Home লাইফ স্টাইল সময়ের মূল্য ও গুরুত্ব

সময়ের মূল্য ও গুরুত্ব

।। তরিকুল ইসলাম মুক্তার ।।

সময়ের নামই তো জীবন, তাই তাকে অপচয় করো না।সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ জান্নাতের সুউচ্চ মাকামে পৌঁছাতে পারে। অপরদিকে এর অবহেলা করেই সে নিক্ষিপ্ত হয় জাহান্নামের অতল দেশে। পৃথিবীর সূচনাকাল থেকেই আল্লাহ তাআলা চন্দ্র – সূর্য, গ্রহ- নক্ষত্র সবকিছুকে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে পরিচালনা করে আসছেন। সূর্য প্রতিনিয়ত একটি নির্দিষ্ট সময়ে উদিত হয়,আবার একটি নির্দিষ্ট সময়ে অস্ত যায়। আল্লাহ তাআলা( সূরা শামস) এর মাঝে সকালের চাশতের সময়ের ও আসরের, দিবা রাত্রির কসম করেছেন। যা থেকে সময়ের গুরুত্ব খুব সহজেই অনুমান করা যায়।

এ ছাড়া শরিয়তের প্রতিটি হুকুম আহকামের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেও দেখতে পাই,ইসলাম প্রতিটি কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি বড় বড় আহকাম ছাড়াও অধিকাংশ বিষয়সমূহে সময়ের মালা গাথা।আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, নিশ্চয়ই নামায মুসলমানদের উপর সময়াবদ্ধ ফরজ। (সূরা নিসা)।

সময়ের মর্যাদা, জীবনের গুরুত্ব, তার অনুভূতি ও গঠনমূলক জীবন গড়ার প্রতি নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময়ে বিচিত্র ভঈিমায় ইঙ্গিত করেছেন। এক হাদীসে তিনি বলেন, কোন ব্যাক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হল অনর্থক বিষয় পরিত্যাগ করা।অপর একটি হাদীসে জীবনকে পূর্ণ সতর্কতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজে লাগানোর প্রতি আহবান জানিয়ে বিঘোষিত হয়েছে। পাঁচটি জিনিসের পূর্বে অপর পাঁচটি জিনিসকে গনীমত মনে করবে-

১. বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে ২.রোগাক্রান্ত হবার পূর্বেই সুস্থতাকে ৩.স্বাবলম্বিতাকে দারিদ্র্যের পূর্বে ৪.ব্যস্ততার পূর্বেই অবসরকে ৫. মৃত্যুর পূর্বে এই জীবনকে। সুতরাং জীবনকে সার্থক ও মূল্যবান করতে হলে সময়ের সদ্ব্যব্যবহার করতে হবে।কারণ আমরা যদি গভীরভাবে চিন্তা করি, তাহলে বুঝতে পারি যে,সময় তো হল জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে অনিশ্চিত সামান্য বিরতি।স্বর্ণ রৌপ্য একবার হাত ছাড়া হলে আবার ফিরে পাওয়া সম্ভব। এমনকি অনেক সময় পূর্বের তুলনায় অধিক পাওয়া যায়। কিন্তু যে মুহূর্তটি একবার অতিবাহিত হয়ে যায়,তা কি কোনো অবস্থায় ফিরে আসে? অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে চিন্তা করলে এটাই বুঝে আসে যে, সময় স্বর্ণ কিংবা হীরার চেয়েও দামী।

আরও পড়তে পারেন-

তাই তো আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই স্বরণীয় ও বরণীয় যারা তাঁরা সকলেই সময়ের মূল্য হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছেন।হযরত দাউদ তায়ী (রহ.) রুটির পরিবর্তে ছাতু খেতেন।এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রুটি চিবানো ও ছাতু খাওয়ার মধ্যে এ পরিমাণ সময়ের ব্যবধান,যাতে পঞ্চাশটি আয়াত তেলাওয়াত করা যায়।বিশিষ্ট নাহুবিদ খলীল রহ. বলতেন, আমার নিকট সর্বাপেক্ষা অসহ্যকর ঐ সময়টুকু, যে সময় আমি খাওয়া দাওয়া করি।

মুসলিম মনীষীদের মতো অমুসলিমদের মধ্যে যারা পৃথিবীর বুকে নিজেদের কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে গেছেন তারাও সময়ের সদ্ব্যবহার করতে জানতেন। বিদ্যাসাগর,রবীন্দ্রনাথ, আব্রাহাম লিঙ্কনের মতো যারা জগতজোড়া খ্যাতি কুড়িয়েছেন তাদের কেউ সময়ের প্রতি অবহেলা করেননি। বড় বড় হাক্কানী আলেমগণ যারা আমাদের মাঝে দৃশ্যমান আছে তারা সময় কে খুব গুরুত্ব দিয়ে আজকে তিনারা দেশের বিখ্যাত হয়েছেন।

বাস্তবতায় আমি খুব কাছে থেকেই আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী( রহ) কে জেনেছি এবং হযরত কাসেমী (রহ.)এর অনেক কাজ কর্ম আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল, তখন আমি জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসায় পড়াশোনা করি ২০১৭ সালের কথা বাৎসরিক পরিক্ষার খেয়ারে আমি জাগ্রত ছিলাম। রাত বারটার সময় হযরত নূর হুসাইন কাসেমী (রহ.) কে দেখেছি বাহির থেকে পোগ্রাম শেষ করে মাদ্রাসায় এসে কিতাব পড়তে বসে গেলেন। রাত যখন তিনটা হল তখন আমার মনের মাঝে কৌতুহল সৃষ্টি হল।

কাসেমী (রহ.) যে পড়তে বসলেন এক নজর দেখে আসি সাথে সাথে চলে গেলাম অফিস কক্ষে গিয়ে দেখি হুজুর তখনও বসে বসে কিতাব পড়তেছেন। তখন আমি দেখে অবাক হয়েগেছি সারাদিন বাহিরে কষ্ট করার পর রাতে এসে বিস্রাম না করে সারারাত কিতাবের মাঝে সময় দিলেন। আল্লাহ তাআলা উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন।

সুতরাং বুঝা গেল বড় হতে হলে সময়ের মূল্য দিতে হবে সময়ের অপব্যবহার করে বড় কোন কিছু হওয়া সম্ভব না। সময় মানব জীবনের মূল্যবান পুঁজি। সময়ের স্রোত কারও জন্য বসে থাকে না। সুতরাং সময়ের কাছ থেকে আমাদের পাওনা কাটায় কাটায় আদায় করে নিতে হবে। তাই আসুন আমরা আমাদের সময়ানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে তুলি।তাহলে আমাদের জীবনে আসবে অভাবনীয় সাফল্য। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমিন।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদ, মিরপুর, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।