Home ইসলাম পিতা-মাতার অবাধ্য ও কষ্টদানকারী সন্তানের ইবাদত কবুল হয় না

পিতা-মাতার অবাধ্য ও কষ্টদানকারী সন্তানের ইবাদত কবুল হয় না

।। আলহাজ্ব সৈয়দ জহির উদ্দীন ।।

দুনিয়াতেই যারা সন্তানের জন্য জান্নাত ও জাহান্নাম তারা হলেন পিতা-মাতা।পিতা-মাতার পায়ের তলাতেই সন্তানের বেহশত। যারা দুনিয়াতে পিতা-মাতাকে সন্তুষ্ট করতে পেরেছে; দুনিয়া ও পরকাল সফলতার তাদের জন্য। আর যারা দুনিয়াতে পিতা-মাতার সন্তুষ্টি অর্জনে ব্যর্থ তাদের দুনিয়া ও পরকাল উভয়টিই ব্যর্থ।

পৃথিবীতে যত মানুষ আছে তাদের মধ্যে যাদেরকে আমার সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া উচিত তারা হলেন পিতা-মাতা। তাঁদের চেয়ে বেশি সম্মান জীবিত কোন মানুষ আমার থেকে পাওয়ার হকদার নন।স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ-রাব্বুল আ’লামীন পিতা-মাতাকে এই সম্মান প্রদান করেছেন।পিতা-মাতার অবাধ্য হয়ে লোক-সমাজে বড় বুজুর্গ হিসেবে পরিচিত হলেও কোন লাভ হবে না; কারণ পিতা-মাতার অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞ সন্তানের কোন ইবাদতই আল্লাহ কবুল করেন না।

পিতা-মাতার মর্যাদা সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন নির্দেশ প্রদান করে বলেছেন- ‘আমার কৃতজ্ঞতা এবং তোমার পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় কর। ’ -সূরা লোকমান : ১৪

‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়ে উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলেও আদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলো না। এবং তাদেরকে ভর্র্ৎসনা করো না; তাদের সাথে কথা বলো সম্মানসূচক নম্র কথা। ’ (সূরা বনি ইসরাঈল- ২৩)।

আরও পড়তে পারেন-

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) বর্ণনা করেন প্রিয়নবি বলেছেন, ‘জান্নাতের হাওয়া পাঁচশত বছরের পথ অতিক্রম করে আসে। কিন্তু উপকার করার পর যে খোটা দেয়; পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি এবং মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি এ হাওয়ার পরশটুকুও পাবে না। (তাবারানি, জামে সগির)

হযরত আবু উমামা (রাযি.) বর্ণনা করেন, ‘তিন ব্যক্তি এমন রয়েছে, যাদের ফরজ ও নফল কোনো ইবাদতই আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না। তারা হলো- পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি; উপকার করে খোঁটা দানকারী এবং তাকদিরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী। (কিতাবুসসুন্নাহ)

হযরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত যে, ৪ ব্যক্তি এমন রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা জান্নাত দান না করলেও তা সঙ্গত হবে। তারা হলো- মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি; সুদখোর, ইয়াতিমের সম্পদ গ্রাসকারী এবং পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি। (মুসতাদরেকে হাকেম)

হযরত সাওবান (রাযি.) বর্ণনা করেন, ‘তিনটি ব্যাপার এমন; বর্তমানে যেগুলোর কোনো আমলই ফলদায়ক নয়। আর তাহলো- আল্লাহর সঙ্গে কাউক শরিক করা; পিতা-মাতার অবাধ্যতা ও জিহাদ চলাকালে যুদ্ধক্ষেত্রে পৃষ্ঠপ্রদর্শন। (তাবারানি)

হযরত আবু বকর (রাযি.) প্রিয়নবি থেকে বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহ তাআলা তাঁর ইচ্ছামাফিক অনেক গোনাহের শাস্তি কেয়ামতের দিন দেয়ার জন্য রেখে দেবেন; কিন্তু পিতা-মাতার অবাধ্যতা এমনই একটি গোনাহ যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতেই দিয়ে দেন।

