Home ইতিহাস ও জীবনী কওমি মাদ্রাসায় বাংলা সাহিত্য বিস্তারে আল্লামা শামছুদ্দীন কাসেমী (রাহ.)এর গৌরবগাঁথা ভূমিকা

কওমি মাদ্রাসায় বাংলা সাহিত্য বিস্তারে আল্লামা শামছুদ্দীন কাসেমী (রাহ.)এর গৌরবগাঁথা ভূমিকা

।। মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া ।।

একজন মানুষ তার মনোভাব, আদর্শ, চিন্তা-চেতনার কথা নিজ মাতৃভাষায় যেভাবে প্রকাশ করতে পারে অন্য ভাষায় সেভাবে পারে না৷ তাই আমাদের সকলকে মাতৃভাষার গুরুত্ব দিতে হবে সর্বাধিক।

মাতৃভাষাকে অবহেলা, অবজ্ঞার কোন সুযোগ নেই৷ মাতৃভাষাকে অবহেলা করে কোন জাতির আদর্শিক বিপ্লব ঘটানো অসম্ভব। যারা নিজ ভাষাকে অবজ্ঞা করেছে তারা স্বজাতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

এক সময় আমাদের দেশের কওমী মাদরাসায় বাংলা ভাষা অবহেলিত ছিল। কওমী মাদরাসায় অন্য ভাষায় লেকচার দেয়া হত। এখনো কোথাও কোথাও দেয়া হয়।

সে পাক আমলে তবীবুল মিল্লাত শামছুল হক ফরিদপুরী (রাহ.) বাংলার প্রতি জোর দেন। তিনি বাংলায় বহু কিতাব রচনা এবং অনুবাদ করেন। বলতে গেলে তিনিই ছিলেন এর পথিকৃত। তারপরও সে সময় লালবাগ মাদরাসায় বাংলাকে পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত করতে পারেননি। সে সময় কোন কওমী মাদরাসায় বাংলা পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত ছিল বলে দাবী করা দুস্কর।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমার আব্বাজী মুজাহিদে মিল্লাত আল্লামা শামছুদ্দীনকাসেমী (রাহ.) জামিয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ মাদরাসায় বাংলা, অংক, ইংরেজী, ভূগোল, সমাজ ও পৌরনীতিকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত করেন। পরীক্ষায় নম্বর অন্যান্য বিষয়ের সমমানের ছিল। কেউ আরবীতে পাশ নম্বর পেয়ে এ বিষয়গুলোতে ফেল করলে তাকে ফেল ধরা হত। দশম শ্রেণি পর্যন্ত জেনারেল শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করায় আরজাবাদকে ‘কাসেমি আলিয়া’ বলতে অনেককে শুনেছি৷ এই নিয়ে আরজাবাদকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করার চেষ্টা করা হতো।

আরও পড়তে পারেন-

আলহামদুলিল্লাহ; সেই পরিস্থিতি এখন নেই আর। মাতৃভাষার গুরুত্ব ও অপরিহার্য প্রয়োজনীয় এখন প্রায় সকলে অনুভব করেন। সর্বত্র পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। আশার কথা, যাঁরা বাংলাকে অবহেলা করতেন তাদের পরিচালিত মাদরাসায় এখন বাংলায় দরস দেয়া হয়।

কওমী মাদরাসার কর্ণধারগণ যদি এ ব্যাপারে আরো পূর্বে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতেন, তাহলে এ ভূন্ডের আলেম-উলামা ও ধর্মভীরু মুসলমানদের রাষ্ট্রের সকল স্তরে অবস্থান আরো অনেক বেশি সুদৃঢ় হতো।

বাংলাকে অবহেলা করার ফলাফল যে শুভ হয়নি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দেশের সর্বজন পরিচিত একজন রাজনীতিবীদ আলেম মুফতী, একটি প্রাচীন মাদরাসার প্রিন্সিপাল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলায় ফরম পুরণ করতে ব্যর্থ হয়ে অন্যের সহায়তা নেন। অথচ তিনি একজন অনলবর্ষি বক্তা ছিলেন। আরবী, উর্দুতে তার ভাল দখল ছিল। আমার এ কথা হয়ত কারো কারো বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে। চাটগাঁয়ে এখনো এমন এক মনীষী আছেন যাকে আরবী, উর্দুর আদীব বলা হয়। মধ্যপ্রাচ্যে তাঁর বেশ কদর রয়েছে৷ কিন্তু তিনি বাংলায় কলম চালাতে আরবীর ন্যায় সফল নন৷ তিনি যদি আরবীর ন্যায় বাংলায়ও সমান দক্ষ হতেন, তাহলে দেশ, জাতি তার দ্বারা উপকৃত হত আরো বেশী৷ এতে কোন সন্দেহ নেই।

এখানে একটি কথা উল্লেখ না করলে নয়, দারুল উলূম দেওবন্দ যে সময় প্রতিষ্ঠিত হয়, সে সময়ও উপমহাদেশে ফার্সীর প্রভাব ছিল বেশী। তখনো দেওবন্দে শিক্ষার মাধ্যম ভাষা হিসেবে উর্দুকে নির্ধারণ করা হয়৷ এর কারণ হল, উর্দু ছিল তখন গণমানুষের মুখের ভাষা৷ গণমানুষের উপকার এবং তাদের সাথে সহজে মিশতে পারার কথা ভেবে উর্দুকে শিক্ষার মাধ্যম করা হয়।

চিন্তা করুন! আমাদের আকাবিরগণ কতো দুরদর্শি ছিলেন৷ এখনো দারুল উলূম দেওবন্দে পরীক্ষার প্রশ্ন আরবীতে না করে উর্দুতে করা হয়৷ তাদের নিকট মাতৃভাষার গুরুত্ব কি পরিমাণ তা এ থেকে প্রমাণিত হয়। তাই আমাদেরও মাতৃভাষাকে গুরুত্ব দিতে হবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে, সকল স্তরে।

– মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, পরিচালক- জামেয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ-ঢাকা, সহসভাপতি- বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ এবং যুগ্মমহাসচিব- জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।