Home শিক্ষা ও সাহিত্য কবিতার কথা (২)

কবিতার কথা (২)

।। মালেকা ফেরদৌস ।।

[পূর্ব প্রকাশিতের পর]

অনেকে মনে করেন কবিতা কোন শিল্প নয়- নিছক অনুপ্রেরণা মাত্র। আবার অনেকে কাব্য সৃষ্টিকে প্রার্থনা- মুহূর্তের নিবেদিত চিত্ততার সাথে তুলনা করেন।

কবি কীটস বলেন- “আমি ক্ষণকালও কবিতা ছাড়া বাঁচতে পারি না- অর্ধদিনও নয়, সম্পূর্ণ দিনতো নয়ই।”

কথাগুলো ভীষণ সুন্দর, কিন্তু স্বপ্নের মত অস্বচ্ছ । সৃষ্টি প্রেরণার নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা করা চলে না। এ প্রেরণা চিরদিনই রহস্য- সংসক্ত। স্বপ্নের মত অনির্ণিত ও অস্পষ্ট ।

একজন কবি পৃথিবীর কাজ ও প্রয়োজনের কলরবে সাধারণত: কখনো বিভ্রান্ত হন না। তিনি অবলোকন করেন, প্রকৃতিকে দেখেন, প্রত্যহ নানা গুঞ্জন- পাখির কলরব শোনেন, আকাশ দেখেন। এ দেখাটাই কবির সৃজন ক্ষমতাকে বাঁচিয়ে রাখে। কবির এই একান্ত অনুভুতি কখনো বিমর্ষ হয় না।

শব্দ, চিত্রকল্প, রূপক, তথ্য ও বাণীবিন্যাস কবিতার প্রাণ। কবি মালার্মকে তার এক চিত্রকর বন্ধু প্রশ্ন করেছিলেন- “তোমার মধ্যে ভাবের ভীষণ পীড়ন, কিন্তু কবিতা লিখতে পারো না কেন?”

মার্লাম বললেন- “one does not write a poem withideas.one writes it with good words”. (নান্দনিক ঐশ্বর্যে কবিতার রূপদান করতে হলে সুন্দর শব্দ ও বাণী-বিন্যাস চাই)।

শক্তিশালী একজন কবির হাতে এক একটি শব্দ হয়ে ওঠে বজ্রের মতো, আলোর মত উজ্জল, সমুদ্রের মত অতলান্ত গভীর।

মালেকা ফেরদৌসের আরো কবিতা পড়তে পারেন-

‘প্রার্থনা’

‘শিরোনামহীন’

আমার বাবা

কড়া নাড়ে কেউ

মায়ের জন্য…


এককালে আর্য ঋষিরা স্রষ্টার কাছে শৈল্পিক শব্দ এবং ওজস্বী আবেদনে ঋদ্ধ উচ্চারণে প্রার্থনা করতেন। যেন তার প্রার্থনা স্রষ্টার কাছে পৌঁছে। শক্তিশালী কবির ভাব কখনো জরাগ্রস্ত
হয় না। ঠিক পৌরাণিক ফিনিক্স পাখির মতো।

কবিতার ভাষা চিত্তবৃত্তির প্রসার বিকাশের ক্ষেত্রেই সক্রিয়। আলোচনার সুবিধার জন্য কয়েকটি লাইনের উদ্ধৃতি দিলাম-”

“সারাদিন অশান্ত বাতাস ফেলিতেছে মর্মর নিঃশ্বাস”

“ শুষ্ক তৃণ গন্ধ বহি ধেয়ে আসে ছুটে তপ্ত সমীরণ”

“লব্ধ ক্ষুব্ধ হিংস্র বারী রাশি প্রশান্ত সূর্যাস্ত পানে উঠিছে উচ্ছ্বাসি ”

“আমারই চেতনার রঙে পান্না হ’ল সবুজ চুনি উঠলো রাঙা হয়ে”

চিত্তবৃত্তি বিকাশের সাথে লাইনগুলো হৃদয়ের আবেগকে উচ্ছ্বসিত করেছে, প্রাণবন্ত বাস্তবকে প্রতিভাসিত করেছে। অনুভুতি ও আবেগের এই যে স্বতঃবেদ্য স্বাভাবিকতা, শব্দ ব্যবহারের নিপুণতা; একেই আমরা কাব্য প্রকাশ বলি। বস্তুর বাঙ্ময় ছবি ফুটে ওঠে। এ ছবি কবির বোধের। কবিতায় এ বোধ, অনুভুতি কল্পনার সাথে বিজড়িত। কবিরা প্রয়োজনবোধে রূপক ও উৎপ্রেক্ষা ব্যবহার করেন। এতে কবিতা ভাষায় জীবন্ত ও বাস্তব হয়ে ওঠে।

সার্থক কবিদের কল্পনার ব্যাপ্তি অসাধারণ, জীবন চেতনাও অসীম পরিসরের। তারা স্পর্ধিত নিঃশঙ্ক চারণ। [চলবে]

– মালেকা ফেরদৌস, কবি, শিক্ষাবিদ ও সমাজচিন্তক।

আরো পড়তে পারেন- ‘কবিতার কথা (১)’