দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেছেন, “বাংলাদেশে ভারতের আরও বিনিয়োগ করা উচিত, তবে তার চেয়েও জরুরি হলো আমাদের সমাজ নিয়ে আন্তরিক সংলাপ শুরু করা।”
ভারতের সংবাদমাধ্যম দি প্রিন্ট-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত বলেন, “বাংলাদেশের ভূখণ্ড কখনোই ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার হবে না। সীমান্ত রাতারাতি নরম হবে না, সম্পর্ক গড়তে সময় দিন।”
রাষ্ট্রদূত ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে পারস্পরিক বিশ্বাস, অভিন্ন অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং গভীর সাংস্কৃতিক বন্ধনের ভিত্তিতে নির্মিত একটি ‘জৈবিক সম্পর্ক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তার মতে, “জোয়ারের পর যেমন পলি পড়ে, তেমনি সম্পর্কের ক্ষেত্রেও একটি স্থিতিশীল স্তর তৈরি করতে সময় দেওয়া প্রয়োজন।”
হামিদুল্লাহ বলেন, “শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের লেনদেন নয়, সমাজভিত্তিক সংযোগই দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি হওয়া উচিত।” শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা এবং যুবসমাজকে ঘিরে একটি দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার আহ্বান জানান তিনি।
ভারতীয় স্কুল ডিপিএস ঢাকা–র প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “সেখানে ছাত্রছাত্রীদের কাছে বিষয়টি কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের নয় বরং একটি স্বাভাবিক গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থার প্রতিফলন। এই ধরনের অন্তঃসমাজিক যোগাযোগই পারস্পরিক আস্থার ভিত্তি।”
বাংলাদেশের গড় বয়স ২৫ বছর এবং প্রতিবছর দুই মিলিয়নেরও বেশি তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে—এই প্রেক্ষাপটে হামিদুল্লাহ বলেন, “এই নতুন প্রজন্ম আনুগত্য নয়, আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। তারা কাকে তাদের ভবিষ্যতের জন্য কাজ করতে দেখছে, সেটাই বড় প্রশ্ন।”
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
বর্তমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, মোট অর্থনৈতিক আদান-প্রদান প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। তবে মেডিক্যাল ভিসা ও আন্তঃসীমান্ত সুযোগসুবিধা স্থগিত হওয়ার ঘটনায় জনগণের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, “মানুষের অনুভূতি আহত হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সখ্য বাস্তব, কিন্তু এটিকে অবহেলা করলে তা টিকবে না।”
পাকিস্তান কিংবা চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কোনো আদর্শগত পুনর্বিন্যাস নয় বলে সাফ জানান হামিদুল্লাহ। তার ভাষায়, “চীনের সঙ্গে সম্পর্ক driven by economic necessity — এটি সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির বিষয় নয়।”
তিনি আরও বলেন, “হাসিনার সময়েও পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিরক্ষা পর্যায়ের যোগাযোগ ছিল, কিন্তু তা কখনো কৌশলগত অবস্থান বদলের ইঙ্গিত দেয়নি।”
সার্ক নিয়ে আশাবাদী মনোভাব পোষণ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, “সার্ক এখনো মৃত নয়। উন্নয়ন তহবিল সক্রিয় রয়েছে এবং কিছু আঞ্চলিক প্রকল্প নীরবে এগিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি অনুপস্থিত হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করছে।”
রিয়াজ হামিদুল্লাহ বলেন, “আমাদের সম্পর্ক কোনো মহাপরিকল্পনার মোড়কে আবদ্ধ নয়। এটি হোক ধীর, গভীর, এবং জৈবিকভাবে বিকশিত। যেকোনো স্থায়ী সম্পর্ক নির্ভর করে বিশ্বাস, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং অভিন্ন সুবিধার ওপর। ভারত যদি সত্যিকারের অংশীদার হতে চায়, তাহলে আমাদের সমাজ নিয়ে কথা বলুক।”
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