Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন যুগের জটিলতা এবং উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব

যুগের জটিলতা এবং উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব

।। আল্লামা মুফতি কিফায়াতুল্লাহ ।।

পৃথিবীতে আমরা সকলে সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকতে চাই। কেউ যেন আমাদের উপর, ইসলামের উপর, ঈমানের উপর, আমাদের সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের উপর আঘাত না হানে; তা আমরা মনে প্রাণে কামনা করি। যারা এই দ্বীন থেকে বঞ্চিত, দুনিয়া-আখেরাত যাদের বরবাদ হচ্ছে, দ্বীনের সত্য শিক্ষা যেন তারা লাভ করতে পারে; তা আমরা নিজেদের দায়িত্ব মনে করি। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে তারাও আসুন, দুনিয়া ও আখেরাতের কামিয়াবী অর্জন করুন; এটাও আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

ইসলামের ছায়াতলে নিজে জীবন যাপন করা এবং অন্যদের ইসলামের সুশীতল ছায়ার প্রতি আহ্বান করা উভয়টিই আজ দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। অমুসলিমের কাছে দাওয়াত পৌঁছানোর ক্ষেত্রে তো হাজারো অন্তরায় আছেই; মুসলমানদের জন্যই ইসলাম নিয়ে বেঁচে থাকা, ইসলামী যিন্দেগী যাপন করা আজ অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে। চারপাশ থেকে বাধা-বিপত্তি আমাদের গ্রাস করে নিয়েছে। ইসলাম বিদ্বেষীদের ষড়যন্ত্র তো আছেই; আজকাল মুসলমানরাই দাওয়াতের সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রসহ আমরা অভ্যন্তরীন অনেক উৎকণ্ঠার মাঝে দিনাতিপাত করছি। আমাদের মাঝে কিছু কিছু দল একেবারে শিরক পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে। নানা শিরক-বিদআত এবং কুফরে তারা লিপ্ত। অপর কিছু দল আকীদা বা আমলের বিদআতে নিমজ্জিত। সর্বত্র দ্বিধাবিভক্তি বাড়ছে। সার্বিকভাবে ইসলাম ও মুসলমান আজ বহুবিধ ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসনের শিকার।

কবি আলতাফ হোসেন হালীর একটা কবিতা আছে-

جو دین بڑی شان سے نکلا تھا وطن سے + پردیش میں وہ آج غریب الغربا ہے

আপন দেশ থেকে বড় জৌলুস নিয়ে বের হয়েছিল যে দ্বীন, ভিনদেশে এসে সে আজ নিতান্তই দুর্বল ও অসহায়! (মুসাদ্দাসে হালী পৃ. ১৯২)।

অর্থাৎ দ্বীন তো বড় ইজ্জত, সম্মান, মর্যাদা ও জৌলুস নিয়ে তার বাড়ি (মক্কা-মদীনা, হারাম ও আরব) থেকে বের হয়েছিল। বিদেশে এসে আজকে সে সর্বাধিক দুরাবস্থা ও বিপর্যস্ততার শিকার।

প্রকৃতপক্ষে পূর্বেকার তুলনায় বর্তমান প্রেক্ষাপট অত্যন্ত সঙ্গীন। পরিস্থিতি ভয়াবহ নাজুক ও শঙ্কাজনক। আমরা অনেকেই আছি, যারা বিষয়টা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নই। মুসলিম উম্মাহ আজ বড়ই গাফেল। বিশেষত আলেম-ওলামা, তারা অনেকটাই উদাসীন। তবে অনেকেই আছেন, যারা এ করুণ পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তা করেন। উত্তরণের পথ নিয়ে ভাবেন। কিন্তু উত্তরণের প্রকৃত পন্থা কী? কোন পথে আমাদের মুক্তি? তা যেন খুঁজে পাওয়াই যাচ্ছে না। বাস্তবতা ঠিক এমনই।

