Home ইতিহাস ও জীবনী মাওলানা শোয়াইব আহমদ: ইসলাম, মানবতা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব

মাওলানা শোয়াইব আহমদ: ইসলাম, মানবতা ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব

।। বায়েজীদ মাহমুদ ফয়সল ।।

মাওলানা শোয়াইব আহমদ। বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের জন্য হৃদয়ে গভীর দরদ নিয়ে কাজ করা এক কিংবদন্তি আলেমে দ্বীন, যিনি একই সঙ্গে লেখক, গবেষক, চিন্তাবিদ এবং একজন বিদগ্ধ সুবক্তা। এই ব্রিটিশ বাংলাদেশি আলেমে দ্বীন গত তিন দশক ধরে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে পৃথিবীর নানা প্রান্তে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। দেশের জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর সরব পদচারণা যেমন রয়েছে, তেমনই আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তাঁর স্বতন্ত্র অবস্থান সুপ্রতিষ্ঠিত।

মাওলানা শোয়াইব আহমদ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের একজন সম্মানিত নাগরিক। ব্রিটিশ মুসলিম কমিউনিটিতে তিনি অত্যন্ত সুপরিচিত ও সমাদৃত। সেখানে তিনি ইলমে দ্বীনের প্রচার-প্রসারের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারকাজুল উলুম, যার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর দীর্ঘ প্রচেষ্টায় এই প্রতিষ্ঠানটি ব্রিটিশ মুসলিমদের দ্বীন শেখার এক প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা

ব্রিটিশ মুসলিমদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির তদারকির পাশাপাশি মাওলানা শোয়াইব আহমদ রাজনীতিতেও সমানভাবে সক্রিয়। তিনি উপমহাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইউকে শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন এবং একই সঙ্গে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হিসেবেও যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। নব্বইয়ের দশক থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সামনে থেকে অংশগ্রহণ করেছেন।

আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিত প্রাণ

মাওলানা শোয়াইব আহমদ একজন মানবতাবাদী ব্যক্তিত্ব হিসেবেও পরিচিত। দেশের যেকোনো সংকটে তিনি অসহায়-পীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ান। ২০০৪ সালের ভয়াবহ বন্যা, ২০০৭ সালের ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০১৭ সালে বানের জলের মতো ভেসে আসা নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে তিনি গভীর মমতা ও ভালোবাসা নিয়ে ছুটে গিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সেমিনার ও কূটনৈতিক সম্পর্ক

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণের সুবাদে মাওলানা শোয়াইব নিয়মিতভাবে ইউরোপ, আমেরিকা, তুরস্ক, মিশর, সৌদি আরব, ফিলিস্তিনসহ অসংখ্য দেশ সফর করেছেন। ১৯৯৯ সালে যখন দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার পর বহির্বিশ্বের মুসলিমদের ফিলিস্তিন সফরের অনুমতি দেওয়া হয়, তখন তিনি প্রথম দশজন ইসলামিক স্কলারের একজন হিসেবে সেখানে প্রবেশের সুযোগ পান। ফিলিস্তিনে ইজরাইলের দখলদারিত্ব ও ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা তাঁকে গভীরভাবে ব্যথিত করে। এরপরও তিনি বেশ কয়েকবার ফিলিস্তিন সফর করেছেন।

প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা শোয়াইব আহমদ।

আরও পড়তে পারেন-

তিনি ‘দিফা আনিল কুদস’ শীর্ষক জেরুসালেমে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে ফিলিস্তিনিদের বঞ্চনা এবং আরব বিশ্বের উদাসীনতার তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন।

‘দ্য ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব মুসলিম স্কলারস’-এর সদস্য মনোনীত

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বখ্যাত ইসলামিক স্কলার ড. ইউসুফ আল কারজাভি তাঁকে মুসলিম বিশ্বের নন্দিত ব্যক্তিত্বদের সংগঠন ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব মুসলিম স্কলারস’-এর সদস্য হিসেবে মনোনীত করেন। একই বছরের ৭ ডিসেম্বর কাতারের দোহা থেকে সংগঠনটির সভাপতি হিসেবে ড. কারজাভি তাকে সদস্য পদ গ্রহণের জন্য বার্তা পাঠান।

কুয়ালালামপুর সামিট ২০১৯-এ অংশগ্রহণ

২০১৯ সালের ১৮ থেকে ২১ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত মুসলিম বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী সম্মেলন ‘দ্য কুয়ালালামপুর সামিট ২০১৯’-এ তিনি মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মুহাম্মদের কার্যালয়ের আমন্ত্রণে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এই সম্মেলনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান, কাতারের আমির শায়খ তামিম বিন হামাদ আল থানি, ইরানের প্রেসিডেন্টসহ ৫২টি দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও ৪০০ বিশেষ প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে তিনি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সুসম্পর্ক এবং শিক্ষা ও গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য দেন, যা বিশ্বনেতাদের মুগ্ধ করে।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব

২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে আয়োজিত ইনস্টিটিউট ফর কালচারাল ডিপ্লোম্যাসি বিভাগের বার্ষিক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে তিনি প্রথমবারের মতো বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে আমন্ত্রিত হন। পরে একই বছরের সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয়বারের মতো তিনি এই সিম্পোজিয়ামে যোগ দেন। সেখানে তিনি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এবং রোহিঙ্গা মানবাধিকার ইস্যুতে বক্তব্য দেন। তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

এরদোগান ও মাহাথির মুহাম্মদের সঙ্গে মতবিনিময়

ক্যামব্রিজ সেন্ট্রাল মসজিদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগানের সঙ্গে তিনি সংক্ষিপ্ত মতবিনিময় করেন। একই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মুহাম্মদের সঙ্গেও তিনি তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাৎকালে মাহাথির মুহাম্মদ ইসলাম ও মুসলমানদের উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন

শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য মাওলানা শোয়াইব আহমদ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এই স্বীকৃতি তাঁর দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও বিচক্ষণ মনোভাবেরই পরিচায়ক।

মাওলানা শোয়াইব আহমদ তাঁর বিশাল কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে নিজেকে একজন জীবন্ত কিংবদন্তিতুল্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। তিনি দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনছেন এবং মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও মানবতার পক্ষে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।