Home ইসলাম রমযান মু’মিনের জন্য কী প্রতিফল বয়ে আনে?

রমযান মু’মিনের জন্য কী প্রতিফল বয়ে আনে?

ছবি- উম্মাহ।

।। আলহাজ্ব সৈয়দ জহির উদ্দীন ।।

[পূর্ব প্রকাশিতের পর]

মাহে রমযানের একটি নফল ইবাদত অন্য সময়ের একটি ফরয ইবাদতের সমতুল্য। রমযানের একটি ফরয ইবাদত অন্য মাসের সত্তরটি ফরয ইবাদতের সমতুল্য।

যারা রমযানের প্রথম দশকেই সকল পাপ ছেড়ে দিয়ে ইবাদতে লিপ্ত হয়, তাদের জন্য প্রথম দশক থেকেই রহমত নাযিল শুরু হয়ে যায়। যারা দ্বিতীয় দশকেও এ মহান কাজটি সাধন করতে পারে, তাদের জন্য দ্বিতীয় দশক থেকে মাগফিরাত শুরু হয়। আর শেষ দশকের ভিতরেও পাপ বর্জন এবং ইবাদতে যারা লিপ্ত হতে পারে, তাদের জন্য শেষ দশকেই জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দেয়া হয়।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন জুমার দিন কারো শান্তির সাথে অতিবাহিত হয়, তখন বুঝে নিবে সপ্তাহের অবশিষ্ট দিনগুলোতেও সে শান্তির সাথে থাকবে। আর যখন রমযান মাস কারো শান্তির সাথে অতিবাহিত হয়, তখন বুঝে নিবে, সামনের রমযান পর্যন্ত পূর্ণ বৎসরই তার শান্তির সাথে অতিবাহিত হবে”।

যে ব্যক্তি এ পবিত্র মাসে কোন নফল কাজ করবে, তাকে অন্য মাসে কৃত একটি ফরযের সমান সাওয়াব দান করা হবে। আর যে ব্যক্তি মাসে একটি ফরয আদায় করবে, তাকে অন্য মাসের সত্তরটি ফরয আদায়ের সাওয়াব দান করা হবে। এ মাসে যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করাবে, তা তার গুনাহ্ মাফের উপায় হবে। আর দোযখের আগুন থেকে রেহায় পাবার উসীলা হয়ে যাবে। আর ঐ ইফতার দানকারীকে রোযাদারের সমান সাওয়াব দান করা হবে।

লেখার প্রথম অংশ পড়ুন- ‘মাহে রমযান ও সিয়াম সাধনা’

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি রোযাদারকে পেট ভরে খানা খাওয়াবে, তাকে আল্লাহ্ তাআলা আমার হাউজে কাউসার থেকে এমনভাবে পানি পান করাবেন যে, সে জান্নাতে প্রবেশের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত বোধ করবে না। যে ব্যক্তি রমযান মাসে রোযাদার চাকর-চাকরানীদের দ্বারা কাজকর্ম করাবে না, বা তুলনা মূলকভাবে কাজ কম করাবে, আল্লাহ্ তাআলা তার গুনাহ্ সমূহ মাফ করে দিবেন এবং দোযখ থেকে মুক্তি দেবেন”।

তিনি আরো বলেন, “যে ঈমানদার ব্যক্তি রমযান মাসের রাত্রে (তারাবিহ) নামায পড়বে, আল্লাহ্ পাক তার প্রতিটি সিজদার বিনিময়ে দেড় হাজার নেকী প্রদান করবেন”।

রোযা কিঃ

ইসলামের পঞ্চ-স্তম্ভের একটি হচ্ছে রমযান মাসের রোযা পালন করা। তাই রোযা একটি ইবাদত। রোযা তাক্বওয়া অর্জনের মাধ্যম। তাই আল্লাহ্ তাআলা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রমাযান মাসের রোযা ফরয করা হল। যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য ফরয করা হয়েছিল, যেন তোমরা তাক্বওয়া অর্জন করতে পার”।

