Home ইতিহাস ও জীবনী হামাসের সামরিক পথপ্রদর্শক ইজ্জুদ্দিন আল-কাসসাম!

হামাসের সামরিক পথপ্রদর্শক ইজ্জুদ্দিন আল-কাসসাম!

।। ছিবগাতুল্লাহ আলিফ শাহ ।।

প্রত্যেকটি জাতির মাঝে একজন পথপ্রদর্শক উদিত হয় বিভিন্ন সময়। ইজ্জুদ্দিন আল-কাসসাম ছিলেন তেমনি একজন পথপ্রদর্শক। যিনি ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।

এই মহান সংস্কারকের জন্ম ১৯ ডিসেম্বর ১৮৮২ সিরিয়ার জাবালাহ গ্রামে। তখনও কিন্তু ওসমানীয় সাম্রাজ্য বর্তমান ছিল। তাঁর পিতা ওসমানীয় যুগে শরয়ী আদালতের একজন কর্মকর্তা ছিলেন এবং দাদা কাদেরিয়া তরিকার একজন প্রধান শাইখ ছিলেন। আল-কাসসাম হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন।

প্রাথমিক লেখাপড়া তিনি তার জন্মস্থান জাবালাহে করেন। আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ালেখা করেছিলেন। তিনি সংস্কারবাদী আলেম শাইখ আবদুহুর ছাত্র ছিলেন। মূলত আল আজহারেই তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ কাজের ব্যাপারে চিন্তাধারা গঠন করেন।

কৃষক ও অন্যান্য স্থানীয় জনতার কাছে তিনি জিহাদের মাধ্যমে নিজেকে রক্ষা করার তাগাদা দিতেন। কারণ তখন ইউরোপীয় বিভিন্ন উপনিবেশিক শক্তি আরবদের উপর আগ্রাসন চালাচ্ছিল এবং উসমানীয় সাম্রাজ্য থেকে বের হয়ে আসতে নানা ধরনের প্রলোভন দিচ্ছিল।

১৯০৯ সালে তিনি আলেম হিসেবে নিজ জন্মস্থানে ফিরে আসেন এবং মাদরাসা শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। শিক্ষকতা ছাড়াও তিনি ইব্রাহিম ইবনে আদহাম মসজিদের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নিজ জন্মস্থানে প্রত্যাবর্তনের পর আল-কাসসাম নৈতিক সংস্কারের মাধ্যমে সমাজ সংস্কারের উদ্যোগ নেন। নিয়মিত নামাজ ও রোজা পালন এবং জুয়া, মদ্যপান, নাচ-গান ও পতিতালয় বন্ধ করা তাঁর কার্যক্রমের অংশ ছিল। অল্প দিনেই তার কার্যক্রমের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। স্থানীয় জনগণ তার সংস্কারমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে। পর্যায়ক্রমে তিনি প্রভাবশালী আলেম হিসেবে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে সক্ষম হন।

১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ইতালি কর্তৃক লিবিয়া আগ্রাসনের পর ওসমানীয়-লিবিয়ান প্রতিরোধ আন্দোলনের জন্য তিনি জাবালাহে তহবিল সংগ্রহ করেন এবং একটি বিজয় সংগীত রচনা করেন। সংগীতটি ছিল এমন: হে দয়ালু, হে পরম করুনাময়, আমাদের অভিভাবক সুলতানকে বিজয়ী কর এবং শত্রু ইতালীয়দের পরাজিত কর।

আরও পড়তে পারেন-

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি ওসমানীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি অস্ত্র চালনায় দক্ষ ছিলেন। পরবর্তীতে বৈরুত হয়ে হাইফা নগরীতে চলে আসেন। তিনি সর্বদা জনসাধারণের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতেন। বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজের মাধ্যমে এখানেও বিশেষত উত্তর ফিলিস্তিনের দরিদ্র মুসলিমদের মাঝে আল-কাসসাম দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

মার্কিন ইতিহাসবিদ এডমন্ড বার্কের মতে আল-কাসসাম ছিলেন: “ইসলামী সামাজিক মূল্যবোধে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত এক ব্যক্তি এবং যিনি ফিলিস্তিনি কৃষক ও উদ্বাস্তুদের দুরবস্থা দেখে অস্থির হয়ে পড়েন। ব্রিটিশ ম্যান্ডেটরি ফিলিস্তিনে প্রাচীন সামাজিক ব্যবস্থা লঙ্ঘনের সাথে মুসলিম হিসেবে আল-কাসসামের প্রধান ধর্মীয় উদ্বেগ জড়িয়ে ছিল। এই ক্রোধ রাজনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সহায়তা করে, যা তাকে অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য করে এবং ফিলিস্তিনের উল্লেখযোগ্য রাজনীতিকদের চেয়েও তাকে স্বতন্ত্র করে তোলে।”

তিনি তাঁর জ্বালাময়ী রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বক্তব্যের মাধ্যমে ব্রিটিশ ও ইহুদিদের প্রতিরোধ করতে উৎসাহিত করতেন। জেরুজালেমের গ্র্যান্ড মুফতি মোহাম্মদ আমিন আল-হুসাইনির সাথে তাঁর বেশ সখ্যতা ছিল।

১৯২৮ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি হাইফায় জামিয়াত আল-শুব্বান আল-মুসলিমিন দলের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। ১৯৩০ কিংবা ১৯৩১ সালে তিনি গেরিলা সংগঠন আল-কাফ আল-আসওয়াদ (কালো হাত) প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি জয়নবাদ ও ব্রিটিশ বিরোধী সংগঠন ছিল। ১৯৩১ সালের ১১ এপ্রিল তিনজন ইয়াগুর সদস্যকে হত্যার মাধ্যমে আল-কাফ আল-আসওয়াদের হামলা শুরু হয়। যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের সময় আল-কাসসাম উন্নত চরিত্রের উপর জোর দিতেন। অসহায় মানুষদের সেবা, পরিবারের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা এবং নিয়মিত নামাজের ওপর গুরুত্বারোপ করতেন।তাঁর সদস্যগণ সবসময় আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা সজ্জিত থাকত। তারা ‘কাসসামিইয়ুন’ নামেই প্রসিদ্ধ ছিল। তারা ইহুদি বসতি এবং ব্রিটিশদের নির্মিত রেল লাইনে আক্রমণ করত।

১৯৩৫ সালের ৮ নভেম্বর ব্রিটিশ কনস্টেবল মোশে রোসেনফেল্ডের হত্যাকাণ্ডের জন্য তাঁকে এবং তাঁর অনুসারীদের দায়ী করা হয় এবং তাঁকে গ্রেফতারের উদ্যোগ নেওয়া হয। যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। ২০ নভেম্বর সংগঠিত এক দীর্ঘ লড়াইয়ে তিনি শহীদ হন। তাঁকে ফিলিস্তিনি গ্রাম বালাদ আল-শাইখের মুসলিম কবরস্থানে (বর্তমানে হাইফা নগরীতে অবস্থিত) দাফন করা হয়। এই মহান মনীষীর নামেই ফিলিস্তিনি সশস্ত্র আন্দোলন হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জুদ্দীন আল-কাসসামের নামকরণ করা হয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, জামেয়া দারুল মা’আরিফ আল-ইসলামিয়া।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।