Home শিক্ষা ও সাহিত্য আমল ছাড়া ‘ইলম’ ফলপ্রসূ হয় না: সাপ্তাহিক তরবিয়তী বয়ানে আল্লামা ফোরকান আহমদ

আমল ছাড়া ‘ইলম’ ফলপ্রসূ হয় না: সাপ্তাহিক তরবিয়তী বয়ানে আল্লামা ফোরকান আহমদ

মুহা. ফেরদাউস: জামিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার অন্যতম মুহাদ্দিস আল্লামা ফোরকান আহমদ ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ইলমের সাথে যদি আমল পাওয়া না যায়, তাহলে সেই ইলম ফলপ্রসূ হয় না, বরং অর্থহীন হয়ে পড়ে। তাই কুরআন-হাদীসসহ ইসলামের উপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি আপনাদেরকে সেই মতে গুরুত্বের সাথে ছাত্র জীবন থেকে পরিপূর্ণভাবে অনুশীলনও করতে হবে। এতে করে আপনারা দ্বীনের উপর একজন যোগ্য ও আদর্শবান দায়ী হয়ে গড়ে ওঠতে পারবেন।

সোমবার (১২ জুন) বাদ যোহর দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারীর প্রধান মসজিদ জামে বায়তুল কারীমে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে সাপ্তাহিক তরবিয়তি বয়ানে আল্লামা ফোরকান আহমদ এসব কথা বলেন।

বয়ানে তিনি আরো বলেন, দারুল উলূম হাটহাজারী হচ্ছে উম্মুল মাদারিস তথা দেশের সকল মাদ্রাসার জননী সদৃশ্য বা প্রাণকেন্দ্র। আমাদের পূর্বসুরী বাযুর্গানে কেরাম থেকে শুরু সকল হক্কানী আলেম এই মাদ্রাসাকে মকবুল এদারা বলে থাকেন। এই প্রতিষ্ঠানের সাথে আমাদের পূর্বসূরী আলেমদের অনেক স্মৃতি জড়িত আছে। এই মাদ্রাসা এমনি এমনি প্রতিষ্ঠিত হয়নি; বরং এর পিছনে রয়েছে আমাদের পূর্বসূরিদের অনেক আত্মত্যাগ। আপনারা এখানে এসেছেন দ্বীনি ইলম অর্জন করতে। আমাদেরকে ভালোবেসে ও আস্থা রেখে আপনারা এখানে এসেছেন। তবে আপনাদের এই আসা যেন ব্যর্থ না হয়, সেজন্য সময়ের অপচয় করা যাবে না। সময়কে কাজে লাগাতে হবে। কীভাবে আপনাদের এবং মাদ্রাসার উন্নতি করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সকল উস্তাদের প্রতি পূর্ণ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আনুগত্য করে, মাদ্রাসার আইন-কানুন বজায় রেখে আপনাদের চলতে হবে। তবেই আপনাদের এখানে আসা স্বার্থক হবে।

আল্লামা ফোরকান আহমদ বলেন, কোনো মানুষের শেষের দিক বিবেচনা করে কখনো তাকে নিয়ে সমালোচনায় মেতে ওঠবেন না। যেমন শেষের বিরূপ কোন কীর্তি দেখে আপনারা সমালোচনায় মুখর হয়ে পড়লেন, কিন্তু দেখা গেল তার জীবনের বড় অংশ জুড়ে হকের পক্ষে, ন্যায়-ইনসাফের পক্ষে বিশাল ভূমিকা ও অবদান ছিল। তাহলে তার শেষ দিকে কিছু ভুল-ত্রুটি ঘটে গেলেও সেটা সংশোধনের জন্য তার সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলোচনা ও সুযোগ দেওয়া চাই। সেই সুযোগ না দিয়ে একটুতেই যদি তার বিরুদ্ধে শোরগোল তুলে দেন, তাহলে এটা বেইনসাফী হবে।