উত্তরণের পথ ও পন্থা

বর্তমান যুগের জটিলতা ও আমাদের অভ্যন্তরীন পেরেশানী এবং পারস্পরিক দ্বিধাবিভক্তি কারো অজানা নয়। ফলে চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ উত্তরণের পথ ও পদ্ধতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁরা মুসলিম উম্মাহকে মুক্তির পথ দেখাতে যথাসাধ্য প্রয়াসী। উত্তরণের তো বাহ্যিক অজস্র পথ ও পদ্ধতি রয়েছে। আমি আজকে আপনাদের সামনে একটি পথ ও পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করার প্রয়াস পাব। আল্লাহ চাহে তো এর মাঝে বর্তমানে আমাদের করণীয় খুঁজে পাবো। ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহ তাআলা আামাদের ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি আমাদের পথসমূহ দেখাবেন। শর্ত দিয়েছেন, চেষ্টা ও মুজাহাদা করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে-

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ

এবং যারা আমার পথে মুজাহাদা করবে, আমি অবশ্যই আমার পথসমূহ তাদের দেখাব। আর আল্লাহ তাআলা অবশ্যই মুহসিনদের সাথে রয়েছেন। (সূরা আনকাবুত- ৬৯)।

মুজাহাদাই উত্তরণের রাজপথ

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমি রাস্তা দেখাবো তোমরা চেষ্টা করো। তাই আমাদের পক্ষ থেকে মেহনত ও চেষ্টা হতে হবে অব্যাহত ও অবিরত। অবিরাম প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের উত্তরণ সম্ভব। অন্যথায় আল্লাহ তাআলা আমাদের পথ দেখাবেন না। কেননা, আল্লাহ তাআলা কোনো জাতির ভাগ্য সেই জাতির কর্মের ফলেই পরিবর্তন করেন। কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে-

إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنْفُسِهِمْ

নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে। (সূরা রা’দ, ১১ আয়াত)।

সুতরাং বর্তমান জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে নিজেদের মুজাহাদার বিকল্প নেই। মুজাহাদার মাধ্যমেই আমাদের জীবনে পরিবর্তন আসবে। অন্ধকার থেকে আলোর পথে আমরা আগুয়ান হতে পারব। তবে এই প্রচেষ্টা হতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে।

মুজাহাদার সঠিক পন্থা কী?

মেহনত-মুজাহাদার সঠিক পদ্ধতি কী? মেহনতের প্রচলিত পদ্ধতিগুলো সঠিক না ভুল, সঠিক বা ভুল হওয়ার মাপকাঠি কী?

প্রতিটি জিনিসের একটা জাহির থাকে, একটা বাতিন থাকে। একটা বাহ্যিক রূপ আরেকটা অভ্যন্তরীণ রূপ। একটি অপরটির পরিপূরক। দেহ আছে কিন্তু রূহ নেই, তাহলে এটা বেকার। আর দেহ ছাড়া রূহ এর অস্তিত্ব ও সক্রিয়তা তো দুনিয়াতে সম্ভবই না। সর্বোপরি দুনিয়াতে বেঁচে থাকা ও সক্রিয় থাকার জন্য দেহ ও রূহ উভয়টিই প্রয়োজন। একটি আমকে যেমন শুধু গঠনগত সুন্দর হলেই চলে না; বরং মিষ্টি ও উপকারীও হতে হয়। গঠন সুন্দর, কিন্তু টক, তাহলে বাজারে চলবে না। তাই দেহ সুন্দর হওয়ার সাথে সাথে অভ্যন্তরীন তথা রূহও সুন্দর ও উপযোগী হতে হবে। তবেই তা দামি হবে; মুল্যবান হবে। মানুষের স্বাদ ও চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।

আরও পড়তে পারেন-

আমাদের বিফলতার কারণ মানে আমাদের কাজের অভাব নয়; বরং রূহের অভাব। আমরা কিন্তু বসে নেই। কিছু না কিছু কাজ করে যাচ্ছি। যে যেখানেই আছি, সাধ্যানুসারে কাজ করে যাচ্ছি। এরপরও আমাদের উত্তরণ ও উন্নয়ন নেই। কারণ আমাদের কাজে রূহ নেই। আদতে কাজগুলো সঠিক পন্থায় সম্পাদিত হচ্ছে না।

