।। মাওলানা মুনির আহমদ ।।
২৩শে জুলাই, ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ‘মার্জিত ও শালীন পোশাক’ পরিধানের একটি নির্দেশনা জারি করেছিল। দেশের সরকারি অফিসগুলোতে শৃঙ্খলা ও পেশাগত সৌন্দর্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে এটি একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ হিসেবেই জনপরিসরে বিবেচিত হয়েছিল।
এই নির্দেশনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। অধিকাংশ মানুষ এটিকে একটি ইতিবাচক ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ হিসেবেই দেখেছিলেন এবং দেশীয় সংস্কৃতি ও শালীনতা বজায় রাখার এই আহ্বানকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছিলেন।
তবে আশ্চর্যজনকভাবে, নির্দেশনাটি জারির মাত্র একদিন পরেই, অর্থাৎ ২৪শে জুলাই, বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ করে এটি বাতিল করে নেয়। এই দ্রুত সিদ্ধান্ত বদলের ঘটনায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন: এর পেছনে কি কোনো অদৃশ্য চাপ বা প্রভাব কাজ করেছে?
বিশ্লেষকদের মতে, প্রশাসন ও সরকারের কিছু মহলে এখনো এমন কিছু গোষ্ঠী সক্রিয় থাকতে পারে, যারা ধর্মীয় মূল্যবোধ বা সামাজিক সংস্কারমূলক উদ্যোগের প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন। এসব গোষ্ঠী অনেক সময় সাধারণ জনগণের মতামত ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধকে গুরুত্ব না দিয়ে মূলধারার বাইরে অবস্থান নেন। তাদের আপত্তিকে “ব্যাপক প্রতিক্রিয়া” হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে একটি জনসমর্থিত ও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বাতিল করা—প্রশাসনের দূরদৃষ্টির অভাব এবং নীতিগত অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়।
যেখানে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী শালীনতা ও শৃঙ্খলার পক্ষে অবস্থান নেয়, সেখানে মাত্র কয়েকটি গণমাধ্যম—যেমন প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, বিবিসি বাংলা বা কালের কণ্ঠ—এবং কিছু সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে উত্থাপিত সমালোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা প্রত্যাহার গুরুতর প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত কি প্রশাসনিক জবাবদিহিতা, নীতিগত স্থিরতা এবং জনমতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে গুরুতর ঘাটতির ইঙ্গিত বহন করে। দেশের বৃহৎ অংশের সমর্থন পাওয়া কোনো পদক্ষেপ এভাবে বাতিল হওয়ায় অনেকেই প্রশাসনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন।
২০২৩ সালের ‘জুলাই আন্দোলন’-এর পর থেকেই প্রশাসনিক সংস্কার, জন-ইচ্ছার প্রতিফলন এবং স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার দাবি জোরালো হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার সেই দাবিগুলোর প্রতি একপ্রকার তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও উপেক্ষার বার্তা বহন করছে কি না, তা নিয়ে সচেতন মহলে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
এ পর্যায়ে প্রশ্ন রয়েই যায়-
সামাজিক শৃঙ্খলা, পেশাগত শালীনতা এবং জনগণের বৃহৎ অংশের মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া একটি পদক্ষেপ কেন মাত্র একদিনেই পরিবর্তন করতে হলো?
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