Home ইসলাম বিজ্ঞানের আলোকে রাসূলুল্লাহর (সা.) সুন্নাত-২

বিজ্ঞানের আলোকে রাসূলুল্লাহর (সা.) সুন্নাত-২

।। আলহাজ্ব সৈয়দ জহির উদ্দীন ।।

[পূর্ব প্রকাশিতের পর]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভ্যাস ছিল প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতি/শুক্রবার অথবা একই দিনে পনের দিন অন্তর হাত পায়ের নখ কাটতেন এবং ক্ষৌর কার্য করতেন। আধুনিক যামানায় কুরুচীপূর্ণ কতক নারী পুরুষ হিংস্র পশু পাখীদের ন্যায় প্রতিযোগিতা মূলক ভাবে হাত পায়ের দীর্ঘ নখ পালন করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানের শ্লোগান হচ্ছে- ভাল ছেলে ভাল মেয়ে কারা? সময়মত নখ কাটে দাঁত মাজে যারা। নখ বড় হলে প্রথমতঃ দেখতে খারাপ লাগে শৌচ কার্যে সমস্যা, এতে সব সময় ময়লা জমে এবং এই ময়লা আমাশায় ডায়রিয়া কলেরা ও ক্রিমির জন্মস্থান হিসেবে বিবেচিত। খাদ্যের মাধ্যমে এই ময়লার সাথে রোগ জীবাণু পেটে প্রবেশ করে। ফলে পেটে নানাবিধ পীড়া হয়। সুস্থ্য থাকার প্রথম ও প্রধান সিড়ি হচ্ছে প্রতি মাসে প্রতি সপ্তাহে নখ কাটা, ক্ষৌরকার্য করা এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা থাকা। এটা মুসলমানদের ঈমানী অংশ।

সমজদার এক ইংরেজ লিখেন-
Early to bed
And early to rise.
Makes a man healthy,
wealthy and wise.

অর্থাৎ- সকাল সকাল শুয়ে যে- খুব ভোরেতে জাগে সে।
স্বাস্থ্য হবে সুস্থ্য রবে- সবার আগে ভাগে॥

এ কথাটির উপর অবশ্য মডার্ণ নর-নারীরা আমল দেয়া শুরু করেছে। শহর এলাকায় বিভিন্ন পার্কে, ফাঁকা জায়গা বা রাস্তায় সকাল ৬-৭টার দিকে পিটি সু, স্পোর্টস্ সু বা কেড্স পায়ে দিয়ে হাফপ্যান্ট হাফগেঞ্জি অথবা ট্র্যাক স্যুট পরে কিছুক্ষণ ঝুলুত ঝুলুত করে দৌড়ায় বা জগিং করে। মুক্ত নির্মল বাতাস সেবন করে। অথবা কেউ কেউ লোকাধারে দেহের নানা প্রকার কসরত প্রদর্শন করে আÍতৃপ্তি লাভ করে। সুস্থ্য থাকার, ভাল থাকার কত মেহনত করে।

প্রথম কিস্তি ‘বিজ্ঞানের আলোকে রাসূলুল্লাহর (সা.) সুন্নাত-১’ পড়তে এই লেখার উপর আলতো চাপ দিন

লেটেস্ট মডার্ণ যুগের নারী পাগল নর অথবা নর পাগল নারীরা ভোগ বিলাসের মধুর সকালকে কোরবানী করে রাস্তায় নামে। শুধুমাত্র সুস্থ্যতা অর্জন তথা সবল দেহ অর্জন  করে বেঁচে থাকার জন্য। অবশ্য এসব বিজ্ঞান সম্মত কথা। কিন্তু দেড় হাজার বছর আগে আল্লাহ্ পাক তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শিক্ষা দিলেন পাঁচ ওয়াক্ত নামায। আর জানিয়ে দিলেন যে এর মধ্যেই মানুষের কল্যাণ নিহিত। যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআতের সাথে তারতীবের সাথে আদায় করবে, ইশা’র নামাযের পর দুনিয়ার কাজে জড়িত না হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। আল্লাহর রহমতে কদাচিৎ সর্দি-জ্বর ব্যতীত আর কোন অসুখে পড়ার সম্ভাবনা নেই, একমাত্র মৃত্যুরোগ ব্যতীত।

