Home ইসলাম ইসলামে আত্মীয়দের সাহায্য করার তাগিদ

ইসলামে আত্মীয়দের সাহায্য করার তাগিদ

 মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ

ইসলাম সামাজিক সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়। সৃষ্টিগত কারণে পৃথিবীর সব প্রান্তের সবাই এক বা অভিন্ন উৎসজাত মানুষ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একজন পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকেই তার জুটি সৃষ্টি করেছেন। আর তাদের উভয়ের থেকে অসংখ্য নর-নারীর বিস্তরণ ঘটিয়েছেন।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ০১)

মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম দান-খয়রাত। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে—মিসকিনকে দান করলে নেকি হবে, আত্মীয়কে দান করলে তা হবে দুটি নেকি করার সওয়াব। তা হলো দান ও আত্মীয়তা রক্ষা। (আত-তারগিব)

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর স্ত্রী জাইনাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার মসজিদ-ই-নববীতে ছিলাম। তখন নবী (সা.)-কে দেখলাম যে তিনি (নারীদের লক্ষ্য করে) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের গহনা থেকে হলেও দান করো…।’

আরও পড়তে পারেন-

আর জাইনাব তাঁর স্বামী (আবদুল্লাহ) এবং যেসব এতিম তাঁর তত্ত্বাবধানে ছিল তাদের জন্য খরচ করতেন। একদিন জাইনাব (তাঁর স্বামী) আবদুল্লাহকে বললেন, আপনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করুন, আমি যে আপনার এবং যে এতিম আমার পোষ্য আছে; তাদের জন্য খরচ করছি তা কি দান হিসেবে আমার পক্ষে যথেষ্ট হবে? তিনি (আবদুল্লাহ) বলেন, তুমি গিয়েই রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করো। তখন আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হলাম এবং (বিশ্বনবীর) দরজার কাছে এক আনসারি নারীকে দেখতে পেলাম। তার প্রয়োজনটাও ছিল আমার প্রয়োজনের মতো। তখন বিলাল (রা.) আমাদের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা উভয়ে তাঁকে বললাম। আপনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করুন, আমি আমার স্বামী ও যে এতিম আমার তত্ত্বাবধানে আছে তাদের জন্য খরচ করছি, তা কি দান হিসেবে আমার পক্ষে যথেষ্ট হবে?

আমরা (তাঁকে) আরো বললাম (প্রিয় নবীর কাছে) আমাদের নাম বলবেন না। বিলাল (রা.) নবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হলেন এবং তাঁকে প্রশ্ন করলেন। তিনি বললেন, ওই নারী দুজন কে? বিলাল (রা.) বলেন, জাইনাব। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, কোন জাইনাব? বিলাল (রা.) বলেন, আবদুল্লাহর স্ত্রী।

নবী (সা.) বলেন, হ্যাঁ, তার দ্বিগুণ সওয়াব হবে। সাদকার সওয়াব ও আত্মীয়তা রক্ষা করার সওয়াব। (বুখারি ও মুসলিম)

প্রিয় নবী (সা.) বলেন, সাধারণ দরিদ্র ব্যক্তিকে দান করেল কেবল দানের সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়কে দান করলে দানও হবে, আত্মীয়তাও রক্ষা হবে। (তিরমিজি)

মহান আল্লাহ আত্মীয়তা রক্ষার ব্যাপারে বলেন, ‘আল্লাহর প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় ধন-সম্পদ আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী ও ক্রীতদাস মুক্তির জন্য দান করবে।’

‘আল্লাহ ইনসাফ, এহসান ও আত্মীয়-স্বজনকে দান করার নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসত্ কাজ ও সীমা লঙ্ঘন করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যেন তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত ৯০)

সাধারণত রক্ত, বংশ কিংবা বৈবাহিকসূত্রে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন তার আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে। (বুখারি)

আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, সদ্ব্যবহার, অর্থকষ্টে যথাসাধ্য সহায়তা, মাঝেমধ্যে তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত্ করা, সালাম-কালাম, হাদিয়া-উপঢৌকন আদান-প্রদান অব্যাহত রাখা জরুরি। রাসুল (সা.) বলেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বুখারি)

রাসুল (সা.) আরো বলেন, যে ব্যক্তি তার রিজিকের প্রশস্ততা ও হায়াত বৃদ্ধি চায়, সে যেন আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে। (বুখারি)

পরিশেষে আত্মীয়-স্বজনকে সাহায্য করা প্রসঙ্গে বলি:

‘স্বার্থপর বেঈমান যাও আমার থেকে দূরে,
তোমাদের দেখতে চাই না শুধু খেতে চাও পেট পুরে

নিজের বেলায় ষোলআনা অন্যর বেলায় বাকি,
সুযোগ বুঝে আসো তুমি কাজের বেলায় ফাঁকি।

যে বুঝে নিজের স্বার্থ পরের করে ক্ষতি,
তারাই হলো বেঈমান স্বার্থপর অতি।’

লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর।

উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।