Home শিক্ষা ও সাহিত্য দ্বীনি মাদ্রাসায় দায়িত্ব পালনে কর্তব্যবোধ ও ইখলাস থাকা গুরুত্বপূর্ণ

দ্বীনি মাদ্রাসায় দায়িত্ব পালনে কর্তব্যবোধ ও ইখলাস থাকা গুরুত্বপূর্ণ

।। আল্লামা হাফেজ নাজমুল হাসান কাসেমী ।।

দায়িত্ব পালনের গুরুত্ব: আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করা উচিত যে, তিনি আমাদেরকে ইলমে দ্বীনের খিদমত করার সুযোগ দিয়েছেন। আমাদের নিজেদের দায়িত্বের প্রতি চিন্তা করা উচিত। গুরুত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করলে কাজের মাঝে বরকত হয়। একটা হচ্ছে চাকুরী বা ডিউটি পালন, অপরটি হচ্ছে দায়িত্ব। এই দু’টির মাঝে পার্থক্য আছে। চাকুরীতে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট রুল মেনে কাজ করা হয়।

সময় যখন শেষ হয়ে যায়, তখন আর কাজের কোন উদ্দেশ্য থাকে না। আর দায়িত্ব সময় দেখে না। কাজের চিন্তা করতে থাকে। যাদের দায়িত্ব পালন করার অনুভূতি থাকে, তারা সর্বদা উপকার করার চিন্তায় থাকেন। তারা সর্বদা তাদের অন্তরকে কাজের মাঝে লাগিয়ে রাখেন।

দ্বীনের কাজ দুনিয়বী উদ্দেশ্যে না হওয়ার গুরুত্ব: হযরত মুফতী মাহমূদ হাসান গাঙ্গুহী (রাহ.) বলেন, মাদরাসাসমূহের (উস্তাদ-ছাত্রদের দ্বীনি জযবার অবনতি, প্রতিটি কাজে জাগতিক লাভের চিন্তা) অবস্থা দেখে এমন মনে হয় যে, এক যামানা আসবে যে, কোন মানুষকে সালাম দিলেও বলবে টাকা দাও তবে উত্তর দেব। অন্যথায় উত্তর দেব না। (উদ্দেশ্য এই যে, প্রত্যেক বিষয়ে বিনিময়ের প্রতি মানুষের মনোযোগ থাকবে। যা আহলে ইলমের শান নয়। এই উদ্দেশ্যও হতে পারে যে, মাদরাসা থেকে সালাম এবং পরস্পর মুহাব্বতের চর্চা হারিয়ে যাবে। তাই এই সমস্ত সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সুদূরপ্রসারী চিন্তা থাকা উচিত। আল্লাহই ভালো জানেন)।

প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার গুরুত্ব: মাদরাসার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিটি মানুষের উচিত, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে নজের স্বার্থের উপর প্রাধান্য দেয়া। নিজের সত্ত্বাকে দেখবে না। নিজের সত্ত্বার কী ভরসা আছে? আজ আছে তো কাল নেই। মাদরাসা তো একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান, যা সর্বদা দায়েমী থাকবে। মাদরাসার স্বার্থ অনুযায়ী কাজ করবে তো মাদরাসার উন্নতি হবে এবং সকলের সুনাম হবে।

আরও পড়তে পারেন-

ইখলাসের গুরুত্ব: আমাদের সকলেরই দ্বীনের জন্যও কিছু কাজ করা উচিত। দুনিয়ার জন্যই সব কাজ না করা চাই। হযরত ফকীহুল উম্মত (রাহ.)এর পিতা ছিলেন মাওলানা হামিদ সাহেব (রাহ.)। তিনি শাইখুল হিন্দ (রাহ.)এর ছাত্র ছিলেন। হযরত শাইখুল হিন্দ (রাহ.) তাকে একটি মাদরাসায় খিদমত করার জন্য নাহডোরে (বিজনূর জেলার একটি গ্রাম) পাঠিয়েছিলেন। তিনি পুরো জীবন সেখানেই কাটিয়ে দিলেন। সেখান থেকে কোথাও যাননি। নামমাত্র বেতনে ঐ মাদরাসায় দরসের খিদমত আঞ্জাম দিতেন।

তিনি যে মসজিদে নামায পড়তেন হঠাৎ করে সেখানকার ইমাম সাহেব ইন্তেকাল করলেন। মসজিদ কমিটি ইমাম পদে নিয়োগের জন্য মাওলানা হামিদ সাহেবকেই (রাহ.) পছন্দ করল। সুতরাং সবাই মিলে তাকে ইমাম পদে নিয়োগ দিয়ে বেতন নির্ধারণ করে দিল। তিনি তা জানতে পেরে অন্য এক মসজিদে গিয়ে নামায পড়তে লাগলেন। সেখানকার লোকজন তাকে অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও  তিনি বেতন নেয়াটা কোনভাবেই গ্রহণ করলেন না। মুসল্লিগণ অনোন্যপায় হয়ে মুফতী সাহেবের (তাঁর ছেলের) স্বরনাপন্ন হলেন। মুফতী সাহেব (মাহমূদ হাসান গাঙ্গুহী) পিতার নিকট আবেদন করলেন যে, নামায তো আপনি পড়ানই, ইমাম পদে নিযুক্তি দিলে তাতে এমন কী ক্ষতি? তখন তিনি এক দীর্ঘশ্বাস নিয়ে অত্যন্ত দরদমাখা কণ্ঠে বললেন, “সারা জীবন তো ইলম বিক্রি করেই পেট পুষলাম। একমাত্র নামাযটা ছিল আল্লাহর জন্য। এখন কি তাও টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়ে যাবে? হায় আফসোস!”

মাদরাসাগুলোর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে করণীয়: মাদরাসার শিক্ষাবর্ষ সবেমাত্র শুরু হল। বছরের শুরুতেই সকলে একত্রে বসে হিসাব-নিকাশ করে নেবে যে, গত বছর আমাদের কী কী ভুল-ত্রুটি হয়েছে, যেগুলোর প্রতি আমরা লক্ষ্য রাখতে পারিনি। সে ভুলগুলোর প্রতি দৃষ্টি দিয়ে পরস্পরে আলোচনার মাধ্যমে সামনে নিয়ে আসা। এবং বছরের শুরুতেই সেগুলোকে পরিশূদ্ধ করার চেষ্টা করা। ইন্শাআল্লাহ্! মাদরাসার নেযাম ঠিক হয়ে যাবে।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল- জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া, উত্তরা, ঢাকা এবং ঢাকা উত্তরা রওজাতুস সালিহাত মহিলা মাদ্রাসা, খতীব-উত্তরা ১২নং সেক্টর বায়তুন নূর জামে মসজিদ, উপদেষ্টা- উম্মাহ ২৪ ডটকম ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।