দ্য ইন্ডিগো ইনভাইটেশনাল— একটি প্রতিযোগিতার নাম। সারাবিশ্ব থেকেই মানুষজন এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। আর তার জন্য তাদেরকে ডেনিম জিনস এক বছর পানিতে না ধুয়ে পরতে হয়।
ডেনিমের পোশাকে চকচকে বিভিন্ন নকশাগুলো তৈরি করার একটি বড় উপায় হলো এগুলোকে পানিতে না ধোয়া। তাই বর্তমানে বিশ্বে ‘নো-ওয়াশ মুভমেন্ট’ ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এমনকি বড় বড় ব্র্যান্ডেও আজকাল এ কৌশল অনুসরণ করা হয়।
এ ধরনের না ধোয়া জিনসের প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে থাকেন ব্রায়ান জাবো। নিজের ব্যাপারে তিনি বলেন, ২০১০ সালে তার প্যান্ট না ধোয়ার অভ্যাস শুরু হয়।
‘খুবই বাজে গন্ধ হয়েছিল প্যান্টগুলো থেকে,’ বলেন তিনি। বুদাপেস্টে তার হবু স্ত্রীর সঙ্গে প্রথম দেখা হয় ব্রায়ানের। ‘আমার জিনসগুলো বিছানার পায়ের কাছে মেঝের ওপর স্তূপ হয়ে পড়ে থাকত,’ তিনি স্মরণ করেন।
‘ঘরের ভেতর ঢুকলেই জিনসগুলো থেকে মারাত্মক গন্ধ নাকে আসত। আমার বউয়ের অবশ্য এতে আপত্তি ছিল না, সেটা আমার জন্য ভালোই হয়েছিল,’ বলেন ব্রায়ান।
আগামী জানুয়ারিতে ইন্ডিগো ইনভাইটেশনাল তিন বছর পূর্ণ করবে। এ প্রতিযোগিতায় যারা অংশগ্রহণ করেন, তাদের প্রতি ১০ জনের নয়জনই ট্রাউজার ১৫০ থেকে ২০০ বার পরার পরই কেবল প্রথমবার পানি ব্যবহার করে পরিষ্কার করেন।
র’ ডেনিম পরিধানকারীরা অনেকক্ষেত্রে পানির বদলে অন্যভাবে তাদের ডেনিম পরিষ্কার করেন। এজন্য তারা অতিবেগুনি রশ্মির ব্যবহার বা কেবল বাতাসে মেলে রাখার মতো পদ্ধতি অবলম্বন করেন।
তবে কেবল জিনস পরিধানকারীরা নয়, আরও অনেক সেলিব্রিটিই ধৌতকরণ নিয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানিয়েছেন। ২০১৯ সালে ডিজাইনার স্টেলা ম্যাককার্থি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘আপনার যদি কোনো কিছু ধোয়ার খুব একটা প্রয়োজন না হয়, তাহলে সেটা ধোবেন না। কেবল পরেছি বলেই কোনো পোশাক ওয়াশিং মেশিনে ফেলার পক্ষে নই আমি।’
অনেকে আবার পরিবেশ বা বিদ্যুৎ বিলের কথা চিন্তা করে ধোয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। কিছু কিছু কোম্পানি পোশাক না ধোয়ার পক্ষে ক্যাম্পেইন চালানোর জন্য পরিবেশ রক্ষার সাফাই দিয়েছে।
নারীদের পোশাকের কোম্পানি উলঅ্যান্ড বর্তমানে পোশাক বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতাদের একটি চ্যালেঞ্জ দেয়। এ চ্যালেঞ্জে অনুযায়ী ক্রেতাকে একই পোশাক টানা ১০০ দিন পরতে হয়।
এ ব্র্যান্ডটির একজন ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের চেলসি হ্যারি। তিনি এমন পরিবারে বেড়ে উঠেছেন যেখানে কোনো একটি পোশাক একবার পরার পর অবশ্যই ধুতে হতো।