মুজাহাদা হতে হবে ইহসানী পন্থায়

আল্লাহ তাআলা সঠিক রাস্তা প্রাপ্তির জন্য মুজাহাদা করার নির্দেশনা দিয়েছেন; সাথে সাথে মুজাহাদা করার পন্থাও বাতলে দিয়েছেন। আলোচ্য আয়াতের পরবর্তী অংশে ইরশাদ করেছেন- إن الله لمع المحسنين আল্লাহ তাআলা মুহসিনদের সাথে আছেন। যারা মেহনত করবে তাদেরকে আল্লাহ তাআলা পথ দেখাবেন, আর যে এই মেহনতকে যত সুন্দররূপে আঞ্জাম দিবে আল্লাহ তাআলা তাদের সাথে থেকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবেন, -আয়াতের মর্মটা এ রকমই মনে হয় আমার কাছে।

لمع المحسنين এখানে مع শব্দটা معيت نصرة এর অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ যারা আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহকে খোঁজার ক্ষেত্রে ইহসানের সাথে অর্থাৎ সঠিকভাবে মুজাহাদা করে, আল্লাহ তাদের সাথে থাকেন, অর্থাৎ তাদের সাহায্য করেন। বেশি সাহায্য, ঘনিষ্ঠ সাহায্য, এমনকি গন্তব্যে পৌঁছার জন্য সঙ্গ দেন। আমরা যদি তার রাস্তায় সঠিকভাবে মেহনত করি, তাহলে তিনি আমাদের সাথে থাকবেন। আমি এক কদম এগিয়ে গেলে যদি আরেক কদম বাকি থাকে, আল্লাহ এক কদম এগিয়ে দিবেন এবং গন্তব্যে পৌঁছার জন্য যা কিছু দরকার আল্লাহ তা পূরণ করে দিবেন। তবে শর্ত হলো, আমার মেহনতগুলো সহিহ হতে হবে।

আমরা আমাদের মেহনতগুলো যদি সঠিকভাবে করি। নতুন-পুরাতন সবগুলোই। মূলত এখানে কাজ দুটি। যথা- এক. আমাদের মেহনত যা আছে সেটাকে সঠিকভাবে করা। দুই. নতুন মেহনতের ক্ষেত্র তৈরি করা।

নতুন মেহনতের ক্ষেত্র তৈরি করা- এটাতো আরও কঠিন ব্যাপার। যখন আমরা পুরোনো মেহনতকেই ঠিকভাবে করবো না, সেখানে নতুন মেহনতের ক্ষেত্র তৈরি করে কী লাভ? এজন্য যা আছে, এগুলো যদি সঠিকভাবে করি, তাহলে ওখান থেকে আমাদের জন্য নতুন পথ বের হয়ে আসবে।

আমাদের মেহনতের ক্ষেত্র কী কী আছে? অনেক ক্ষেত্র আছে। দাওয়াতে তাবলীগ আছে। অনেক পীর মাশায়েখ আছেন তারা তাসাওউফের মেহনত করেন। মসজিদের আইম্মায়ে কিরাম আছেন, তারা সাধারণ মানুষকে দ্বীনের দিকে আহ্বান করেন, দাওয়াত দেন। পাশাপাশি আমাদের মাদরাসা আছে। মাদরাসা, মসজিদ, দাওয়াত এগুলো আমাদের মেহনতের ক্ষেত্র। এগুলোতেই আমরা মেহনত করছি। কিন্তু আমাদের মেহনতগুলোতে জান নেই; প্রাণ নেই। ফলে বর্তমান ক্ষেত্রগুলোতেই আমরা সফল হতে পারছি না। নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করা তো দূরে কথা।

আমাদের কাজগুলো জানদার করব কীভাবে?

আমাদের কাজগুলোকে যদি ইহসানী তরীকায় সম্পাদন করি এবং সঠিক ইলম প্রয়োগ করে জানদার করে তুলি তবে এগুলোই অনেক শক্তিশালী হয়ে যাবে। তো জানদার কীভাবে করা যায়? সবকিছুর মূল হল ইলম ও ইলমের বাহক আলেমে দীন। কুরআন বলে, হাদীস বলে, বাস্তবতা ও যুক্তিও বলে, আলেমগণ যখন থাকবে না তখন ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে। তখন গোমরাহী সয়লাব দেখা দিবে। বর্ণিত হয়েছে-

إن الله لا يقبض العلم انتزاعا ينتزعه من العباد، ولكن يقبض العلم بقبض العلماء، حتى إذا لم يبق عالما اتخذ الناس رءوسا جهالا، فسئلوا فأفتوا بغير علم، فضلوا وأضلوا

