[কওমি মাদ্রাসা অঙ্গনে দেশের শীর্ষ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘মাকতাবাতুল ফাতাহ বাংলাদেশ’ দাওরায়ে হাদীস ছাত্রদের অধ্যয়ন ও গবেষণার সুবিধা ও মেধাবিকাশের উপযোগী করে হরকতবিহীন সম্পূর্ণ নতুন বিন্যাসে প্রকাশ করেছে কওমি মাদরাসা সিলেবাসের দাওরায়ে হাদীসের জন্য হাদীসের সিহাহসিত্তা গ্রন্থসমূহ। কিতাবসমূহে দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় হাদীস বিশারদগণের পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনায় প্রণীত হয়েছে। একই সাথে কিতাবসমূহ দুই রঙে কম্পোজ ও উন্নতমানের কাগজে মুদ্রিত তাখরীজ, আতরাফ ও শাওয়াহেদসহ বহুমাত্রিক তথ্যসমৃদ্ধ ও নতুন বিন্যাসে সজ্জিত। মাকতাবাতুল ফাতাহ-এর এমন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম।
মাকতাবাতুল ফাতাহ বাংলাদেশ কর্তৃক নতুন বিন্যাসে সিহাহসিত্তা হাদীসগ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে অন্যান্য উলামায়ে কেরামের সাথে মতামত দিয়েছেন দেশের সবচেয়ে বড় দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উম্মুল মাদারেস খ্যাত দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক, মুফতি ও মুহাদ্দিস এবং নূরানী তালিমুল কুরআন বোর্ড চট্টগ্রাম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব হযরত আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন। তাঁর বক্তব্যটি নিম্নে হুবহু পত্রস্থ করা হলো।]
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন তাঁকে চেনার জন্য, আখেরাতের সফলতা অর্জন করার জন্য, আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের মধ্যে জীবন-যাপন করার জন্য নবীর মাধ্যমে কিতাবুল্লাহ পাঠিয়েছেন। এই কিতাবুল্লাহর যেসব বিশ্লেষণ গ্রন্থ আছে, সেগুলোকে কুতুবুত তাফসীর বা তাফসীরের কিতাব বলা হয়। আর সেই তাফসীরের যেসব বিশ্লেষণ-গ্রন্থ আছে, সেগুলোকে কুতুবুল ফিকহ বা ফিকহের কিতাব বলা হয়। অতঃপর কুরআন, হাদীস এবং ফিকহ বুঝার মাধ্যম হিসেবে যে সমস্ত ইলম আছে সেগুলোকে ইলমুন নাহব, ইলমুস সরফ, ইলমুল লুগা, ইলমুল মানতিক, ইলমুল ফালসাফা, ইলমুল মায়ানী, ইলমুল বায়ান ইত্যাদি বলা হয়। এসব ইলম হাসিলের জন্য যুগে যুগে কিতাব লেখা হয়েছে। একজন মানুষের আলেম হওয়ার জন্য, ইলম অর্জন করার জন্য বিশেষ করে উলামায়ে কেরামের ও তালেবে ইলমের জন্য সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো কিতাব। এক সময় আমাদের দেশে এসব কিতাব দুষ্প্রাপ্য ছিল। মিসর ও বৈরুতসহ আরবের বিভিন্ন দেশ থেকে এবং পরবর্তীতে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান থেকে কিতাব আমদানি না করলে আমাদের ছাত্ররা সেই কিতাব ক্রয়ে সক্ষম হতো না। আবার বড় বড় কিতাব আমাদের বাংলাদেশে ছাপানোও হতো না।