‘একবার ব্যবহারের পর টাওয়েল, পায়জামা সব ধুতে হতো,’ বলেন তিনি। এক গ্রীষ্মে হ্যারি তার দাদির সঙ্গে থেকেছিলেন কিছুদিন। দাদি তাকে শেখান প্রতিদিন সকালে বালিশের নিচে পায়জামা রেখে দিতে ও রাতে তা ঘুমানোর আগে পরতে।
এদিকে হ্যারির স্বামী একেবারে উল্টো, তিনি কদাচিৎ জামাকাপড় পরিষ্কার করেন।
করোনা মহামারির সময় হ্যারি হাইকিং শুরু করেন। ‘সারাদিন হাইকিংয়ের পর গোসলের কোনো সুযোগ নেই, তার ওপর হ্যামক বা তাঁবুর ভেতরে শুতে হয়,’ বলেন হ্যারি।
তখন অন্য হাইকারেরা তাকে এক্স অফিসিও নামক একটি অন্তর্বাস ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এটি পরপর কয়েকদিন পরা যায়, এবং খুব সহজেই পরিষ্কার বা শুকানোও যায়। এটি ও উলের আরও কিছু পোশাক ব্যবহার করে হ্যারি আরেকটু আরামদায়কভাবে হাইকিং করতে পারলেন।
এ ঘটনার পর থেকেই হ্যারি ভাবলেন, ‘এ কাজটা নিত্যদিনের জীবনে করলে কেমন হয়?’ এরপর থেকেই হ্যারির নো-ওয়াশ জীবন শুরু।
চেলসি হ্যারি অবশ্য তার পোশাকের গন্ধ নিয়ে বিশেষ ভাবেন না। ‘আমি আমার নাককে বিশ্বাস করি,’ তিনি বলেন।
পানির বদলে হ্যারি আজকাল বাতাসে মেলে রেখে অথবা বগলে ভিনেগার বা ভদকা লাগিয়ে পোশাক পরিষ্কার রাখার পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন।
গোসল করে আগেরদিনের মেলে রাখা পোশাক, এক্স অফিসিও অন্তর্বাস পরেই দিন শুরু করেন হ্যারি।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
ইউনিভার্সিটি অভ লিডস-এর টেকসই ফ্যাশনবিদ্যার লেকচারার মার্ক সামনার বলেন, ‘পোশাকের স্থায়িত্ব নষ্ট করার ক্ষেত্রে অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে পোশাক ধোয়া।’
পোশাক ধুলে এটি ছিঁড়ে ও কুঁচকে যেতে পারে, রং হারাতে পারে বলে জানান এ শিক্ষক। সহকর্মী মার্ক টেইলরের সঙ্গে সামনার গৃহস্থালি ধোয়ামোছার উপজাত মাইক্রোফাইবার সামুদ্রিক প্রাণির দেহে কীভাবে মিশে যাচ্ছে, তা নিয়ে গবেষণা করছেন।
তবে সামনার কম পরিমাণ ধোয়ার বিষয়টি সমর্থন করলেও পোশাক একেবারে ধোয়া বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে নন।
‘আমরা চাইনা মানুষ ভাবুক তারা পোশাক ধোয়ার মাধ্যমে পরিবেশ ধ্বংসের কারণ হচ্ছে,’ সামনার বলেন। তার মতে, ‘ব্যাপারটা বরং একটা ভারসাম্য তৈরির বিষয়। জামাকাপড় ধোয়া চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
একজন ব্যক্তি একটি নির্দিষ্ট সময়ে কতবার তার পোশাক ধোবেন, সেটার কোনো গড়মান নেই। ধোয়ার সংখ্যা নির্ভর করবে পানির তাপমাত্রা, ওয়াশ সাইকেল, পোশাকের রং ও সুতার ওপর বলে জানান সামনার ও টেইলর।
তাই সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, বিষয়টি নিয়ে নমনীয় থাকা। ‘আপনার পোশাক থেকে দুর্গন্ধ বের না হলে তাহলে শুধু শুধু ধোয়ার কষ্ট করার দরকার নেই,’ সামনারের পরামর্শ।
সূত্র- টিবিএস।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