অবশ্য অনেক সময় কোন কোন মুমিন ব্যক্তিকে তার গুনাহ্-খাতা হাল্কা করার জন্য অথবা আল্লাহর প্রতি বিশ্বস্ততা যাচাই করার জন্য আল্লাহ্ তায়ালা মাঝে মধ্যে রোগ-ব্যধি বা বিপদাপদ ইত্যাদি পেরেশানীতে ব্যস্ত রাখেন। সত্যি আল্লাহ্ পাক বান্দার প্রতি কত বড় মেহেরবান, বান্দা নাফরমান হওয়ার পরও অসংখ্য নিয়ামত সমূহ কেড়ে নেয় না।

মিস্ওয়াক করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদত সমূহের মধ্যে একটি। মিস্ওয়াক করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। ইহা মুসলমানী আদর্শ। মিস্ওয়াক মুখের পবিত্রতা আনয়ন করে এবং আল্লাহ্ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। আর শরীর, স্বাস্থ্য ও মন সুস্থ্য সবল ও সচেতন থাকার ব্যাসিক ব্যাজ। আর এগুলি আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রথম সোপান।

মিস্ওয়াকের গুরুত্ব মুসলমানদের নিকট অপরিসীম। মৃত্যুর মূহুর্ত পর্যন্ত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিস্ওয়াক করে তাঁর উম্মতের নিকট এর গুরুত্ব ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, কালক্রমে মুসলমানদের কাছে মিস্ওয়াকের গুরুত্ব হ্রাস পায় আর পর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এ ফাঁকে দাঁত পরিস্কার করার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করে বিজ্ঞান। অথচ দাঁত পরিস্কার করা ও রাখার তালিম ও তালক্বীন ইসলাম দেড় হাজার বছর পূর্বেই দিয়েছে। অনেক নাফরমান ব্যক্তির মুখে শোনা যায়- ইসলাম বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার প্রতিবন্ধক। খোদ ইসলামের দুশমন ছাড়া আর কেউ এ ধরনের মন্তব্য করতে পারে না।

প্রকৃতপক্ষে ইসলাম বিজ্ঞানের পূর্বসূরী। আজকে বিজ্ঞানের অবদানে মানবের যতটুকু কল্যাণ সাধিত হচ্ছে, এসব কিছুই ইসলাম থেকে ধার করা। পার্থক্য এতটুকু যে, এর উদ্ভাবক ইসলামের ঋণকে বেমালুম এড়িয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্বকে জাহির করেছে। এর প্রমাণে বিশুদ্ধ ইসলামের ইতিহাস এবং মুসলমান মনীষীদের আÍকাহিনী অধ্যয়ন করে দেখা যেতে পারে।

যা হোক, ইসলাম বিজ্ঞানের প্রতিবন্ধক নয় বরং ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই তো প্রায় শোনা যায় যে, যারা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে তাদের অনেককেই মুসলমান হতে। ইসলাম কবুল করে অন্য ধর্মের অসারতা প্রমাণ করতে। এটা অন্য লাইনের কথা, এদিকে গেলে আলোচ্য মূল বিষয়ের উপপাদ্য এড়িয়ে যায়। আজকের বিজ্ঞান মানুষের কল্যাণের জন্য যা কিছু সৃষ্টি করছে বা উপদেশ দিচ্ছে, তা কুরআন ও হাদীসে বহু পূর্বেই লিখিত হয়েছে। ইসলামী অনুশাসন পালন করতে শুরু করুণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরীকায় কায়েম থাকুন, দেখবেন বিজ্ঞানের সমস্ত কল্যাণ এমনিতেই ভোগ করতে পারা যাবে।

মিস্ওয়াকের ব্যাপারে গুরু নানক বলেন- হয় এই লাকড়ী গ্রহণ কর, নতুবা রোগকে বরণ কর। আহ্ কত সুন্দর মন্তব্য। মিস্ওয়াকের সকল গুণাগুণ বিজ্ঞানের আলোকে এক কথায় সুন্দর বহিঃপ্রকাশ। তিনি নিজেও মিস্ওয়াক করতেন এবং এই মিস্ওয়াক সর্বদা হাতে রাখতেন। প্রকৃতপক্ষে যে সময় হতে মানুষ মিস্ওয়াক করা ছেড়ে দিয়েছে আর তখন থেকেই ডেন্টাল বিভাগ এবং সার্জনের প্রয়োজনীতা দেখা দিয়েছে। অসংখ্য ঘটনায় দেখা গেছে ডেন্টাল সার্জন যেখানে অপারগ হয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে ভরাডুবি দিয়েছে, সেখানে এক খন্ড পিলু বৃক্ষের ডালই অনায়াসে সে দন্তরোগকে মুক্ত করে মানবকে সুস্থ্যতা দান করেছে।

