Home সাক্ষাৎকার হাটহাজারী ইজতেমায় আগত বিদেশী মেহমানদের একান্ত সাক্ষাৎকার

হাটহাজারী ইজতেমায় আগত বিদেশী মেহমানদের একান্ত সাক্ষাৎকার

।।জিয়া চৌধুরী (ইজতেমা ময়দান থেকে) ।।

হাটহাজারী উপজেলার চারিয়া গ্রামে তিনদিন ব্যাপী আঞ্চলিক চট্টগ্রাম জেলা ইজতেমায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার মুসল্লিরা ছাড়াও আছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রায় ১৮০ জন বিদেশী মেহমান। আল্লাহর রাস্তায় সময় দিতে নিজ দেশ ছেড়ে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা হাটহাজারীতে চলমান ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন তারা। ইজতেমার মূল প্যান্ডেলের উত্তর পশ্চিম কর্ণারে বিদেশী মেহমানদের জন্য আলাদাভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে বসেই তারা ইজতেমার বয়ান শুনছেন। থাকা খাওয়া এবং ইবাদাতের মধ্যেই সময় কাটাচ্ছেন তারা। যোহরের নামাযের পর বয়ান শেষে খাওয়া দাওয়ার বিরতি থাকে।

ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে ইজতেমা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বিদেশী মেহমানদের তাবুতে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের খাবার খেয়ে অনেকেই ঘুমাচ্ছেন। কেউ কেউ আসরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কেউ কোরআন তেলাওয়াত ও নফল নামাজ পড়ছেন।

মার্কিন নাগরিক মোহাম্মদ আলী (৪০)। উনার সাথে কথা বলতে চাইলে উনি জানান সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে হলে আমীরের অনুমতি লাগবে। বিদেশী মেহমানরা ছোট ছোট জামাতে ভাগ হয়ে আছেন। প্রতিটি জামাতেরই একজন আমীর আছেন। উনি নিজেই নিয়ে গেলেন উনাদের আমীরের কাছে।

আমীরের নাম মোহাম্মদ নুমান (২৯)। আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের বাফেলো এলাকার বাসিন্দা। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। মোহাম্মদ নুমান হাটহাজারী টাইমসকে জানালেন, তাবলীগের কাজে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন। তৃতীয়বারের মত এসেছেন বাংলাদেশে। তবে চট্টগ্রামে তিনি এই প্রথমবারের মত সফর করছেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতেই তিনি তাবলীগের পথে বের হয়েছেন বলে জানালেন।

তিনি আরো জানান, নিজ এলাকায় তিনি লোকজনকে নিয়মিত দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তার সাথে নিউইয়র্কের তার প্রতিবেশিরাও তাবলীগের পথে বের হবেন- এমন প্রতাশ্যাই তিনি করেন। নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে মিস্টার নুমান বলেন, নিউইয়র্কে মানুষ ধর্ম পালন এবং ধর্মপ্রচারে পুরোপুরি স্বাধীনতা ভোগ করে। মুসলমানরা চাইলে যে কোথাও দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে পারেন। কোন বাঁধা দেয়া হয় না কাউকে। জনাব নুমানের সাথে আরো ২০ জন মার্কিন নাগরিক চট্টগ্রামের ইজতেমায় আছেন বলে তিনি জানান।

কাজাখ নাগরিক মাওলানা আবু সালাম (২৭)। কাজাখস্তান-এর আকতুবি শহরের খোরমতাও এলাকার বাসিন্দা তিনি। ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। রাজধানীর কাকরাইল মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছেন। পাশাপাশি আল্লাহর রাস্তায় নিয়মিত চিল্লায় বের হন। টঙ্গী ইজতেমায় অংশগ্রহণ শেষে চলে এসেছেন চট্টগ্রামের ইজতেমায়। তাঁর সাথে ইংরেজীতে কথা বলতে গিয়ে চমকে উঠতে হল।

বললেন, বাংলায় বলুন সমস্যা নাই। কাকরাইল মাদ্রাসায় পড়ালেখারা পাশাপাশি বাংলা ভাষাও মোটামুটি শিখেছেন তিনি। মাওলানা আবু সালাম জানান, নিজের জিন্দেগি পরিবর্তন করে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করাটাই তার লক্ষ্য। কীভাবে মুসলমানরা জান্নাতে যাবেন, কীভাবে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবেন, এই পথ খোঁজাটাই তো মুসলমানদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

নিজ দেশ কাজাখস্তানে গিয়ে তিনি একটা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে চান এবং আরো বেশি বেশি দ্বীনের কাজে সময় দিতে চান।

জানালেন বাংলাদেশ তার খুব ভাল লেগেছে। ছবি তুলতে চাইলে উনি অনিহা প্রকাশ করেন। জানালেন একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ছবি তোলার ব্যাপারে শরয়ী হুকুম নেই।

বিদেশী মেহমানদের জিম্মাদার হিসেবে আছেন একজন বাংলাদেশি আলেম। তিনি জানান, এবারের চট্টগ্রাম জেলা ইজতেমায় প্রায় ১৮০ জন বিদেশি মেহমান রয়েছেন। তারা পাশ্বর্বতী দেশ ভারত, বার্মাসহ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, লেবানন, জর্দান, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, আজারবাইজান, থাইল্যান্ড, চীন, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। ইজতেমা শেষে অনেকেই বিভিন্ন এলাকায় চিল্লায় বের হবেন। অনেকেই ফিরে যাবেন নিজ নিজে দেশে। #