Home ইসলাম বাকস্বাধীনতা রক্ষায় ইসলাম

বাকস্বাধীনতা রক্ষায় ইসলাম

।। মুফতি ইবরাহিম সুলতান ।।

ইসলামপূর্ব সমাজে প্রভাবশালীরা নিম্ন শ্রেণির মানুষের কোনো কথার মূল্যায়ন বা গুরুত্ব দিত না; বরং তারা যা বলত সেটা মিথ্যা হলেও মেনে নিতে বাধ্য করা হতো। কিন্তু ইসলাম এসে এই চরম স্বেচ্ছাচারী সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করেছে।

মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা গোপন করে, আমি যেসব বিস্তারিত তথ্য এবং হিদায়াতের কথা নাজিল করেছি মানুষের জন্য কিতাবের মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করার পরও; সে সমস্ত লোকের প্রতিই আল্লাহর অভিসম্পাত এবং অন্য অভিসম্পাতকারীদেরও।

তবে যারা তাওবা করে এবং বর্ণিত তথ্য সংশোধন করে মানুষের কাছে তা বর্ণনা করে দেয়, সেসব লোকের তাওবা আমি কবুল করি এবং আমি তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৯-৬০)

ইসলামের ইতিহাসে স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকারের কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা হলো—

১. ষষ্ঠ হিজরির হুদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তির দুটি বিষয় মুসলিমদের অন্তরে দারুণভাবে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল, যা তাদের হৃদয়কে দুঃখ ও বেদনায় ভারাক্রান্ত করে ফেলেছিল। যেখানে চারটি ধারার দুটি ছিল।

ক. মুহাম্মাদ এ বছর মক্কায় প্রবেশ না করেই সঙ্গী-সাথিসহ মদীনায় ফিরে যাবেন।

খ. কুরাইশদের কোনো লোক পালিয়ে মুহাম্মাদের দলে যোগ দিলে তাকে ফেরত দিতে হবে। পক্ষান্তরে মুসলমানদের কেউ কুরাইশদের নিকটে গেলে তাকে ফেরত দেওয়া হবে না।

তখন সবার মুখপাত্রস্বরূপ ওমর ফারুক (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে নিম্নোক্ত বাদানুবাদ করেন। ওমর বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, ‘আমরা কি হক-এর ওপর নই এবং তারা বাতিলের ওপর? রাসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ। ওমর বলেন, ‘আমাদের নিহতরা কি জান্নাতে নয় এবং তাদের নিহতরা জাহান্নামে? রাসুল (সা.) বললেন, হ্যাঁ। ওমর বলেন, তাহলে কেন আমরা দ্বিনের ব্যাপারে ছাড় দেব এবং ফিরে যাব? অথচ আল্লাহ এখনো আমাদের ও তাদের মাঝে কোনোরূপ ফায়সালা করেননি? জবাবে রাসুল (সা.) বললেন, ‘হে ইবনুল খাত্তাব, আমি আল্লাহর রাসুল। কখনো আল্লাহ আমাকে ধ্বংস করবেন না। (বুখারি, হাদিস : ৩১৮৪, ২৭৩১, ৩১৮২)

আরও পড়তে পারেন-

২. আনাস (রা.) বলেন, আমি নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে হাঁটছিলাম। তাঁর পরনে ছিল একটি নাজরানি (ইয়েমেনি) চাদর, মোটা কাপড়বিশিষ্ট। এক বেদুইন তাঁর কাছে এসে সেই চাদর ধরে সজোরে টান দিল। আমি দেখলাম মোটা কাপড়ের ঘষায় নবীজি (সা.)-এর কাঁধে দাগ বসে গেল। লোকটি কর্কশ স্বরে তাঁকে বলল, ‘আল্লাহর যে মাল তোমার কাছে আছে তা থেকে আমাকে কিছু দিতে বলো!’ নবীজি (সা.) লোকটির দিকে ফিরে তাকালেন এবং মুচকি হাসলেন। এরপর তাকে কিছু দেওয়ার আদেশ করলেন। (বুখারি, হাদিস : ৩১৪৯)

৩. জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, মক্কা বিজয়ের পর অষ্টম হিজরির শাওয়াল মাসে হুনায়েন যুদ্ধের গনিমত বণ্টনের সময় বনু তামিম গোত্রের নওমুসলিম বেদুঈন হুরকুছ বিন জুহায়ের জুল-খুওয়াইসিরা নামক জনৈক ন্যাড়ামুণ্ড ঘন দাড়িওয়ালা ব্যক্তি বলে উঠে, ‘হে মুহাম্মাদ, ন্যায়বিচার করুন! জবাবে রাসুল (সা.) বললেন, তোমার ধ্বংস হোক! যদি আমি ন্যায়বিচার না করি, তাহলে কে ন্যায়বিচার করবে?

যদি আমি ন্যায়বিচার না করি, তাহলে তুমি নিরাশ হবে ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ তখন ওমর (রা.) দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে ছেড়ে দিন, এই মুনাফিকটার গর্দান উড়িয়ে দিই। তখন রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই! লোকেরা বলবে, আমি আমার সঙ্গীদের হত্যা করছি। নিশ্চয় এই ব্যক্তি ও তার সঙ্গীরা কোরআন তিলাওয়াত করে। যা তাদের কণ্ঠনালি অতিক্রম করে না। তারা সেখান থেকে বেরিয়ে যায়, যেমন শিকার থেকে তীর বেরিয়ে যায়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০৬৩)

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।