Home জাতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাজশাহীতে ১১ ডিগ্রি: শীতের কষ্টে নিম্নআয়ের মানুষ

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাজশাহীতে ১১ ডিগ্রি: শীতের কষ্টে নিম্নআয়ের মানুষ

ছবি- টিবিএস।

সারাদেশে শীত বাড়ছে। ঘন কুয়াশায় দিনের বেশির ভাগ সময় ঢাকা থাকে সূর্য। কুয়াশার সাথে উত্তরের মৃদু বাতাস আর কনকনে ঠাণ্ডায় শীতের তীব্রতা বাড়ছে কয়েকগুণ। শীত বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ছে। তীব্র শীতে ভোগান্তিতে পড়ছেন গৃহহীন, ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষ। এই শীতে বেশি কষ্ট পাচ্ছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন হাসপাতালে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ফুটপাতের ছিন্নমূল ও বস্তিতে বসবাসকারী নিম্নবিত্তদের অবস্থাও করুণ হয়ে পড়েছে। এই ঠাণ্ডায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন অনেকে।

দেশের বেশিরভাগ জায়গায় রাতের তাপমাত্রা কমেছে। এতে শীতের অনুভূতি বাড়ছে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল রাজশাহীতে। একদিন আগে সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল শ্রীমঙ্গলে। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে কমে হয়েছে ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী কয়েকদিন সারাদেশে কুয়াশা ফের বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

কুয়াশা ও শীতের কারণে বিপাকে পড়েছেন শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে রিকশা-ভ্যানচালকসহ শ্রমজীবী মানুষ। এতে করে কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন রোজগার। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন। বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীতার্তরা শীত নিবারণ করছেন। তারপরও শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে নিম্ন আয়ের মানুষরা কাজে বের হচ্ছেন। অন্যান্য বার শীতে গরীব অসহায় মানুষদের মাঝে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও এবার নির্বাচনের জন্য তা হয়নি। ফলে অসহায় গরীব দুঃখী মানুষ এখনো শীতে কষ্ট ভোগ করছে।

কনকনে শীত উপেক্ষা করেই জীবিকার তাগিদে কাকডাকা ভোরে কাজে বের হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। মালিবাগ এলাকার ভ্যান চালক আকবর আলী বলেন, তীব্র শীতের মধ্যেও আমাদের ভ্যা নিয়ে বের হতে হয়। শ্যাম বাজার কাওরান বাজার এসব পাইকারী বাজারে খুব সকালে গিয়ে নানা সবজি কিনে এনে ফেরি করে বিক্রি করি। শীত উপেক্ষা করেই আমাদের বের হতে হয়। না হলে সংসার চলবে না।

কাজের বুয়া জাহানার বলেন, এই শীতের মধ্যেও অন্যের বাসায় গিয়ে কাজ করতে হয়। শীতের মধ্যে ঠান্ডা পানি দিয়ে ঘর মুছা, কাপড় কাঁচা এসব কাজ করতে হয়। বাসায় বাসায় কাজ করে সংসার চালাতে হয়।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামীকালও শীতের তীব্রতা থাকবে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে বিঘঘ্ন ঘটতে পারে। সারাদেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে সারাদেশে দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।

আরও পড়তে পারেন-

কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা জানান, পৌষের শেষে কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশার দাপট আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সাথে হাড় কাঁপানো কনকনে ঠাণ্ডায় শ্রমজীবি ও নিম্ন আয়ের মানুষজন পড়েছে বিপাকে। রাতে বৃষ্টির ফোঁটার মত পড়ছে কুয়াশা। সকাল ১০টা পর্যন্ত দেখা মেলেনা সূর্যের। প্রকৃতি ঘন কুয়াশায় ঢাকা। ফলে ঠান্ডায় কাজে যেতে পারেনি বয়স্ক শ্রমজীবী মানুষরা।

গতকাল সকাল ৭টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দুপুর পর্যন্ত ঠাণ্ডা বেশি অনুভূত হয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষজন প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে সময় মতো কাজে বের হতে পারছে না। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের কিছুটা উত্তাপ ছড়ালেও বিকেল হতেই তাপমাত্রা আবারো নিম্নগামী হতে থাকে।

সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকার মান্নান মিয়া বলেন, আজ কুয়াশা কম কিন্তু সেই ঠাণ্ডা। হাত পা বরফ হয়ে যাচ্ছে। মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না। বাতাসে কাবু করে ফেলছে। সদরের পাঁচগাছী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, কিছুদিন আগে মাদরাসার ছাত্রদের জন্য ২০০ কম্বল পেয়েছি তা বিতরণ করা হয়েছে। আর কোন শীতবস্ত্র পাইনি। তবে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, এরকম তাপমাত্রা আরো কয়েকদিন থাকবে। তবে এ মাসের মধ্যে আরো একটি শৈত্য প্রবাহ এ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে।
পঞ্চগড় জেলা সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ে ঘনকুয়াশা ও উত্তর পশ্চিম দিকের হিমেল হাওয়ায় ঠাণ্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে মানুষের জনজীবন। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের গতিবেগ ছিল ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার। সরেজমিনে দেখা যায়, রাত থেকেই ঘনকুয়াশায় আচ্ছন্ন শহর ও গ্রামের বিভিন্ন জনপদ। উত্তর পশ্চিম দিকের হিমেল হাওয়া। সকাল থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত মিলেনি সূর্যের দেখা। কেউ কেউ খড়খুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
স্থানীয়রা জানায়, হিমালয় থেকে ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে আসায় এখানে শীতের প্রকোপ একটু বেশি। দিনে খুব ঠাণ্ডা বিরাজ করছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই ঠাণ্ডা বাড়ছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যেবক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ্ বলেন, এ মাসে বাতাস ও ঘনকুয়াশা বেশি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাপমাত্রা কম বেশি হলেও ঠাণ্ডাও বেশি অনুভূত হচ্ছে।

দিরাই (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পৌষের শীতে কাবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য জীবদের মধ্যেও এর প্রভাব পড়েছে। গতকাল দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের কোথাও। তীব্র কুয়াশা আর দমকা বাতাসের ফলে উপজেলা জুড়ে সূর্যের দেখা না মেলায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতন ঘটেছে। পাশাপাশি তীব্র শীতে কাবু হয়ে পড়েছে গৃহপালিত পশু।

গতকাল দিরাই উপজেলায় সরেজমিনে দেখা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষ ঘর থেকে বের হলেও অত্যধিক ঠাণ্ডার কারণে কাজ করতে পারেনি। বিশেষত কৃষি কাজে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। ঘন কুয়াশা আর দমকা বাতাসের জন্য ক্ষেতের পানি ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়ায় লোকজন কৃষি কাজে ঠিকমত নামতে পারেনি। গতকাল এর তীব্রতা ছিল বেশি। গভীর রাত থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়া দুপুর পর্যন্ত ছিল। সারাদিন উপজেলার কোথাও সূর্যের দেখা মেলেনি।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।