Home ইসলাম অনলাইনে কোরবানি দেওয়ার বিধান

অনলাইনে কোরবানি দেওয়ার বিধান

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

ইদানীং শহরের অলিগলিতে অনলাইনে কোরবানির বিভিন্ন পোস্টার দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কম্পানির তত্ত্বাবধানেও এই আয়োজন অহরহ দেখা যাচ্ছে। যেখানে মানুষ ঘরে বসে কোরবানির পশু কিনতে পারবে, পশু কেনার পর সেটা বাসায় এনে লালন-পালন করার কষ্টও ভোগ করতে হবে না, বিক্রেতা কম্পানিই তাদের দায়িত্বে কোরবানি করে, গোশত বাসায় পৌঁছে দেবে। এবং তারা দাবি করে যে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটাই তারা ইসলামের নীতিমালা মেনে করবে।

কোনো প্রতিষ্ঠান যদি পশু কেনা থেকে শুরু করে জবাই ও গোশত বণ্টন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ ইসলামের নীতিমালা অনুসরণ করে করতে সক্ষম হয়, তাহলে একান্ত প্রয়োজনে তাদের দায়িত্বে কোরবানি করাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বিশেষ করে যাদের বাসায় দায়িত্ব নিয়ে এসব কাজ করার মতো কোনো লোক নেই, তাদের জন্য এই পদ্ধতিটি উপকারীও বটে। তবে যাদের এ ধরনের সমস্যা নেই, তাদের উচিত পশু কেনা থেকে শুরু করে পশু কোরবানি ও গোশত বণ্টন পর্যন্ত নিজেই তদারকি করা। কারণ কোরবানি একটি মহিমান্বিত ইবাদত, যা মানুষ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করে।

ইবাদতটি যেন মহান আল্লাহর কাছে কবুল হয়, তাই পুরো পক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নিজেই তদারকি করা ঈমানের দাবি।

নবীজি (সা.) দোজাহানের বাদশাহ হয়েও নিজের কোরবানি নিজ হাতে করতেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, সুফিয়ান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) তিনবার হজ করেছেন, হিজরতের আগে দুবার এবং হিজরতের পর মদিনা থেকে একবার (যা বিদায় হজ নামে প্রসিদ্ধ)। শেষোক্তটি তিনি কিরান হজ করেছেন।

অর্থাৎ একত্রে হজ ও উমরার ইহরাম বাঁধেন। এ হজে নবী (সা.) যতটি কোরবানির পশু এনেছিলেন এবং আলী (রা.) যতটি পশু এনেছিলেন তার মোট সংখ্যা ছিল এক শ। এর মধ্যে একটি উট ছিল আবু জাহেলের, যার নাসারন্ধ্রে রুপার লাগাম আঁটা ছিল। নবী (সা.) স্বহস্তে ৬৩টি এবং আলী (রা.) অবশিষ্টগুলো কোরবানি করেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩০৭৬)

তাই কোরবানির মতো মহিমান্বিত ইবাদতের প্রতিটি ধাপে নিজেকে যুক্ত রাখার চেষ্টা করা মুমিনের কর্তব্য।

আরও পড়তে পারেন-

কেউ যদি অক্ষম হয়, তাহলে তারা বিকল্প ব্যবস্থায় কোরবানি অবশ্যই করতে পারবে।

অনলাইনে বা কোনো কম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বেগ পেতে হয়, অংশীদার ভিত্তিতে কোরবানি দিতে গিয়ে। কারণ সেখানে দেখা যায়, এক অংশীদার অপর অংশীদারকে চেনে না, তার আয়ের উৎস সম্পর্কে জানে না, তার নিয়ত সম্পর্কেও জানা সম্ভব না। অথচ শরিকে কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোতে ত্রুটি হলে, সব অংশীদারের কোরবানি বাতিল হয়ে যেতে পারে। তাই অনলাইনে শরিকে কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে নিম্নের বিষয়গুলো খোঁজখবর নিতে হবে।

অংশীদারের টাকা হালাল কি না : কোরবানি আদায় করতে হবে শতভাগ হালাল টাকায়, হারাম টাকায় কিংবা হালাল-হারাম মিশ্রিত টাকায় কোরবানি করলে আদায় হবে না। (হিন্দিয়া : ৫/৪২০, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১১/২১৯)

অংশীদারদের কারো টাকা যদি হারাম উপার্জন কিংবা সুদের হয়, তাহলে কারো কোরবানি আদায় হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৩২৬, বাদায়েউস সানায়ে : ৫/৬৫, আহসানুল ফাতাওয়া : ৭/৫০৩, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১১/২১৭)

ঘুষখোর, চাঁদাবাজ যদি তার অবৈধ উপার্জনের টাকায় কারো সঙ্গে কোরবানিতে শরিক হয়, তাহলে শরিকদের কারো কোরবানি আদায় হবে না। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১১/২৪৫)

অংশীদারের নিয়ত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে নেওয়া : বিষয়টি জিজ্ঞেস করা কঠিন হলেও, ইবাদতের স্বচ্ছতার স্বার্থে কৌশলে এ বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে নেওয়া জরুরি। অংশীদারদের মধ্যে কারো গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্য হলে কারো কোরবানি আদায় হবে না। (আদ্দুররুল মুখতার : ৬/৩২৬)

অংশীদারের লোক দেখানো উদ্দেশ্য কি না : এটাও অংশীদার নির্বাচনের আগে বোঝার চেষ্টা করা জরুরি। কেননা কোনো একজন শরিকের কোরবানি করার দ্বারা লোক দেখানো উদ্দেশ্য হলে কোরবানি আদায় হবে না। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১১/২৪২)

অনলাইনে হোক আর অফলাইনে হোক, অংশীদার ভিত্তিতে কোরবানি দিতে চাইলে অবশ্যই এই সূক্ষ্ম বিষয়গুলো যাচাই করে নিতে হবে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে কোরবানি পালন করার তাওফিক দান করুন।

উম্মাহ২৪ডটকম:আইএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।