হযরত ইবন আবু আওফা (রাযি.) থেকে বর্ণিত হজরত আলকামার মৃত্যু সম্পর্কে একটি দীর্ঘ হাদিস রয়েছে। মৃত্যুকালে সে কোনো ভাবেই মুখে তাওহিদের কালেমা উচ্চারণ করতে পারছিল না। এ সাহাবীর প্রতি তাঁর মা অসন্তুষ্ট ছিল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুপারিশে তাঁর মা তাঁকে ক্ষমা করে দেন এবং তখনই তাঁর মুখে তাওহিদের কালেমা নিঃসৃত হয়।

পিতা-মাতার অবাধ্যতার কুফল সম্পর্কিত একটি উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা রয়েছে। যা মানুষকে পিতা-মাতার অবাধ্যতা থেকে মুক্ত রাখবে।

হযরত ইবনে ওমর বর্ণনা করেন, ‘তিন ব্যক্তি এমন- যাদের প্রতি কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা অপ্রসন্ন থাকবেন; তারা হলো- পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি; মদপানে অভ্যস্ত ব্যক্তি; উপকার করে খোঁটা দানকারী।’

অতঃপর বললেন, তিন ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না; তারা হলো পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি; দাইয়ুস অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি যার স্ত্রী ব্যভিচারিণী অথচ সে তাতে বাধা দান করেনি বা তার প্রতিকার করেনি এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী। (ইবনে হিব্বান)

রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘পিতা-মাতার সন্তুষ্টির ওপরই আল্লাহর সন্তুষ্টি আর পিতা-মাতার অসন্তষ্টির ওপরই আল্লাহর সন্তুষ্টি নির্ভর করছে। ’

হযরত মোয়াবিয়া ইবনে জাহাম সুহামি নবী কারীম (সা.)এর সাথে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বললেন, ‘যাও, তোমার আম্মার সেবা করো। ’ কিন্তু তিনি জিহাদে যাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ জানাতে থাকলে তিনি বললেন, ‘হায় আফসোস! তোমার মার পা ধরে থাক। ওখানেই তোমার জান্নাত। ’ –ইবনে মাজাহ

হাদিসে আরও বলা হয়েছে, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের প্রতি আল্লাহতায়ালা কিয়ামতের দিন তাকাবেন না। আরেক হাদিসে বলা হয়েছে, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করবে না। পিতা-মাতার অবাধ্যতার বিভিন্ন রূপ হতে পারে। যেমন—

(১) পিতা-মাতার ওপর নিজেকে বড় মনে করা। অর্থাৎ সম্পদ, শিক্ষা-দীক্ষা, সম্মান-প্রতিপত্তি ইত্যাদি বিষয়ে পিতা-মাতার চেয়ে নিজেকে বড় মনে করা।

(২) পিতা-মাতাকে সহায়-সম্বলহীন এবং নিঃস্ব অবস্থায় ফেলে রাখা এবং যার কারণে তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাততে বাধ্য হয়।

(৩) বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী-সন্তান বা অন্য কাউকে, এমনকি নিজের প্রয়োজনকেও পিতা-মাতার ওপর অগ্রাধিকার দেয়া তাদের অবাধ্যতার অর্ন্তভুক্ত।

(৪) পিতা-মাতাকে শুধু নাম ধরে বা এমন শব্দ প্রয়োগে ডাকা যা তাদের অসম্মান ও মর্যাদাহানীর ইঙ্গিত দেয়।

(৫) পিতা-মাতার সাথে চোখ রাঙ্গিয়ে ধমকের সুরে কথা বলা।

(৬) তাদের সেবা-শুশ্রূষা না করা এবং শারিরীক বা মানসিক দিকের প্রতি লক্ষ্য না রাখা। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে রোগ-ব্যাধিতে তাদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা।

পরিশেষে বলবো, যাদের মেহেরবান পিতা-মাতা জীবিত আছেন, তারা যেনো এখনই তাঁদের প্রতি পরম আনুগত্য ও সেবার মাধ্যমে নিজের ইহ-পরকালীন জীবনের কল্যাণ ও বরকত অর্জন করে নেন। আর যারা পিতা-মাতাকে হারিয়েছেন, তারা যেনো নিয়মিত পিতা-মাতার মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন এবং তাঁদের ঈসালে সাওয়াবের নিয়্যাতে দান-সদক্বা করেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে সহীহ বুঝ শক্তি ও আমল করার তাওফীক দান করুন, আমীন।

লেখক: প্রকাশক- উম্মাহ ২৪ ডটকম, সিইও- এম.জেড. ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক- আল-বাশার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, পুরানা পল্টন, ঢাকা।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।