আল্লাহ তাআলা ইলমকে মানুষের বক্ষ থেকে ছিনিয়ে নিবেন না। বরং উলামায়ে কেরামকে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইলমকে তুলে নিবেন। অতঃপর যখন একজন আলেমকেও পৃথিবীতে রাখবেন না তখন মানুষ জাহেলদের সর্দাররূপে গ্রহণ করবে। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলে ইলম ছাড়া ফতওয়া দিবে। নিজেরা পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদের পথভ্রষ্ট করবে। (সহীহ বুখারী- ১০০)।

উলামায়ে কেরাম না থাকলে গোমরাহী আসবে। মানুষ অন্ধকারে নিপতিত হবে। মূলত দীন টিকে থাকবে ইলমের উপর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীন কায়েম করার জন্য কি নতুন কাবা নিয়ে এসেছেন? আসমান থেকে বিশাল এক রাজত্ব নিয়ে এসেছেন? মরুভূমির মাঝে বিশাল এক মন্ত্রিপরিষদসহ ফেরেশতা নিয়ে নাযিল হয়েছেন? এসব কিছুই তিনি করেননি। বরং তিনি ইলম নিয়ে এসেছেন। ওহী নিয়ে এসেছেন। ইলম অনুযায়ী মানুষকে দাওয়াত দিয়ে দ্বীনের পথে এনেছেন।

সুতরাং দ্বীন এটা ইলমের নাম। মানুষ তো অজ্ঞ ছিল। দীনের ইলম ও বুঝ কিছুই তাদের ছিলো না। তাদের বিশ্বাস নষ্ট, কথা নষ্ট, আখলাক নষ্ট, জিন্দেগি নষ্ট, যা যা করে সব বরবাদ। তো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাওয়াত দিলেন যে, তুমি তোমার আখলাক ঠিক করো, বিশ্বাস ঠিক করো, কর্ম ঠিক করো, তোমার কর্মজীবন থেকে নিয়ে পরিবার ও সমাজসহ দুনিয়ায় যত কাজ আছে সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশনামত কাজ কর। এজন্য এই জ্ঞানের কথা মানুষের কাছে পৌছানো, গ্রহণযোগ্য করে তোলা- আল্লাহর রাসূলের মেহনত। মানুষের নিকট সহিহ ইলম পৌঁছানো, সহীহ ইলমকে তার নিকট গ্রহণীয় করে তোলা, সহীহ ইলমের দাওয়াত দেওয়া ইত্যাদির জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক মেহনত করেছেন।

উলামায়ে কেরাম হলেন উম্মতের রাহবর ও মাঝি। তার কাছে তো নৌকা চালানোর জ্ঞান থাকতে হবে, তা না হলে তো নৌকা ডুবে যাবে। এজন্য সহীহ ইলম যদি না থাকে, তাহলে তার কোনো কাজও সহীহ হবে না। কোনো সুফলও পাওয়া যাবে না। আল্লাহর সাহায্যও পাওয়া যাবেনা। ইলম বড় জিনিস, সবকিছুর মূলে হলো ইলম। সব নির্ভর করে ইলমের উপর। ইলমের মাধ্যমেই আমাদের কাজে প্রাণ সঞ্চারিত হবে। অন্যথায় আমাদের কাজ জানদার হবে না। বরং আমরা এক সময় নিজেরাই গোমরাহীতে নিপতিত হবো।

ইলমের কেন্দ্র হলো মাদরাসা। ইলমের সঠিক চর্চা হতে হলে মাদরাসার নেযাম ও নেসাব এবং লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সঠিক হতে হবে। আমাদের গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে, মাদরাসা কী? মাদরাসার রূহানিয়াত কী? শক্তিশালী রুহওয়ালা মাদরাসা কিভাবে হবে? এগুলো যদি আমরা বুঝি এবং এ আলোকে যদি আমরা মেহনত করি, তাহলে মাদরাসার বিষয়ে, মাদরাসার হাকিকত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের যে দুর্বলতা আছে, তা ঠিক হয়ে যাবে। পরিবর্তন ও উন্নতি আসবে। সঠিক ইলম চর্চার ধারা অব্যহত থাকবে।

