Home সম্পাদকীয় করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সরকার দায় এড়াতে পারবে কি?

করোনা পরিস্থিতির অবনতি হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সরকার দায় এড়াতে পারবে কি?

বাংলাদেশে করোনা মহামারি পরিস্থিতি নিয়ে আশাবাদি হওয়ার মতো বাস্তবসম্মত আলামত এখনো নেই। গতকাল সোমবারও দেশে করোনা সংক্রমিত হয়েছে ২ হাজার ৪৮৫ জন। এ নিয়ে মোট ২ লাখ ৯৭ হাজার ৮৩ জনের করোনা শনাক্ত হলো। এর ফলে করোনা সংক্রমণে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে ১৫তম স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ।

একই দিনে পাকিস্তানে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৫৫৩ জন এবং মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে দুই লাখ ৯২ হাজার ১৭৪ জনে। তবে করোনায় মৃত্যুর হারে পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানে মৃত্যু যেখানে ছয় হাজার ২৪৪ জন, সেখানে বাংলাদেশে মারা গেছে তিন হাজার ৯৮৩ জন। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এমন ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কারণ দৈনিক মৃত্যুর হার কমেনি। দৈনিক মৃত্যুর হারে পাকিস্তান অনেক উন্নতি করেছে। গতকাল দেশটিতে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন মাত্র ৬ জন।

অন্যদিকে বাংলাদেশে গতকাল সোমবারও ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪০ জন। এরই মধ্যে করোনা শনাক্তের টেস্টের পরিমাণ কমানো হয়েছে এবং সার্বিকভাবে সতর্কতামূলক ব্যবস্থায় শৈথিল্য এসেছে।

আরও পড়তে পারেন-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা: এ বি এম আবদুল্লাহ একটি দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দেশের মানুষ করোনাকে পাত্তা দিচ্ছে না। এটি আত্মঘাতী হচ্ছে। সব কিছু খুলে দেয়া হয়েছে। ফুটপাথ, রেস্টুরেন্ট, পার্ক সব জায়গায় অনেক লোকজন একসাথে চলাফেরা করছে। তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো প্রবণতা নেই। এর ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি আসলে বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, গত কয়েক দিনের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, অবস্থা একই রকম আছে। আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার থেকে তিন হাজারের মধ্যে ওঠানামা করছে। মৃত্যুর হারও কমেনি। সংক্রমণের ঝুঁঁকি কয়েক দিনের মধ্যে বোঝা যাবে। হাত ধুুতে হবে। কাজ করার পাশাপাশি সচেতনভাবে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। তা না হলে বিপদ বাড়তে পারে।

অধ্যাপক ডা: এ বি এম আবদুল্লাহ যে কথাটি বলেননি সেটি হলো, সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে যে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে তার কারণ খোদ সরকারেরই ভূমিকা। তথ্য-উপাত্তের বাস্তবতা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে এক সপ্তাহ আগে স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের ভ্যাকসিনের দরকারই হবে না। তার আগেই করোনা বিদায় নেবে। এরই মধ্যে কমে গেছে এবং মৃত্যুর হারও কমেছে।

তার এ বক্তব্যের পরই মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে এবং সামাজিক মেলামেশা শুরু করেছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসকের বক্তব্য অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতির যদি অবনতি হয় তার দায় সরকার বা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ওপরই বর্তাবে।

শুধু স্বাস্থ্যমন্ত্রী একাই নন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, করোনা মোকাবেলায় শুরুর দিকে সরকার যেসব সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নিয়েছিল, তার অনেকগুলো থেকেই সরকার এখন সরে আসছে। কিছু উদ্যোগ বাতিল করে নেয়া হচ্ছে নতুন প্রকল্প। বিশেষায়িত করোনা হাসপাতাল স্থাপন, সব হাসপাতালে হ্যান্ডওয়াশ কর্নার স্থাপন, বন্দরগুলোতে মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপনের মতো বেশ কিছু কাজ সরকার আর করবে না।

এ ছাড়া পিসিআর মেশিন কেনা, হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন সেন্টার ও আইসিইউ বেড স্থাপনের কাজ গুটিয়ে আনা হচ্ছে। চীনের ভ্যাকসিন বাংলাদেশ সবার আগে পাবে এমন প্রচারণা চালানো হলেও বাস্তবে তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

তবে সরকার ৯ কোটি ডলারের ভ্যাকসিন কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা দিয়ে পাওয়া যাবে ভ্যাকসিনের মাত্র ২২ লাখ ৫০ হাজার ডোজ যেখানে বিশ্বের অন্যান্য দেশ কোটি কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি করছে। চীনের সিনোভ্যাক কোম্পানি ইন্দোনেশিয়াকে পাঁচ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

এ ছাড়াও চলতি বছরের শেষ নাগাদ ইন্দোনেশিয়া নিজেই ২৫ কোটি ডোজ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জনে কাজ করছে। সব মিলিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশ এই মহামারী নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ, যেমনটা আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান শুক্রবার জেনেভায় সাংবাদিকদের বলছেন, এই মহামারী বিদায় করতে বিশ্ববাসীর আরো দুই বছর লাগতে পারে। সম্ভবত: মহামরি করোনা স্বাভাবিকভাবেই বিদায়ের প্রতিক্ষায় আছে দেশের মানুষ।

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।