Home শিক্ষা ও সাহিত্য সমাজবিজ্ঞানে যুক্ত হয়েছে ইসলাম ও বোরকা বিদ্বেষ

সমাজবিজ্ঞানে যুক্ত হয়েছে ইসলাম ও বোরকা বিদ্বেষ

শতকরা ৯০ ভাগের বেশি মুসলমানের এই দেশে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে আমাদের আত্মপরিচয়ের মূল ভিত্তি ইসলামকেই গায়েব করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আত্মপরিচয়ে বর্ণ গোত্র বা জাতিগত পরিচয় তুলে ধরার গুরুত্ব বোঝানো হলেও সেখানে কৌশলে ধর্মীয় পরিচয়কে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ বইয়ের প্রথম দিকেই (১ থেকে ২৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত) আত্মপরিচয় অধ্যায়ের প্রথম পৃষ্ঠার বর্ণনায় শ্রেণিশিক্ষক তার পাঠদান কৌশলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বছরের প্রথম দিনে প্রথম ক্লাসে বন্ধুদের সাথে পরিচয়ের খেলা নিয়ে আত্মপরিচয় বিষয়ে পাঠদান করতে গিয়ে ধর্মীয় পরিচয়ের দিকটি এড়িয়ে গেছেন। অর্থাৎ আমাদের আত্মপরিচয়ে ধর্মের বিষয়টিকে গুরুত্বহীন করা হয়েছে।

ষষ্ঠ শ্রেণীর এই পাঠ্যবইয়ের প্রথম অধ্যায়ে শ্রেণিশিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পরিচয় পর্বে যে কথোপকথন হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে আমাদের আত্মপরিচয়ে ধর্মের কোনো ভূমিকা নেই। শিক্ষার্থীদের এমন ভুল শিক্ষা ভবিষ্যতে তাদের বিপদের পথে পরিচালিত করবে। একই সাথে ধর্মকে গুরুত্বহীন করা এমন শিক্ষায় আমাদের আত্মপরিচয় ও স্বকীয়তা হারানোরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। অপর দিকে একই বইয়ে ৯০ পৃষ্ঠা থেকে শুরু হয়েছে গোত্রবদ্ধ সমাজ থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র শিরোনামে নতুন একটি অধ্যায়। এ অধ্যায়ের ৯৮ পৃষ্ঠায় হিন্দু শাসকদের (সেনদের) দখলদার উল্লেখ না করে বরং মুসলিম শাসকদের কর্তৃত্ববাদী দখলদার শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

একই পৃষ্ঠায় চণ্ডীদাসের শ্লোক উল্লেখ করে ধর্মকে উপেক্ষা করা হয়েছে। একই সাথে বাংলা বিজয়ী প্রথম মুসলিম শাসক ইখতিয়ার উদ্দিন বিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খলজিকে দখলদার ও উচ্চাভিলাষী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মুসলিম এই শাসককে বইটির ৯৮ পৃষ্ঠায় বিজয়ী অর্থে আখ্যায়িত না করে বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কয়েকটি বিহার ধ্বংসকারী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। অথচ অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র মজুমদার লিখিত বাংলাদেশের ইতিহাস বইয়ে ৮৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন ভুল করে বখতিয়ার খলজি মাত্র একটি বিহার বা কেল্লা আক্রমণ করেছিলেন। অর্থাৎ মুসলিম বাংলা বিজয়ী শাসক বখতিয়ার খলজিকে এই বইয়ে দখলদার ও ধ্বংসকারী হিসেবে চিত্রায়িত করার অপচেষ্টা হয়েছে। মুসলিম শাসন আমলে বাংলাদেশে শিল্প ও সংস্কৃতির ব্যাপক উন্নয়ন হলেও ষষ্ঠ শ্রেণীর এই বইয়ে তা কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

