Home ওপিনিয়ন গণতন্ত্রহীন পরিবেশে তরুণদের আত্মহত্যা বাড়ে

গণতন্ত্রহীন পরিবেশে তরুণদের আত্মহত্যা বাড়ে

।। আলতাফ পারভেজ ।।

আজকাল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেই একরাশ অভাব-অভিযোগের কথা শুনতে হয়।

গণতান্ত্রিক আবহ না থাকা এবং ইউনিয়ন না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা বসবাস ও অধ্যয়ন-অনুশীলনের জন্য ন্যূনতম জরুরি সুবিধাগলো থেকে বঞ্চিত। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীদের থাকার জায়গার সংকট, স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের সুবিধা নেই, বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যায় না, বিনোদনের কিছু নেই, ভালো পরিবহন নেই, লাইব্রেরি নেই, গবেষণা তহবিল নেই, গুণগতভাবে উন্নত শিক্ষা নেই, কবে পরীক্ষা হবে আর কবে ফল পাওয়া যাবে সেসব নিয়েও অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়। শিক্ষকরা অন্যায় করলে কথা বলা যায় না। কর্মচারিদের অবহেলায় চুপ থাকতে হয়।

প্রথম পর্ব পড়ুন- ‘প্রশ্ন তোলা ও উত্তর খোঁজার চেষ্টাকে কেন টার্গেট করা হয়’

অথচ টিউশন ফি বাড়ছে ক্রমাগত। সঙ্গে, ভর্তিকালীন বিস্তর আয় আছে। নৈশকালীন কোর্সের ব্যবসা চলছে। উপরন্তু সরকারের তরফ থেকে শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হচ্ছে। ক্যাম্পাসে নতুন নতুন ভবন উঠছে।

জনগণের করের টাকাতেই এসব হয়। শিক্ষার্থীদের দেখিয়েই শিক্ষাখাতের যাবতীয় ব্যয় বৃদ্ধি। কিন্তু শিক্ষার্থীরা অসন্তুষ্ট। তারা অসুখী। তারা বঞ্চিত। অনেক স্থানে তারা যৌন হয়রানি ও নিরাপত্তাহীনতারও শিকার। সন্ধ্যা হলে হলগুলোতে ক্যাডারদের সামনে হাজিরা দিতে হয়। মিছিলে খাটতে যেতে হয় দিনের বেলায়। এই অসন্তোষ ও অসুখী জীবনের কথা, নিরাপত্তাহীনতা ও বঞ্চনার কথা প্রকাশের নিয়মতান্ত্রিক সুযোগ রাখা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে এটা ‘রাজনীতি’। এটা নিষিদ্ধ থাকবে।

দেশজুড়ে সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমবেশি একই রকম দৃশ্য এখন। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ছাড়াই ছাত্রদের অধিকারভাবনাকে ‘রাজনীতি’র তকমা দিয়ে নিষিদ্ধ করে রেখেছে। এর ফল এত ভয়াবহ যে, মাঝে মাঝেই শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা করতে দেখছি আমরা। কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৫ বছরে প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এটা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র-ছাত্রী সংসদ না থাকার কাল। কেবল ২০১৮ সালে এখানে সাতজন পড়–য়া নিজেকে নিজে হত্যা করেছে।

দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন- ‘ছাত্ররা উপলক্ষ্য, দীর্ঘমেয়াদে লক্ষ্য কিন্তু সবাই’

এসব মৃত্যুর কারণ কেউ খোঁজেনি। এই মেধাবীদের নিশ্চয়ই কিছু বলার ছিল। কিন্তু তাদের সতীর্থরা কার কাছে জবাবদিহিতা চাইবে? এরকম জবাবদিহিতা চাওয়াও যে ‘রাজনীতি’!

ইউনিয়ন ও গণতন্ত্রহীন পরিবেশে শিক্ষার্থীরা কীভাবে আছে– আত্মহত্যার ঘটনাবলী অবশ্যই তার বড় এক মানদন্ড। অনুসন্ধান হলে হয়তো দেখা যেতো, এসব আত্মহত্যা একধরনের পদ্ধতিগত হত্যা মাত্র। কিন্তু এখন, চারিদিকের চলতি প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানের পর প্রতিষ্ঠানে যদি কথাবার্তা বলায় নিষেধাজ্ঞা নেমে আসে তাহলে শিক্ষার্থীদের আত্মহননের প্রবণতা আরও বাড়বে বৈকি।

যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জনগণের অর্থে চলছে, যেহেতু মেধাবী প্রজন্ম একটা দেশের ভবিষ্যতের জন্য বড় ভরসার ধন– সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে জনগণের সন্তানরা কীভাবে থাকবে ও কেন আত্মহত্যা করছে সেই বিষয়টি কেবল বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনাকারী গুটিকয়েকের বিষয় হয়ে থাকতে পারে না। এ নিয়ে বৃহত্তর পরিসরে আলাপ-আলোচনা-পর্যালোচনার অবকাশ রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা যদি দেশের ভবিষ্যত হয়– তাহলে তাদের আত্মহত্যার পরিবেশ থেকে বাঁচাতেই হবে। হাজার হাজার তরুণ-তরুণীকে আত্মহত্যা কিংবা বিষন্নতার দিকে ঠেলে দেয়া কোন বিকল্প হতে পারে না। বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল ভয়মুক্ত পরিবেশে একটা নতুন প্রজন্মের আত্মপ্রকাশের জন্য– সেই প্রথম সত্য এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। [শেষ]

তৃতীয় পর্ব পড়ুন- ‘রাজনীতিমুক্ত’ শিক্ষাঙ্গনগুলোর মান বেড়েছে কী?