আরও পড়তে পারেন-

তিনি বলেন, আপনারা এখনো ছাত্র, বয়সে নবীন এবং চিন্তার জগতে অপরিপক্ক। আপনাদের অনেক কিছু শিখার বাকি রয়েছে। বুঝ শক্তিতে স্থিরতা আসার বাকী রয়েছে। সুতরাং বড়দের কাজে কখনো নাক গলাতে যাবেন না। আপনাদের কাজ হচ্ছে, জ্ঞান আহরণ করা, বড়দের সহচর্যে থেকে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা এবং আমলে পূর্ণ অনুশীলন জারি রেখে নিজেদেরকে গড়ে তোলা। এবং কারো সমালোচনায় শামিল না হওয়া। প্রতিষ্ঠানের কানুনের প্রতি বিনাবাক্যে আনুগত্য প্রদর্শন করা ও কঠোরভাবে মেনে চলা।

আল্লামা ফোরকান আহমদ  আরো বলেন, জামিয়ার সকল উস্তাদ, কর্মকর্তাসহ যিম্মাদারগণের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও সম্মান বজায় রেখে আপনাদেরকে চলতে হবে। আপনাদেরকে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা ও চলাফেরায় পারস্পরিক সম্মান ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে হবে। জামিয়ার অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও আইন পূর্ণরূপে মেনে চলতে হবে। এ ব্যাপারে কোন শিথিলতা করা যাবে না। যথারীতি দরসে সকল ছাত্রকে হাজির থাকতে হবে এবং দরসের বাইরে সময়ের উত্তম ব্যবহার করে পূর্ণ মনোযোগের সাথে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে হবে। ক্যাম্পাসের বাইরে দোকানপাট ও বাজারে ঘোরাফেরা করবেন না এবং কোথাও আড্ডা দিবেন না। আমরা চাই, আপনারা এখানে এসেছেন সহীহ দ্বীনি ইলম অর্জন করতে এবং দ্বীনি বিষয়ে উম্মাহ’র পথপ্রদর্শক হয়ে কাজ করার যোগ্যতা অর্জন করতে। আমরা আপনাদেরকে সেভাবেই গড়ে তুলতে চেষ্টা করবো ও সাহায্য করবো, ইনশাআল্লাহ।

তিনি ছাত্রদের জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহারকে অত্যন্ত ক্ষতিকর উল্লেখ করে বলেন, তালেবে ইলমদের জন্য মোবাইল ফোনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কারো কোন দ্বিমত নেই। যে কারণে জামিয়ার কানুন হলো ছাত্ররা স্মার্টফোন ব্যবহার না করা। ছাত্রদের জন্য নিজেদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে হলে আছর থেকে মাগরীব পর্যন্ত সময়ে শুধুমাত্র বাটন মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে। মনে রাখবেন, জামিয়া কর্তৃপক্ষ এসব বিধিবিধান আপনাদের কল্যাণ চিন্তা করেই জারি করেছে। জামিয়ার শৃঙ্খলা রক্ষার্থে আপনাদের দায়িত্ব জামিয়ার সকল অভ্যন্তরীণ কানুন যথাযথভাবে অনুসরণ করে চলা।

তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, আপনারা অবশ্যই নিয়মিত জামাতে তাকবীরে ঊলার সাথে নামায আদায় করবেন, প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করবেন। রাত ১০টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ে গভীর রাতে ওঠে তাহাজ্জুদ পড়ে ফজরের আগে ১-২ ঘণ্টা কিতাব মোতালায়া করবেন। চলাফেরার সবপর্যায়ে সুন্নাতের পাবন্দীর উপর গুরুত্ব দিয়ে চলবেন। এভাবে যদি মেহনত-সাধনা করে এবং জামিয়ার সকল আইন মেনে নিজেকে আদর্শ ও পরিশুদ্ধতা নিয়ে পরিচালিত করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ আপনারা এখান থেকে শিক্ষাউত্তীর্ণ হয়ে কওম-মিল্লাতের যোগ্য রাহবার ও খাদেম হয়ে সম্মান-শ্রদ্ধার্জনের সাথে দ্বীনের বহুমুখী কাজ আঞ্জাম দিতে পারবেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।