মাদরাসার প্রাণ ও রূহ জায়গা বা ভবন নয়। নির্দিষ্ট কোনো পরিবেশ ও নেজামও নয়। মাদরাসার মূল রুহ হলো আহলে ইলম ও আহলে দিল আসাতেযায়ে কেরাম; ওলামায়ে কেরাম। মাদরাসার মূল কাজ হলো ইলম ও ইলমের চর্চা। মাদরাসা সকল কিছু আবর্তিত হবে ইলম ও তালীম কেন্দ্রিক। মাদরাসার প্রতিটি কণা নিয়োজিত থাকবে ইলম ও তালীমের সহযোগিতায়। ইলম ও তালীম এর সংরক্ষণের জন্য মাদরাসা অন্য সবকিছু বিসর্জন দিতে পারে। কিন্তু ইলম ও তালীম কে বিসর্জন দিতে পারে না। তালীমই মুখ্য। মাদরাসার সকল কাজের কেন্দ্রবিন্দু।

মানুষ দশতলা ভবন নির্মাণ করে সন্তানের জন্য। এখন ছেলে অসুস্থ হয়ে গেলো। চিকিৎসার টাকা নেই। তো একতলা, দুইতলা , দশ তলা দিয়ে কী করবে? চিকিৎসার জন্য বিক্রি করে দেবে। কারণ, ভবন নয়; তার প্রয়োজন ছেলের জীবন, ছেলের সুস্থতা। কোনো একজন হয়তো দশ তলা ভিত দিয়ে ভবন নির্মাণ করেছেন। আট তলা করার পর টাকা ফুরিয়ে গেছে। দু তলা এখনও বাকী। কেউ যদি এসে জিজ্ঞেস করে, কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেল কেন? বলল, টাকা নেই। যদি বলে, ছেলেটাকে বিক্রি করে দেন। এমন কথা বললে পরিস্থিতিটা কেমন হবে? ওকে ধরে মারবে না? যে, পাগল কোথাকার! ছেলে বিক্রি করে আমি বিল্ডিং করব, বিল্ডিং বিক্রি করেই না ছেলেকে সুস্থ করবো। তাহলে দাম কার বেশি? সন্তান। মা-বাবার কাছে সন্তান মহামূল্যবান।

মাদরাসার মাঝেও ইলম ও আলেমে দীনই সর্বাধিক মূল্যবান সম্পদ। আমাদের কর্তব্য হলো, সর্বকাজে তাদেরই প্রাধান্য দেওয়া। মুখ্য হিসেবে বিবেচনা করা। এছাড়া আমরা তালীমকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারব না। সঠিক ইলমের চর্চাও হবে না। গোমরাহী ছড়িয়ে পড়বে চারিদিকে। এমনকি মাদরাসার অভ্যন্তরে।

মোটকথা, তালিমকে সঠিক পথে পরিচালিত করা ব্যতীত আমাদের সকল মেহনত পণ্ডশ্রম বলে গণ্য হবে। কান্ডারী যদি না থাকে, কে কাকে উদ্ধার করবে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে এই বিষয়গুলো বুঝার তাওফীক দান করুক। সবকিছু একসাথে আলোচনা করা সম্ভব নয়। পরবর্তীতে কখনো আলোচনা হবে ইনশা আল্লাহ। আপনারা উলামায়ে কেরাম, ফিকির করলে নিজেরা অনুধান করতে পারবেন। আমি প্রায়ই বলি, কিছু কিতাব থেকে নিতে হবে, কিছু ফিকিরের মাধ্যমে অর্জন করতে হবে। বরং ফিকিরের মাধ্যমে ইলম তৈরি হয়। তাই বলা হয়ে থাকে, এক সাগর ইবাদত এর চেয়ে এক ফোটা ইলমের দাম বেশি। এক সাগর ইলমের চাইতে এক ফোটা ফিকিরের দাম বেশি।

আলোচ্য বিষয়েগুলো যদি সঠিকভাবে উপলব্ধি করি এবং সামনের বিষয় নিয়ে ফিকির করি। তাহলে কখন কী করতে হবে সেটা আল্লাহ তাআলা আমাদের যেহেনে ঢেলে দিবেন। পথ ও পন্থা আমাদের সামনে উন্মোচিত হবে। ইলমের আলোকে আমরা পদক্ষেপ নিতে পারবো। পরিকল্পনা করতে পারবো। এবং আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করবেন। ইনশাআল্লাহ।

লেখক: প্রখ্যাত ইসলামী আইন গবেষক, মুফতি ও মুহাদ্দিস- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।