Home ইসলাম কোরআনের বর্ণনায় ১০ জালিমের পরিচয়

কোরআনের বর্ণনায় ১০ জালিমের পরিচয়

।। জাওয়াদ তাহের ।।

আল্লাহ তাআলা জুলুম অপছন্দ করেন। তিনি কারো প্রতি জুলুম করেন না এবং জুলুমকারীকে ভালোবাসেন না। তাই তিনি বান্দার ওপর এই জুলুমকে হারাম ঘোষণা করেছেন।

আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তাঁর মহিমান্বিত পরওয়ারদিগার ইরশাদ করেন, ‘আমি আমার নিজের ওপর ও বান্দাদের ওপর অত্যাচারকে হারাম করে নিয়েছি। অতএব, তোমরা পরস্পর পরস্পরকে অত্যাচার কোরো না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪৬৯)

কারো প্রতি জুলুম করা, অত্যাচার করা, এসব খারাপ কাজ, অন্যায়—এটা আমরা সবাই জানি। আমরা এই জুলুমকে নির্ধারিত কয়েকটি অর্থেই বুঝি। অথচ সমাজে প্রচলিত এমন অনেক জুলুম রয়েছে, যেগুলোকে আমরা জুলুমই মনে করি না বা একেবারে মামুলি বিষয় মনে করি। অথচ সেগুলো ঘোরতর জুলুম। কোরআন ও হাদিসে সেসব জুলুমের বর্ণনা এসেছে বিস্তারিত।

১. আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা: সবচেয়ে বড় জুলুম আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে শিরক কোরো না। নিশ্চয়ই শিরক হচ্ছে চরম জুলুম।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১৩)

অন্য আয়াতে বলেন, ‘(প্রকৃতপক্ষে) যারা ঈমান এনেছে এবং নিজেদের ঈমানকে জুলুমের সঙ্গে মিশ্রিত করেনি, নিরাপত্তা ও স্বস্তি তো শুধু তাদের অধিকার এবং তারাই সঠিক পথে পৌঁছে গেছে।’ (সুরা : আল-আনআম, আয়াত : ৮২)

২. সীমা লঙ্ঘন করা: আল্লাহর পক্ষ থেকে বিভিন্ন বিধি-বিধানে সব সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তা লঙ্ঘন করাও জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এটা আল্লাহর স্থিরীকৃত সীমা। সুতরাং তোমরা এসব লঙ্ঘন কোরো না। যারা আল্লাহর সীমা অতিক্রম করে তারা বড়ই জালিম।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২২৯)

৩. মসজিদে ইবাদত করতে বারণ করা: মসজিদ আল্লাহর ঘর। সে ঘরে ইবাদত-বন্দেগি করা থেকে কাউকে বারণ করাও জুলুম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেই ব্যক্তির চেয়ে বড় জালেম আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদগুলোতে আল্লাহর নাম নিতে বাধা প্রদান করে এবং তাকে বিরান করার চেষ্টা করে? এরূপ লোকের তো ভীত-বিহ্বল না হয়ে তাতে প্রবেশ করাই সংগত নয়। তাদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা এবং তাদের জন্য আখিরাতে রয়েছে মহা শাস্তি।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১৪)

৪. সাক্ষ্য গোপন করা: কারো ব্যাপারে কোনো কিছু জানা থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃত সাক্ষ্য গোপন করা মহা অন্যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বড় জালিম আর কে হতে পারে, যে তার কাছে আল্লাহর কাছ থেকে যে সাক্ষ্য পৌঁছেছে তা গোপন করে? তোমরা যা কিছু করো, সে সম্পর্কে আল্লাহ গাফিল নন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৪০)

৫. আল্লাহর বিধান থেকে বিমুখ থাকা: মহান আল্লাহ তাআলা যেসব স্পষ্ট বিধান আমাদের জন্য নাজিল করেছেন, তা জানা সত্ত্বেও তা থেকে বিমুখ থাকাও মহাপাপ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বড় জালেম আর কে হতে পারে, যাকে তার প্রতিপালকের আয়াতের মাধ্যমে উপদেশ দেওয়া হলে সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং নিজ কৃতকর্ম ভুলে যায়? বস্তুত আমি (তাদের কৃতকর্মের কারণে) তাদের অন্তরের ওপর ঘেরাটোপ লাগিয়ে দিয়েছি, যদ্দরুন তারা এ কোরআন বুঝতে পারে না এবং তাদের কানে ছিপি এঁটে দিয়েছি। সুতরাং তুমি তাদের হিদায়াতের দিকে ডাকলেও তারা কখনো সৎপথে আসবে না।’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৫৭)

৬. আল্লাহর ওপর মিথ্যা বলা: যে আল্লাহর ওপর মিথ্যা বলে সে-ও বড় জালিম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তবে সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বড় জালেম আর কে হবে, যে কোনো জ্ঞানের ভিত্তি ছাড়াই মানুষকে বিভ্রান্ত করার লক্ষ্যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে? প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ জালেম লোকদের সৎপথে পৌঁছান না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৪৪)

আরও পড়তে পারেন-

৭. অন্যায়ভাবে হত্যা করা: কাউকে হত্যা করা মহাপাপ। আর সে বড় জালিম। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ যেই প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন তাকে হত্যা কোরো না, তবে (শরিয়ত অনুযায়ী) তোমরা তার অধিকার লাভ করলে ভিন্ন কথা। যাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়, আমি তার অলিকে (কিসাস গ্রহণের) অধিকার দিয়েছি। সুতরাং সে যেন হত্যাকার্যে সীমা লঙ্ঘন না করে। নিশ্চয়ই সে এর উপযুক্ত যে তার সাহায্য করা হবে।’ (সুরা : বনি-ইসরাঈল, আয়াত : ৩৩)

৮. সম্পদ আত্মসাৎ করা: অন্যায়ভাবে কারো কোনো সম্পদ গ্রাস করা জুলুম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুলুম করে অন্যের এক বিঘত জমিনও আত্মসাৎ করে, কিয়ামতের দিন সাত তবক জমিনের শিকল তার গলায় পরিয়ে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১৯৮)

৯. এতিমের সম্পদ ভক্ষণ করা: সাধারণ মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করা অন্যায়। আর এতিমের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করা আরো জঘন্যতম অপরাধ। সে জন্য আল্লাহ তাআলা এতিমের সম্পদের ব্যাপারে আলাদাভাবে আয়াত নাজিল করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা এতিমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে, তারা নিজেদের পেটে শুধু আগুন ভর্তি করে। তারা অচিরেই এক জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০)

১০. সুদ-ঘুষ গ্রহণ করা: যে সমাজে সুদ-ঘুষের প্রচলন শুরু হয় সে সমাজের অধঃপতন ত্বরান্বিত হয়। সুদ-ঘুষ গ্রহণ করাও জুলুমের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘মোটকথা, ইহুদিদের গুরুতর সীমা লঙ্ঘনের কারণে আমি তাদের প্রতি এমন কিছু উৎকৃষ্ট বস্তু হারাম করে দিই, যা (পূর্বে) তাদের পক্ষে হালাল করা হয়েছিল এবং আল্লাহর পথে তাদের অত্যধিক বাধাদানের কারণে এবং তাদের সুদখোরির কারণে, অথচ তাদের তা খেতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং তাদের কর্তৃক মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার কারণে। তাদের মধ্যে যারা কাফির, আমি তাদের জন্য যন্ত্রণাময় শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৬১)

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।