেছেন, কুরআন, হাদিস, ফিকহ, চিকিৎসা, সাহিত্য ইত্যাদি বিদ্যায় যারা বিস্ময়কর কর্ম সাধন করেছেন, তাঁদের বেশিরভাগই যুবক বয়সে এসব কাজ করেছেন। যে বয়সে বর্তমান যুব-পৌঢ় সমাজ খেলার পেছনে নিজ হায়াতকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
যে কোনো জাতি, যে কোনো সাম্রাজ্যের জন্য যুব সমাজ অনেক বড় একটি শক্তি। তাইতো, কোনো জাতির উত্থানের ইতিহাস যদি আমরা দেখি তার পেছনে থাকে যুবকদের সাহস ও সংগ্রাম। আবার কোনো জাতির অধঃপতনের ইতিহাস যদি দেখি, দেখা যায় সেখানে যুব সমাজের নৈতিক পতনই তার দায়।
ইসলাম যুব সমাজকে খুবই গুরুত্ব দিয়েছে। তাদেরকে উৎসাহিত করেছে। নবীজি বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সেই যুবকের ব্যাপারে আশ্চর্যবোধ করেন, যে গুনাহের দিকে ধাবিত হয় না। (মুসনাদে আহমদ, হাদীস- ১৭৩৭১)।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
আল্লাহ তাআলা যুবকদেরকে এমন শক্তি এবং সাহস দিয়েছেন, সে যাচ্ছে তাই করতে পারে, যে কোনো পাপ কাজে লিপ্ত হতে পারে। যা সচরাচর কোনো বৃদ্ধ কিংবা শিশুরা পারে না। কিন্তু এত কিছুর পরেও যখন যুবক নিজের যৌবনকে নিয়ন্ত্রণ করে, আল্লাহকে ভয় করে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে, তখন তার উপর অবশ্যই আল্লাহ আশ্চর্যবোধ করবেন, খুশি হবেন। অপর এক হাদীসে এসেছে, নবীজি বলেন, কিয়ামতের ভয়ঙ্কর উত্তপ্ত দিনে, যখন কোথাও একটু ছায়াও থাকবে না, সে সময় যে সাত প্রকারের ব্যক্তি আল্লাহর রহমতের ছায়া পাবেন, তার মধ্যে ঐ যুবকও রয়েছে, যে তার যৌবন আল্লাহর ইবাদতে কাটিয়েছে। (সহীহ বুখারী, হাদিস-৬৬০)।
আর যৌবন এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে, নবীজি বলেন, তুমি তোমার যৌবনকে মূল্যায়ন করো, বার্ধক্য আসার পূর্বে। (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদীস-৫১০২)।
যৌবনই তো মানুষের জীবনের মূল সময়। কোনো এক কবি বলেন, যৌবনে তওবা করা এটা নবীগণের আদর্শ কেননা বৃদ্ধ বয়সে বাঘের বাচ্চাও পরহেজগার হয়ে যায়।
প্রিয় মুসলিম যুবক ভাই! তোমার এই দেহ, এই হাত, মুখ ও চোখ সব আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া আমানত। আল্লাহ তোমাকে এসব নেয়ামত দিয়েছেন, তাঁর পথে ব্যবহারের জন্য। তাঁর শোকরিয়া জ্ঞাপন করার জন্য। তোমার এই দুচোখ আল্লাহ দিয়েছেন জান্নাতে গিয়ে তাঁর দর্শন লাভের জন্য। তুমি কোথায় গিয়ে তোমার মূল্যবান সম্পদ জীবন ও যৌবন নষ্ট করছো? ফিরে এসো আল্লাহর পথে।
লেখক: শিক্ষক- জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম এবং সহকারী সম্পাদক- মাসিক মুঈনুল ইসলাম।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