দৈহিক চাহিদা পূরণের অবাধ প্রবৃত্তি দমনের প্রশিক্ষণ হচ্ছে রোযা। আল্লাহর বিধান (বা ইবাদতের উদ্দেশ্যে সাহরী থেকে ইফতার পর্যন্ত পুরো সময়টুকু জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের উপভোগ থেকে বিরত থাকাই) হচ্ছে রোযা। পরকালীন সুখ-শান্তির উপকরণ সংগ্রহের নিমিত্তে আয়োজিত বাৎসরিক একটি বিরাট বাণিজ্য মেলা। রোযা বান্দার জন্য সুপারিশকারী। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “রোযা ও কুরআন উভয়ই বান্দার সুপারিশকারী।

শরীয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়্যাত করে কোন কিছু পানাহার, যৌনক্রিয়াসহ (আল্লাহ্ রাসূল কর্তৃক) নিষিদ্ধ যাবতীয় কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নাম রোযা। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন মানব জীবনের অত্মশুদ্ধি ও সংযম সাধনার যে পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন, সেটাই কুরআনের ভাষায় সিয়াম বা রোযা।

মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে নিরলস প্রচেষ্টা চালানোর জন্য বান্দার ইহলৌকিক জীবনে তাক্বওয়া ভিত্তিক মানবীয় গুণাবলী অর্জনের লক্ষ্যে একটি মহান কর্মসূচীর নাম রোযা। তাক্বওয়া ভিত্তিক জীবন গঠনের সর্বোত্তম একটি পথের নাম রোযা। রোযা জাহান্নাম থেকে রক্ষাকারী। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “সিয়াম (বা রোযা) হচ্ছে ঢাল স্বরূপ।”

রোযা কেন পালনীয়ঃ

পরকালীন জীবনে উত্তম প্রতিদান অর্জনের জন্য রোযা পালনীয়। রোযা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য এবং জীবিকা বর্ধিত করণের জন্যই রোযা। বিবিধ ইবাদত পালনে এবং যাবতীয় পাপ কর্ম থেকে বিমুখ থাকার পথ সহজতর হবার জন্য রোযা। তাক্বওয়া অর্জনের জন্য, প্রবৃত্তি দমনের জন্য, অত্মার ক্ষুধা নিবারণের জন্য রোযা। রোযা সংযম অধ্যাবসায়ের জন্য।

আল্লাহ্ তাআলা ইরশাদ করেন, “রমযানের রোযা তোমাদের জন্য ফরয করা হল, যেন তোমরা সংযম অবলম্বন করতে পার”। মাগফেরাত রহমত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে জান্নাত লাভের জন্যই রোযা।

রোযা পরজগতের উন্নতি অগ্রগতি ও সুখ-শান্তির উপায় উপকরণ ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য। বান্দার গুনাহ্ মাফে সুপারিশ লাভের জন্য রোযা। মানবদেহের হজমযন্ত্র ও পাকস্থলীকে সর্বদা কর্মে লিপ্ত রাখা থেকে বিরতি দান করার জন্য রোযা।

রোযা শরীরের শক্তি যোগানোর জন্য, নানা ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে, ধুমপান কারীকে ধুমপান থেকে রক্ষার জন্য, অত্মাকে সুস্থ করার জন্য এবং অভুক্ত ও অভাবী মানুষের পীড়া বা দুঃখবোধ অনুভবের জন্যেই রোযা। #

লেখক: প্রকাশক- উম্মাহ ২৪ ডটকম, সিইও- এম.জেড. ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক- আল-বাশার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, পুরানা পল্টন, ঢাকা।

আরও পড়তে পারেন-

যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করে গেছেন

ভাইরাস ও ভ্যাকসিন ব্যবসা: এখনি সোচ্চার হওয়ার সময়

গুনাহর ক্ষতি এবং বেঁচে থাকার উপায়

ঢাকার প্রায় অর্ধেক মানুষ বিষণ্ণতায় ভূগছে, সমাধান কী?

মহানবী (সা.)এর মহিয়সী সহধর্মীনীগণ