Home ওপিনিয়ন শরীয়তের আলোকে মহামারি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা (২)

শরীয়তের আলোকে মহামারি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা (২)

- উম্মাহ গ্রাফিক্স।

।। শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক ।।

[পূর্ব প্রকাশিতের পর]

ইসলামধর্ম মতে সংক্রমণের ফলে রোগব্যাধির বিস্তার হওয়ার আক্বিদা পোষণ করা ভুল ও অবাস্তবও বটে। কারণ অদ্যাবধি কেউ দেখেনি যে, একজন থেকে অপর জনের কাছে রোগ যাচ্ছে। কুরআন-হাদিসেও নেই যে, রোগীর কাছে গেলে রোগের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়, বরং রোগীর সেবা-শুশ্রুষা ও খেদমত করা সওয়াব ও পূণ্যের কাজ বলা হয়েছে।

বর্তমানে করোনায় যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, সবই করোনার আসমানী প্লানের আওতাভুক্ত বলেই এমনটি হচ্ছে, সংক্রমণের কারণে নয় । সংক্রমণ বা ছোঁয়াছে রোগ জাহিলি যুগের আক্বিদা বিশ্বাস এবং এটা বিভ্রান্তিকর ও পরিত্যাজ্য।

সংক্রমণ ধারণার বস্তুনিষ্ঠতা নিয়ে যেসব প্রশ্নের উত্তর মিলেনি

১. রাসূল (সা.)এর কাছে এসে এক সাহাবী (রাযি.) বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এক অসুস্থ উট এসে আমার সমস্ত উটগুলোকে আক্রান্ত করে দিয়েছে। তার উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে প্রথম উটকে কে আক্রান্ত করেছিল?

২. মহামারীর কারণ যদি সংক্রমণ হতো? তাহলে এক অসুস্থ লোকের কারণে তার ঘর, তার বাড়ী, তার গ্রাম অতঃপর তার এই অঞ্চলের সমস্ত লোক আক্রান্ত হওয়ার কথা ছিল। অথচ দেখা যায়, এই করোনায় হাজার হাজার পরিবারে একেক জন আক্রান্ত হয়েছেন, আর পরিবারের বাকি সবাই সুস্থই রয়ে গেছেন।

আরও পড়তে পারেন-

আজকে আল্লাহর রহম ছাড়া পরিত্রাণের কোন উপায় নেই!

যুগে যুগে মহামারীর ইতিকথা

‘ইবাদুর রাহমান’ বা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বিশেষ ১২টি গুণ

কোভিড-১৯ মহামারী এবং ইসলামের শিক্ষা: ফরহাদ মজহার

‘আমাদেরকে যুদ্ধের চেয়ে অনেক বড় কর্মযজ্ঞে নামতে হবে’

৩. চায়না থেকে ইতালিতে করোনা চলে গেল? অথচ চায়নার সাথে লাগোয়া থাইল্যান্ড, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়িশিয়া প্রমুখ দেশের সাথে চাইনিজদের যাওয়া আসা ও সম্পর্ক অনেক বেশি। করোনা যদি সংক্রমণের কারণেই হতো, তাহলে এই দেশগুলোতে করোনার আক্রমণ খুবই তীব্রতর হওয়ার কথা।

৪. সংক্রমণই যদি করোনা বিস্তারের কারণ হতো, তাহলে লকডাউনের আওতাভুক্ত নিরাপদ থাকা মানুষগুলো আক্রান্ত হচ্ছে কেন?

৫. সংক্রমণই যদি করোনার কারণ হতো, তাহলে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষের ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল এবং তুলনামূলক বিশৃঙ্খল ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় অনিরাপদ স্বাস্থ্য সুরক্ষিত অঞ্চল। এই অঞ্চলে করোনার আক্রমণ বেশি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা-না-হয়ে ইউরোপে লোক সংখ্যা কম এবং তারা অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষিত পন্থায় চলাচল করেন। এতদ সত্ত্বেও সেখানে করোনায় আক্রান্ত বেশি কেন?

৬. সংক্রমণ যদি করোনায় আক্রান্তের সংস্পর্শতার কারণে হতো, তাহলে বাংলাদেশের একেক জেলায় একজন, দুইজন, পাঁচজন আক্রান্ত হলো, বাকি সমস্ত লোকজন করোনার থাবা থেকে নিরাপদ থাকল। যারা আক্রান্ত হল, তারা রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগে থেকেই তো আক্রান্ত ছিল এবং পরিবারে ও বাজার-ঘাটে চলাচল অব্যাহত রেখেছিল। সংক্রমণেই যদি রোগ ছড়াতো, তাতে কার্যকর হলো না কেন? তাদের পরিবার ও এলাকার অন্যদের মধ্যে তো এটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কথা।

এতেই প্রমাণ করে যে, সংক্রমণ একটা গুজব ও অবাস্তব শ্লোগান। বরং করোনা আল্লাহর পক্ষ হতে এক গজব, যতজন তাঁর এই করোনা প্লানে আক্রান্ত হওয়ার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে, তারাই আক্রান্ত হবে অন্যরা নিরাপদ থাকবে, ইনশাল্লাহ।

তাই মসজিদ খোলা রেখে পাঞ্জেগানা নামাজ, জুমা ও তারাবিতে অংশ নেওয়া এবং জিকর, তিলাওয়াত ও দোয়ারত থাকা এই গজব থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায়। আল্লাহ বিশ্বের সকলকে করোনাভাইরাসের মহামারির গজব থেকে হেফাজত করুক। আমিন।

প্রকাশ থাকে যে, ইসলামী শরীয়ত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলায় বা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জীবন যাপনে কোনরূপ বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। তাছাড়া সমাজের অমুসলিম ও অপরাপর যারা সংক্রমণের কারণে মহামারি রোগের বিস্তারে বিশ্বাসী তাদের জন্য যেন কোনরূপ অস্বস্তির কারণ না হয়, অন্য সাধারণ মুসলমানদের কারো ঈমানে যাতে দুর্বলতা না আসে, নির্বোধদের কারণে সামাজিক শৃঙ্খলায় যাতে কোন ব্যাঘাত তৈরি না হয়, এ জন্য মহামারিকালীন সময়ে নিজের এলাকা ত্যাগ, আক্রান্ত এলাকায় গমনাগমন বা সেখান থেকে পালিয়ে আসতে নিষেধ করেছে। তবে মহামারিতে কেউ অক্রান্ত বা কারো মৃত্যু হলে এটাকে অন্যের কাছ থেকে সংক্রমিত হয়ে নয়, বরং এটাকে তাক্বদীর বা আসমানী ফায়সালা হিসেবেই প্রতিটি মুসলমানকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে। [চলবে]

— আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক, প্রখ্যাত আলেমে-দ্বীন, ভূগোল-বিশারদ, সহসভাপতি- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এবং শায়খুল হাদীস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা-ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম: আরএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

প্রথম পর্ব পড়ুন- ‘শরীয়তের আলোকে মহামারি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু কথা’