দাঁতের পাইওরিয়ার ক্ষেত্রে কানীর নামক বৃক্ষের ডাল দিয়ে মিস্ওয়াক করলে গ্যারান্টির সাথে আরোগ্যের নিশ্চয়তা দেয়া যেতে পারে। এ কথাটিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে বলা যায়- পিলু, কানী, নিম ও বাবলার মিস্ওয়াক দ্বারা প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আগে পাঁচবার এবং ঘুমাতে যাবার আগে একবার মিস্ওয়াক করলে দাঁতের, মুখের, পাকস্থলী, চোখ, কান, গলা ও মস্তিষ্কের সকল প্রকার রোগ-ব্যধির ঝামেলা হতে মুক্ত থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করা যেতে পারে, ইনশাআল্লাহ।

এছাড়া নিয়মিত মিস্ওয়াক করলে দাঁত ও মুখ পরিস্কার থাকে, দাঁত উজ্জল দেখায়, মুখের অস্বাদন শক্তি ফিরে আসে বা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। মুখের দুর্গন্ধ দর হয়- শরীর ও মন সতেজ ও সজীব হয়। এত সুন্দর ব্যবস্থাকে মানুষ আধুনিকতার ধুয়া তুলে মিসওয়াককে ত্যাগ করে নানা মডেলের নানা ভঙ্গিমায় দামি সস্তা ব্রাশ দিয়ে বিজ্ঞাপন সমৃদ্ধ রংগের জেল পেষ্ট লাগিয়ে দাঁত মাঝে। আর মাঝে মধ্যেই দাঁতের, মুখের, গলার, কানের, চোখের, ব্রেনের, হার্টের সমস্যায় গাদা গাদা টাকা ঢালছে। আর বাড়তি পুরস্কার হিসাবে নাপাক, হারাম এবং ঘৃণিত বস্তু মুখের মধ্যে ভরে অহংকার প্রকাশ করছে। না অবাক হওয়ার কিছুই নাই। বিষয়টা একটু খোলাসাই করছি। পেষ্টকে জমানোর জন্য জেল নামক এক প্রকার পদার্থ ব্যবহার করা হয়। জেল তৈরী করা হয় পশুর চামড়ার নির্জাস থেকে। আর এই জেল আমদানী করা হয়- ভারত, চীন, সিঙ্গাপুর, আমেরিকা, জাপান থেকে।

এখানে একটু দেমাগ খাটিয়ে বের করুন, জেল মিশ্রিত পেস্ট মুসলমানের জন্য হারাম কিনা? আর ব্রাশ? সেটাতো একটি রোগ জীবাণুর স্কেল। যা ব্যক্তি বিশেষে উঠানামা করেই। বিশ্বাস না হলে আপনার টুথ ব্রাশটি পরীক্ষাগারে টেষ্ট করুন- নিশ্চয়ই দেখবেন সেখানে অসংখ্য জীবাণু কিলবিল করছে। হ্যাঁ সুধী পাঠক, ব্যাপারটি সত্যই। একটি ব্রাশ প্রথম বার ব্যবহার করার পর সেখানে দাঁত ও মুখের জীবাণু লেগে যায়। যা ভাল করে ধুলেও পরিস্কার হয় না। চাই ফুটন্ত গরম পানি। আমরা কি নিজ ব্রাশ পানিতে ফুটিয়ে জীবাণু মুক্ত করি? না করি না। তাহলে? কিন্তু মিস্ওয়াক ব্যবহার করলে এসব ঝুট ঝামেলার ল্যাটা থাকে না। কেননা মিস্ওয়াক প্রতিবার ব্যবহার করার সময় এর অগ্রভাগ কেটে বা চিবিয়ে ফেলে দেয়া হয়।

তাই আসুন আমরা সকলেই মুসলিম ভাই- আমাদের মাঝে কোন সমস্যা নাই। নবীর তরীকা ধরি- সুখের জীবন গড়ি। আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে সে তাওফীক দান করুন। আমীন।

লেখক: প্রকাশক- উম্মাহ ২৪ ডটকম, সিইও- এম.জেড. ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক- আল-বাশার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, পুরানা পল্টন, ঢাকা।

‘বিজ্ঞানের আলোকে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর সুন্নাত’-এর প্রথম কিস্তি পড়ুন