Home সোশ্যাল মিডিয়া বাবাকে ছাড়া ঈদের মলীন আনন্দ

বাবাকে ছাড়া ঈদের মলীন আনন্দ

আমার জীবনের প্রথম ২০টি ঈদ কাটিয়েছিলাম বাবাকে ছাড়া। বাবা প্রবাসে ছিলেন। আমাদের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ঈদের সময় আমরা বাবাকে পেতাম না। আমাদের বন্ধু-বান্ধবরা প্রায় সবাই বাবার হাত ধরে ঈদের নামাজ পড়তে যেতো। আমি যেতাম একা। প্রবাসে থাকাকালীন কখনো আমরা বাবাকে পাইনি ঈদে। বাবা আমাদের সুখের কথা ভেবে বিসর্জন দিয়েছিলেন তাঁর নিজের সুখ, হাসি-আনন্দ ও স্বাদ-আহ্লাদ।

বাবা যখন প্রবাসে যান, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২০-২২ বছর। ওই বয়স থেকেই তিনি লাগাতার নিরলস পরিশ্রম করে আসছেন।

বাবার প্রবাস জীবনের ঘটনা মনে পড়লেই স্মরণ হয়, আমরা বাবার এই পরিশ্রমের ওপর ভর করে বড় হয়েছি। যাঁর ঘাম আমাদের ভালোভাবে চলার একটা পথ সৃষ্টি করে দিয়েছিল। আমাদের হাসিখুশি রাখার সব আয়োজন তিনি করেছেন। এখনো করে যাচ্ছেন।

বাবা মানুষটা যে একটা ব্যক্তির জীবনে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। বাবার অনুপস্থিতিতে একটা সন্তান কী পরিমাণ অবহেলার শিকার হয়, কী পরিমাণ নিগৃহীত হয়, তাও! পরিবারের সুখের জন্য দূর দেশে খেটেচলা বাবাকে ছাড়া ঈদ আনন্দ সন্তানদের জন্য বড়োই মলীন হয়ে আসে।

আমার বাবা ছিলেন প্রবাসে, তাও তার অনুপস্থিতি বেশ বুঝতে পেরেছি। যাদের বাবা পৃথিবীতে নেই, তারা? তাদের মনের অবস্থা যে কতোটা হতাশার ও ভারাক্রান্ত হৃদয়ের, তা সহজেই অনুভব করতে পারি। কারণ, আমারও যে একই অবস্থা। এই হতাশা, কষ্ট ও হৃদয়ের ভার কাউকে সহজে বুঝাবার নয়। যারা ভুক্তভোগী, তারাই একমাত্র বুঝে থাকেন, বাবা প্রবাসে থাকলে পরিবারে শত সুখের মাঝেও কতোটা হাহাকারের ভার, কতোটা হতাশার দুর্বলতা।

বাবা প্রায় ২২ বছর প্রবাসে ছিলেন। আমার জন্মের পর পর থেকেই। আমাদের ভালোভাবে রাখার জন্য তার প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের নতুন জায়গায় নিয়ে গেছে। আমাদের জীবনটা চমৎকার করার জন্য ঘাম ঝরানো পরিশ্রম করেছেন প্রবাসে।

ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের প্রতিটি শখ পূরণ করার জন্য একাই লড়ে গেছেন। বলা যায়, এখনো করে যাচ্ছেন। ওনার মজবুত করা ভিত থেকেই আমরা ভালো আছি।

বাবাকে আমরা পেতাম দুই বছর বা পাঁচ বছর পর একবার। তখন আমরা বুঝতাম, কী মহিরুহসম মানুষ তিনি। আমাদেরকে পেয়ে বাবাও প্রবাসের সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে যেতেন মুহূর্তে।

জীবনে প্রথম বাবার সাথে ঈদ করতে পেরে যে আনন্দ পেয়েছি, জীবনে আর কোন ঈদের মধ্যে এই আনন্দ অনুভব করতে পারলাম না।

বাবা আমার জীবনে এক বটবৃক্ষসম। শুধু আমার জন্য না। আমিসহ আমার বাকি ২ ভাই-বোনদের জন্যও। মহান আল্লাহ তাআলা প্রতিটি বাবাকে নিরাপদ, সুস্থ ও শান্তিতে রাখুন।

– মাও. শহিদ উল্লাহ
শিক্ষার্থী- বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ
জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।