Home ওপিনিয়ন এক হতভাগা তাসফিয়া এবং তারুণ্যের আত্মবিধ্বংসী গন্তব্য

এক হতভাগা তাসফিয়া এবং তারুণ্যের আত্মবিধ্বংসী গন্তব্য

।। ইয়াসীন আব্দুর রউফ ।।

আজ সকালে পত্রিকার পাতায় নজর বুলাতেই চোখে পড়ল- “বন্ধুর সাথে বেড়াতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন তাসফিয়া৷” কি ঘটনা ঘটেছিল সেখানে? একটি জাতীয় পত্রিকার হুবহু বিবৃতিই আপনাদের সম্মুখে আমি তুলে ধরছি৷

“বন্ধুর সাথে বেড়াতে গিয়ে লাশ হলেন চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী তাসফিয়া আমিন (১৬)৷ পুলিশের ধারণা, ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ সৈকতে ফেলে দেয়া হয়৷ গতকাল বুধবার নগরীর পতেঙ্গা থানার নেভাল বিচ এলাকার কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে ওই চোখ, নাক-মুখ থেতল যাওয়া ওই স্কুল ছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ৷ সে নগরীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী৷ মঙ্গলবার বিকলে আদনান মির্জা নামক এক বন্ধুর সাথে তাসফিয়া বেড়াতে বের হন৷ এরপর রাতে আর বাসায় ফেরেনি৷ পুলিশ জানায়, ফেইসবুকের মাধ্যমে ওই যুবকের সাথে তার পরিচয়৷ পরিচয় থেকে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে দুইজন”৷ (দৈনিক ইনকিলাব- ৩মে, ২০১৮)৷

কী চরম নিষ্ঠুরতা! কোনো পশুও তো এমন নিষ্ঠুর হতে পারে না, ঠিক! তবে, কেন মানুষ এত নিষ্ঠুর হল, কীভাবে এটা সম্ভব! এই নিষ্ঠুরতার পিছনে কী কারণ রয়েছে? ‌আমরা তো অযথা হঠকারিতার পথে না এগিয়ে একটু বিবেক খাটিয়ে দেখতে পারি৷

আমি মনে করি, লাগামহীন প্রযুক্তির ব্যবহার, বল্গাহীন ছেলেমেয়েদের চলাফেরা৷ ধর্মীয় অনুশাসনকে সনাতন মনে করে ধর্মহীন আধুনিকতাকেই আপন করে নেয়াই এর প্রধানতম কারণ৷

‌প্রিয় পাঠক! আপনি একটু ভেবে দেখুন না, যদি আমাদের সন্তানেরা একটু আধুনিক কম হয়, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে৷ মেয়ে সন্তানেরা রীতিমত পর্দা করে চলে, বিবাহের পূর্ব পর্যন্ত কোনো পুরুষের সাথে কথা না বলে, প্রেম-বিনিময় না করে, তাহলে কি হবে?

সে আধুনিক না, সামাজিকতা বোঝে না৷ তাই তো? দু’দিন পরে যখন আপনার মেয়েও হয়ে যাবে আজকের তাসফিয়ার স্থলাভিষিক্ত, তখন লাশ হয়েও ফিরতে পারে। আপনি কি তখন হারিয়ে ফেলা সম্বিত ফিরে পাবেন? সামাজিকতা আর আধুনিকতা কোথায় যাবে তখন?!

ওহে বিবেকবান! এখনো কি পর্দার কথা বললে তুমি বলবে: সেকেলে? ছেলে-মেয়েদেরকে প্রযুক্তি থেকে দূরে রাখতে বললে বলবে- আধুনিকতা বোঝে না? এখনো কি তুমি বোরকা পরিহিত রমণীকে দেখে কটাক্ষ করবে? এখনো কি তুমি বলবে- সময়টা উপভোগের? এখন যদি জীবনটাকে ওরা উপভোগ না করে তাহলে আর কবে করবে?

বলবে কি, আর কত উপভোগ চাও তুমি? তুমি কি চাও তোমার কলিজার টুকরা সতীত্ব হারিয়ে নীরবে কাঁদুক? তুমি কি চাও তোমার মেয়ে তাসফিয়ার মত লাশ হয়ে ঘরে ফিরুক? তখন এই প্রযুক্তি আর আধুনিকতা দিয়ে তোমার কি উপকার দেবে?

না…! না..! কিছুতেই তা হতে দেব না আমি৷ একজন মানুষ এতটাই মূল্যহীন নয়৷ আমি চাই না, এভাবে তাসফিয়াদের মতো মর্মন্তুদ ঘটনার পুণরাবৃতি আবারো ঘটতে থাকুক৷ ওদের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে৷ বাঁচার অধিকার নিয়েই ওরা জন্মলাভ করেছে৷

তাই এসো বন্ধু! হঠকারিতার পথে না বাড়িয়ে, নাস্তিক্যবাদের ঘনীভূত আঁধারে আর আবদ্ধ না থেকে ইসলামের সৌন্দর্যগুলি অনুধাবনের চেষ্টা করি৷ নিজের জীবনকে ইসলামের পবিত্র আলোতে আলোকিত করি৷ নিজের জীবনের, সন্তানদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি৷ ফুলের মত সুন্দর জীবন গড়ি৷

লেখক: তরুণ আলেমে-দ্বীন, শিক্ষক- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা।