Home মহিলাঙ্গন চিকিৎসাসেবায় মুসলিম নারীদের অবদান

চিকিৎসাসেবায় মুসলিম নারীদের অবদান

- প্রতিকী ছবি।

ইসলাম নারীকে যে সম্মান দিয়েছে সেটা অন্য কেউ দেয়নি। জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীর অবদান রাখার সুযোগ করে দিয়েছে। শিক্ষা অর্জনে নারীকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করেছে। আর এই কারণেই মুসলিম নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। রাসূল (সা.) সময় অনেক নারী যুদ্ধের ময়দানে আহত সাহাবীদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।

ইসলামী সভ্যতার ক্রমবিকাশে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের ব্যাপক অবদান আছে; যদিও তুলনামূলক নারীর অবদানগুলো কম আলোচিত। বিশেষত চিকিৎসাবিজ্ঞানে তাদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। রাসূল (সা.)এর যুগেও ৯ জন নারী চিকিৎসকের সন্ধান পাওয়া যায়। তারা শল্যচিকিৎসা বা অস্ত্রোপচার, ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। নিম্নে চিকিৎসাশাস্ত্রে অবদান রাখা নারীদের নিয়ে আলোকপাত করা হলো।

রুফাইদা আল-আসলামিয়্যা : তার বাবা সাদ আসলামি পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। রুফাইদা তার বাবার কাছ থেকে চিকিৎসাবিদ্যার শিক্ষা নেন। জাহেলি ও ইসলামী যুগে তিনি অস্ত্রোপচার ও যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসা করতেন। মাহমুদ ইবনে লাবিদ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, ‘খন্দক যুদ্ধের দিন সাদ (রাযি.)এর চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে রুফাইদা নামক এক নারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। তিনি আহতের চিকিৎসা করতেন। নবী (সা.) সকাল-সন্ধ্যা সাদ (রাযি.)কে তাঁর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস- ১১৩৯)।

উম্মে আতিয়্যা আল-আনসারিয়্যা : অপর নাম নুসাইবা বিনতে কাব। জাহেলি ও ইসলামী যুগে তিনি চিকিৎসায় প্রসিদ্ধি লাভ করেন। অস্ত্রোপচার ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। উম্মে আতিয়্যা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। আমি তাঁদের বাহন ও মালপত্র দেখাশোনার জন্য পেছনে থেকে তাদের খাবার তৈরি করতাম, আহতদের চিকিৎসা করতাম এবং রোগীদের দেখাশোনা করতাম।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস- ২৮৫৬)।

আশ-শিফা বিনতে আবদুল্লাহ : জাহেলি ও ইসলামী যুগে লেখাপড়া জানা লোকদের অন্যতম ছিলেন তিনি। হিজরতের আগে ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসুল (সা.)-এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করে মদিনায় হিজরত করেন। তিনি মুসলিম নারীদের শিক্ষা দিতেন। হাফসা (রা.) তাঁর কাছে হস্তশিল্প শেখেন। ইসলামের ইতিহাসে তিনি প্রথম শিক্ষিকা হিসেবে পরিচিত। (আত-তিব্ব ওয়া রাইদাতুহুল মুসলিমাত, পৃষ্ঠা ৮০)।

আরও পড়তে পারেন-

হযরত রাসুল (সা.)এর সঙ্গে যুদ্ধে বের হতেন তিনি। অসুস্থ ও আহতদের চিকিৎসা করতেন। সাহাবিরাও বিভিন্ন সময় তাঁর কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করতেন।

আশ-শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একবার আমি হাফসা (রাযি.)এর কাছে ছিলাম, তখন নবী (সা.) আমার কাছে এসে বললেন—তুমি তাকে (হাফসাকে) যেভাবে লেখা শিখিয়েছ, সেভাবে পিঁপড়া (পোকা) কামড়ের ঝাড়ফুঁক শিক্ষা দাও না কেন?’ (আবু দাউদ, হাদিস- ৩৮৮৭)।

জয়নব তবিবাতু বনি আউদ : তিনি জয়নব আশ-শামিয়া নামেও পরিচিত ছিলেন। উমাইয়া যুগের প্রসিদ্ধ চিকিৎসক। উমাইয়া খলিফাদের স্ত্রীদের চিকিৎসা করতেন। অস্ত্রোপচার ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। (আত-তিব্ব ওয়া রাইদাতুহুল মুসলিমাত, পৃষ্ঠা ৯১)।

উখতুল আবু বকর ইবনে জাহরা : তিনি স্পেনের প্রসিদ্ধ জাহরা পরিবারের মেয়ে, যে পরিবারের সবাই চিকিৎসক ছিলেন। প্রসিদ্ধ চিকিৎসক আবু বকর ইবনে জাহরার বোন। ধাত্রীবিদ্যা ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলেন তিনি। স্পেনজুড়ে তাঁর খ্যাতি ছিল। তাঁর বাবা, ভাই এবং মেয়েও চিকিৎসক ছিলেন। (আত-তিব্ব ওয়া রাইদাতুহুল মুসলিমাত, পৃষ্ঠা ৯৬)।

বিনতু দিহনিল লাউজ : তার মা দিহনুল লাউজ ছিলেন দামেস্কের প্রসিদ্ধ মুসলিম স্কলার। চিকিৎসাজগতে বিনতু দিহনিল লাউজের ব্যাপক খ্যাতি ছিল। তিনি উমাইয়া শাসকদের পত্নীদের চিকিৎসা করতেন। (আত-তিব্ব ওয়া রাইদাতুহুল মুসলিমাত, পৃষ্ঠা ১০১)

বিনতু শিহাবুদ্দিন আবিস সায়েগ : তিনি আহমদ ইবনে সিরাজুদ্দিনের মেয়ে। তাঁর উপাধি ছিল শিহাবুদ্দিন। কায়রো দারুশ-শিফা আল-মানসুরিয়ার প্রধান ছিলেন তিনি।
মৃত্যুর পর তাঁর মেয়ে বিনতু শিহাবুদ্দিনকে কায়রো দারুশ-শিফা আল-মানসুরিয়ার প্রধান করা হয়। বিনতু শিহাবুদ্দিন চিকিৎসাজগতে খুব প্রসিদ্ধি লাভ করেন। (আত-তিব্ব ওয়া রাইদাতুহুল মুসলিমাত, পৃষ্ঠা ১০২)।

উম্মুল হাসান : তার পুরো নাম উম্মুল হাসান বিনতে কাজী আবু জাফর আত-তানজালি। অষ্টম শতাব্দীতে তার জন্ম। তিনি বাবার তত্ত্বাবধানে জ্ঞান অর্জন করেন। কবিতা ও চিকিৎসাজগতে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। সে যুগে তিনি চিকিৎসাজগতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। (আত-তিব্ব ওয়া রাইদাতুহুল মুসলিমাত, পৃষ্ঠা ৯৩)।

উম্মে আহমাদ আল-কাবিলা : মামলুকি যুগের এক দ্বিনদার ও ধার্মিক চিকিৎসক। তিনি ধাত্রীবিদ্যা ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ ছিলেন। বিনা পয়সায় জনগণের চিকিৎসা করতেন। (আলামুন নিসা, পৃষ্ঠা ২৩)।

জোহরা বেগম কাজী : ভারত উপমহাদেশের প্রথম মুসলিম নারী চিকিৎসক। ১৯১২ সালে ভারতে জন্মগ্রহণ করেন। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন দিল্লির হার্ডিঞ্জ মহিলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। ভারতের বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে অধ্যাপনা ও চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

খালেদা আবদুল ওয়াহহাব কায়সি : ১৯২৪ সালে ইরাকে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল তাঁর। ১৯৪৭ সালে ইরাকের রয়াল মেডিক্যালে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেন। এ ছাড়া বন্ধ্যাত্ব, গর্ভবতীদের রক্তশূন্যতা, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন বিষয়ে তার গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক প্রবন্ধ রয়েছে। মহিলা চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ইরাকের হাসপাতালগুলোতে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ চালু করা তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে তিনি বাগদাদে মৃত্যুবরণ করেন। (তারিখু আলামিত তিব্বিল ইরাকি আল-হাদিস, পৃষ্ঠা ১৮০)।

ওয়াফা আস-সদর : ১৯৫০ সালে মিসরে জন্মগ্রহণ করেন। আস-সদর মিসরের কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেডিসিনে স্নাতক এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন এফ কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট থেকে জনপ্রশাসনে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর এইডস কেয়ার অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট প্রগ্রামসের (আইসিএপি) পরিচালক। ১৯৮৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি এইচআইভি/এইডস এবং টিবি প্রগ্রাম বিকাশে সহায়তা করেছিলেন। করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকে ওয়াফা আস-সদর নিউ ইয়র্ক সিটি টেস্ট অ্যান্ড ট্র্যাকিং গ্রুপ এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কভিড-১৯ টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।

[ওয়াফা আস-সদর ওয়া মুসাহামাতুহা আররায়েদা ফি মুকাফাহাতি মারজিল এইজ, এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ]

উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।