আলহামদুলিল্লাহ! বর্তমানে আমাদের দেশে যারা এ সমস্ত কিতাব প্রচার-প্রসারের জন্য এবং ছাত্র ও উস্তাদদের মধ্যে সরবরাহ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি আমরা শুকরিয়া জ্ঞাপন করি। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এ কাজের জন্য তাওফিক দিয়েছেন, এ কারণে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি। বাংলাদেশে মাদ্রাসা সিলেবাস ও সহায়ক ব্যাখ্যাগ্রন্থের কুতুবখানা ও লাইব্রেরীর মধ্যে উচ্চ স্থান অর্জন করেছে মাকতাবাতুল ফাতাহ বাংলাদেশ। মাকতাবাতুল ফাতাহ বাংলাদেশের কিছু কিতাব আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ! আমরা দেখেছি, সেই মিসর, লেবানন এবং আরব দেশগুলোতে যেভাবে উন্নত মানের করে ছাপা হতো, মাকতাবাতুল ফাতাহ বাংলাদেশের কিতাবগুলোও অনুরূপ উন্নত মানের করে ছাপানো হচ্ছে। বিশেষ করে বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, আবু দাউদ শরীফ এবং জালালাইন শরীফসহ প্রত্যেকটি কিতাবের শুরুতে যেভাবে মুকাদ্দামা যুক্ত করা হয়েছে, তা ছাত্রদের জন্য এবং আলেমদের জন্য বড় উপকারী।
এসব মুকাদ্দামার মধ্যে যেগুলো তাফসীরের কিতাবের শুরুতে আছে, তাতে তফসীর বিষয়ে অনেক ইলমি আলোচনা করা হয়েছে। এভাবে হাদীসের কিতাবসমূহের মুকাদ্দামাগুলোর মধ্যে হাদীস যারা পাঠ করেন, যারা হাদীস তলব করেন, হাদীস অর্জন করেন, তাদের জন্য যে সমস্ত উসূলের প্রয়োজন, সেগুলোর আলোকে গুরুত্বপূর্ণ মুকাদ্দামা সংযুক্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া কিতাবের মধ্যে লেবানন এবং আরব দেশের বিখ্যাত ছাপার মানের কিতাবের মতো প্রত্যেক জিনিস যেমন তফসীরে জালালাইনের মধ্যে আয়াতকে লাল রঙ দিয়ে পৃথক করা হয়েছে। তফসীরগুলোকে পৃথক করা হয়েছে, যাতে সহজে ছাত্ররা ধরতে পারে। পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ হাশিয়া এবং বিশেষ বিশেষ শব্দ যেদিকে মানুষের দৃষ্টি পড়া দরকার, সেগুলোকে পৃথক করে এখানে চিহ্নিত করা হয়েছে। এভাবে হাদীসের কিতাবের মধ্যে তারাজিমুল আবওয়াব বা শিরোনামগুলোকে পৃথক রঙ দিয়ে আলাদা করে দেখানো হয়েছে। আবার হাদীস যেখান থেকে শুরু হবে, সেটাকে আলাদা রঙ দিয়ে ভিন্ন করা হয়েছে। অনুরূপভাবে হাদীসের নম্বরগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এতে সাধারণ ছাত্রদের জন্য কিতাব বোঝা সহজ হবে।
আমি মাকতাবাতুল ফাতাহ বাংলাদেশের শুকরিয়া জ্ঞাপন করি এবং আল্লাহর দরবারে এই প্রার্থনা করি, আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন তাদেরকে শুধু ব্যবসা নয়; বরং ইখলাসের সাথে দ্বীনের এলেম প্রচার-প্রসারের জন্য উত্তম বিনিময় দান করুন।
আমি মাদরাসার ছাত্র, উস্তাদ ও উলামায়ে কেরামের নিকট অনুরোধ করবো, তারা যেন এই কিতাবগুলো সংগ্রহ করে মাকতাবাতুল ফাতাহ বাংলাদেশের দ্বীনি খিদমাতের উদ্যোগকে সহযোগিতা করেন। এটাও আমাদের জন্য জরুরি। তারা সামনে যেন বেশি বেশি এভাবে কিতাবগুলো ছাপতে পারেন, এজন্য আমরা সবাই সহযোগিতা করবো।
আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন (দা.বা.)এর ভিডিও বক্তব্যটি শুনতে এই লেখার উপর আলতো চাপ দিন
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ
উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com