আরও পড়তে পারেন-

ইসলামবিদ্বেষী বিবর্তনবাদ শিক্ষার্থীদের শেখানোর জন্য পাঠ্যবইয়ে ঢুকানো হয়েছে মানুষের বিবর্তনবাদ। বইটির ১১৪ ও ১১৫ পৃষ্ঠায় সেখানে চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে বানর থেকে কালের বিবর্তনে মানুষের রূপান্তর হয়েছে। অর্থাৎ আগে সব মানুষই ছিল বানর। সেই বানর থেকেই আমরা মানুষে রূপান্তর হয়েছি। যদিও ডারউইনের এই তত্ত্বটি পুুরোটিই ইসলামবিরোধী তত্ত্ব। কৌশলে শিশুদের ডারউইনের এই ইসলামবিরোধী তত্ত্বটিই শেখানো হচ্ছে। অথচ ডারইউনের এই বিবর্তনবাদ তত্ত্বটি কেউ বিশ্বাস করলে তিনি আর মুসলমানই থাকবেন না। এটাই কুরআনের অকাট্ট্য দলিল দিয়ে প্রমাণিত। কাজেই পাঠ্যবইয়ে ইসলামবিদ্বেষী ঘৃণা ছড়ানোর জন্যই এমনটি করা হয়েছে বলে মনে করেন মুসলিম স্কলাররা।

এ দেশে ব্রিটিশবিরোধী তথা ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য মুসলমানদের আন্দোলনকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। বিশেষ করে এ দেশের ফরায়েজি আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন, তিতুমীরের আন্দোলনকে সঠিকভাবে গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরা হয়নি। সুলতানি আমলের শাসকদের ভিলেন বানিয়ে দেখানো হচ্ছে। এভাবে আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে মানসিকভাবে তৈরি করা হচ্ছে।

এ ছাড়া সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ বইয়ের ১২১ পৃষ্ঠায় অবরোধবাসিনীর কাহিনী অধ্যায়ে ইমলামের অন্যতম ফরজ বিধান পর্দাকেও ন্যাক্কারজনকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ অধ্যায়ের পাঁচটি ক্রমিকের পৃথক অনুচ্ছেদে বোরকা এবং অন্যপুরুষ মানুষের সংস্পর্শ বিষয়ে খুবই নেতিবাচক ধারণা দেয়া হয়েছে। এই শিক্ষা কোমলমতি মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিকট ইসলাম ও পর্দার বিষয়ে ভুল ও নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেবে। এ দেশের প্রায় সব অভিভাবকই চান তাদের কন্যারা ইভটিজিং থেকে বেঁচে থাকুক। পর্দার সাথে বাইরে বের হোক। কিন্তু এখন পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমেই যখন তারা এসব বিষয়ে নেতিবাচক শিক্ষা লাভ করবে তখন তো হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কায় বেশি থাকে।

পাঠ্যপুস্তকে ইসলামে সমর্থনযোগ্য নয় এমন সব বিতর্কিত বিষয়ে সংযুক্ত করার পেছনে একটি সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত রয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও ঢাকা মহনগরীর আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী। গতকাল শুক্রবার তিনি জানান, ইসলামী ভাবধারার লেখকদের বাদ দিয়ে নাস্তিক্যবাদীদের দিয়ে সিলেবাস প্রণয়ন করার কারণেই পাঠ্যবইয়ে এসব বিতর্কিত বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। একটি গোষ্ঠী আমাদের নতুন প্রজন্মকে বিপদগামী করার কৌশল হিসেবেই এসব ইসলামবিরোধী বিষয়াদি দিয়ে সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ডারউইনের বিবর্তনবাদ ৯২ ভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এ দেশের পাঠ্যপুস্তকে দেখতে চায় না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস বর্ণনা করেছেন । আদম (আ:) ও হাওয়া (আ:) থেকে মানুষের সূচনা। এ বিশ্বাস না থাকলে ঈমানহারা হয়ে যাবে। মাওলানা হামিদী পাঠ্যপুস্তক থেকে ডারউইনের বানর থিওরি নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদী পাঠগুলো বাদ দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ৯২ ভাগ মুসলমানের আকিদা বিশ্বাস ও ধর্মীয় নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পাঠ্যবই প্রণয়নের জোর দাবি জানান।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।