Home ইসলাম ধর্ষণ রোধে ইসলাম নির্দেশিত ব্যভিচারের শাস্তি প্রয়োগের বিকল্প নেই

ধর্ষণ রোধে ইসলাম নির্দেশিত ব্যভিচারের শাস্তি প্রয়োগের বিকল্প নেই

।। মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী ।।

ইসলামে ব্যভিচারিতাকে অন্যতম গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, ব্যভিচারের ছড়াছড়ির ফলে একটা পরিবার, সমাজ ও দেশ দ্রুত ভেঙ্গে পড়ে এবং অধ:পতনের দিকে ধাবিত হয়। তাই ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধ বন্ধ করতে হলে সবার আগে ব্যভিচার বন্ধ করতে হবে। বক্ষমান নিবন্ধে ব্যভিচার সম্পর্কে ইসলামের বিধি-বিধান নিয়ে আলোচনার প্রয়াস পাব, ইনশাআল্লাহ।

ব্যভিচার সমাজকে কুলষিত করে। ব্যভিচারের কারণে আল্লাহর লানত অবর্তীণ হয়। ইসলামে ব্যভিচার হারাম ও জঘন্য অপরাধ। বিবাহিত ব্যক্তি ব্যভিচার করলে তার কি শাস্তি হবে তা কুরআন এবং হাদিসে সুস্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হইও না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত ৩২)।

আল্লাহ বলেন, ‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে একশ’ ঘা করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকরী করবে এদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের অভিভূত না করে। যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাক। ঈমানদারদের একটি দল যেন এদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’ (সুরা নুর, আয়াত ২)।

হাদিসে এসেছে- একবার বনি আসলাম গোত্রের এক ব্যক্তি হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট এসে বলল, আমি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছি। আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞাস করলেন, তুমি এ কথা আর কাউকে বলেছ? সে উত্তর দিল না। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তুমি আল্লাহর কাছে মাফ চাও এবং গোপনীয়তা রক্ষা কর। আল্লাহ তোমার দোষ গোপন রাখবেন এবং তোমার তাওবা কবুল করবেন। এ কথায় আশ্বস্ত না হয়ে সে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিকট গেলেন এবং পূর্বের মতো বললেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো বললেন। কিন্তু সে কিছুতেই আশ্বস্ত হতে পারল না।

আরও পড়তে পারেন-

অগ্যতা সে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলল আমার দ্বারা ব্যভিচার সংঘটিত হয়েছে। রাসুল মুখ ফিরিয়ে নিলেন। যখন সে তার কথা ওপর জিদ ধরে রইল, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পরিবারের লোকদের ডাকলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ‌এ কি পাগল? এখনও কি পাগলামি করছে? তারা উত্তর দিল না, হে আল্লাহর রাসুল!, সে সম্পূর্ণ সুস্থ।

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‌তুমি কি বিবাহত না অবিবাহিত? সে উত্তর দিল, আমি বিবাহিত। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে পাথর নিক্ষেপে মৃত্যুদণ্ড (রজম) দিলেন।’ (মুয়াত্তা)

এক মহিলা সাহাবি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলল, আমি জিনা (ব্যভিচার) করেছি। জিনার  কারণে গর্ভবর্তী হয়েছি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, তুমি চলে যাও। সন্তান হলে এবং তার দুধ পান করানোর সময় অতিবাহিত হলে এসো। যখন তার সন্তানের দুধ পানের মেয়াদ শেষ হলো, তখন সে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে উপস্থিত হলো। তিনি বললেন, তোমার এ সন্তানকে কারো দায়িত্বে দিয়ে দাও। যখন সে সন্তানকে অন্য একজনের দায়িত্বে রেখে এলো। তখন তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যার নির্দেশ দেয়া হলো। তার জন্য বুক সমান গভীর এক গর্ত খুঁড়া হলো এবং তাকে সেখানে দাঁড় করিয়ে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হলো। তারপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জানাজার নামাজ পড়ালেন।

হজরত ওমর আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তার জানাজা নামাজ পড়ালেন? এতো ব্যভিচারিনী। তিনি বললেন, এ মহিলা এমন তাওবা করেছে তা যদি পৃথিবীবাসীর মধ্যে ভাগ করে  দেয়া হয় তবে তা সবার জন্য যথেষ্ট হবে। এর  চেয়ে বড় আর কি হতে পারে যে, সে (আল্লাহর ভয়ে) নিজের জীবন দিয়ে দিল। (মুয়াত্তা)

নাসায়ী শরীফের হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে পাথর নিক্ষেপ করতে আসলেন এবং তাকে লক্ষ্য করে সজোরে একটি পাথর নিক্ষেপ করলেন। তখন তিনি গাধার ওপর সওয়ার ছিলেন।

হাদিসের শিক্ষা

১. যাকে পাথরে নিক্ষেপে হত্যা করা হবে তাকে বেত্রাঘাত বা কষাঘাত করা যাবে না। ২. পাগলের স্বীকারোক্তি গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী- সে কি পাগলামী করছে?

৩. কোনো অপরাধ করে গোপনে আল্লাহর নিকট তাওবা করলে তিনি মাফ করে দেন। যেমন পরামর্শ দিয়েছিলেন হজরত আবু বকর ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু।

৪. জিনা বা ব্যভিচারের স্বীকৃতি একবার করলেই তাকে শাস্তি দেয়া যাবে। বার বার না করলেও চলবে।

জিনা বা ব্যভিচার ইসলামসহ পৃথিবীর সব ধর্মগ্রন্থে ঘৃণিত ও জঘন্য অপরাধ। সুতরাং ব্যভিচারমুক্ত সমাজ গড়তে আল্লাহর ভয় ও তাঁর বিধিবিধান পালন অত্যাবশ্যক। আল্লাহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে জিনা বা ব্যভিচার থেকে হিফাজত করুন। আমিন।

লেখকঃ মুহাদ্দিস- জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা ঢাকা, খতীব- তিস্তা গেট জামে মসজিদ টঙ্গী, গাজীপুর, উপদেষ্টা- উম্মাহ ২৪ ডট কম এবং কেন্দ্রীয় অর্থসম্পাদক- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। ই-মেইল- muftijakir9822@gmail.com

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।