Home ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন বিশুদ্ধ সালামকে জঙ্গিবাদ বলে ঢাবি শিক্ষক ইসলাম অবমাননা করেছেন

বিশুদ্ধ সালামকে জঙ্গিবাদ বলে ঢাবি শিক্ষক ইসলাম অবমাননা করেছেন

- শায়খ আহমাদুল্লাহ।

।। শায়খ আহমাদুল্লাহ ।।

সম্প্রতি ডিবিসি নিউজের একটি ভিডিও ক্লিপের অংশবিশেষ অনলাইনে ব্যপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই ভিডিও বক্তব্যের এক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের প্রফেসর জিয়া রহমান বলে ওঠেন- “যেমন এই যে আসসালামু আলাইকুম। আপনি খেয়াল করে দেখুন, ভেরি ইন্টারেস্টিং! এই যে আমরা ছোট বেলায় ‘স্লামালেকুম’ বলেছি, এটাকে আপনি এখন দেখবেন যে, মিডল ক্লাস, এডুকেটেড মিডল ক্লাস; তারা খুব স্ট্রেজ দিয়ে ‘আসসালামু আলাইকুম’ এই পুরো বিএনপি, জমাতের মাসলা গুলোর মধ্যে সেটা রয়েছে। কিংবা আল্লাহ হাফেজ, যে খোদা হাফেজ আমরা খুব সহজে বলতাম, সেটা এখন আল্লাহ হাফেজ। এগুলো দিয়ে একটা ডিসকোর্স তৈরী করা হয়েছে”।

সুপ্রিয় পাঠক, এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জিয়া রহমানকে ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভিবাদন এবং পরিভাষা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে দেখা গেছে। তিনি বলতে চেয়েছেন যে, অশুদ্ধ এবং বিকৃত উচ্চারণে ‘স্লামালেকুম’ যদি কেউ বলে, তাহলে সেটা সঠিক। আর ‘আসসালামু আলাইকুম…’ এভাবে শুদ্ধ এবং সঠিক উচ্চারণে যদি কেউ বলেন, তাহলে সেটি বিএনপি-জামাত বা জঙ্গিত্বের লক্ষণ। তেমনি ভাবে কেউ যদি খোদা হাফেজ না বলে আল্লাহ হাফেজ বলেন, তাহলে সেটাও নাকি জঙ্গিত্ববাদের লক্ষণ।

মুসলিম মেয়েরা যদি, দ্বীন শিখার জন্য, ইসলাম শিখার জন্য, কুরআন শিখার জন্য সাপ্তাহে এক বা একাধিক কোন মজলিসের আয়োজন করেন, কোন বৈঠকের আয়োজন করেন, কোন মাহফিলের আয়োজন করেন, তাহলে সেটা নাকি জঙ্গিত্বের লক্ষণ এবং সেটা নাকি আপত্তিকর, সেটাকে কিনা নিয়ন্ত্রণ করা দরকার।

প্রিয় পাঠক, তার এ সমস্ত মন্তব্যের কারণে অনলাইনে মানুষ ফুঁসে উঠেছে এবং ব্যপকভাবে নিন্দার ঝড় বইছে। আমরা এই প্রফেসরের প্রতি ব্যক্তিগত সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই যে, সালাম- এটি জান্নাতিদের পারষ্পরিক অভিবাদন, ফেরেশতাদের অভিবাদন।

আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন- তাহিয়্যাতুহুম ইয়াওমা ইয়ালকাওনাহু সালামুন”। অর্থাৎ- যেদিন আল্লাহর সাথে জান্নাতে মিলিত হবে, সেদিন তাদের পারস্পরিক অভিবাদন হবে ‘সালাম’। (সূরা আহযাব, ৪৪ আয়াত)।

আরও পড়তে পারেন-

স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিন তাঁর বান্দাদের অভিবাদন জ্ঞাপন করে বলবেন ‘সালাম’। “সালামুন ক্বাওলাম মির-রাব্বির রাহীম”। (সূরা ইয়াসীন, ৫৮ আয়াত)। এ আয়াতে সে বিষয়টি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে জানিয়েছেন।

‘সালাম’ এটি শান্তির বাণী, শান্তির দোয়া। ‘আসসালাম’ এটি আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীনের গুণবাচক একটি নাম। আল্লাহ রাব্বুল আল-আমিনের গুণবাচক একটি নাম সেটাকে শুদ্ধ উচ্চারণ করলে নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা খুশি হবেন। কারো নামকে বিকৃতি করে কেউ যদি উচ্চারণ করেন, তিনি কখনো সন্তুষ্ট হবেন না। অতএব, ‘আসসালাম…’ এভাবে বললে আল্লাহ তায়ালা খুশি হবেন। ‘স্লামালেকুম’ এভাবে বিকৃতিভাবে যদি বলা হয়, সন্দেহাতিত ভাবে সেটি আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হবে।

কিন্তু দুঃখজনক যে, আত্মপরিচয়হীনতায় ভূগতে থাকা, পশ্চিমাদের মুসাহিবি করতে করতে আমাদের দেশের এক শ্রেণির সুশীলদের অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, তারা কি বলছেন না বলছেন নিজেও জানছেন না। ইসলামের এত সাধারণ একটি বিষয়; যেটি মুসলিম মাত্রই জানার কথা, সে বিষয়টুকু পর্যন্ত একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জানছেন না। অথচ তিনি ইসলাম এবং জঙ্গিবাদ নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা করছেন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ঘুরে ঘুরে। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাস্কর এবং দুঃখজনক।

প্রিয় পাঠক, একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক যেখানে বিশুদ্ধ উচ্চারণের প্রতি আহ্বান করার কথা, সেখানে তিনি বিকৃতি উচ্চারণকে সমর্থন করছেন। আবার, শুদ্ধ উচ্চারণকে তিনি জঙ্গিবাদের সাথে তুলনা করে সেটাকে তিনি দোষারোপ করে বেড়াচ্ছেন। কোন অবস্থাতেই, তার এ সব উক্তি গ্রহণযোগ্য তো হতেই পারে না, বরং এই উক্তিসমূহের জন্য তার ক্ষমা চাওয়া উচিত, লজ্জিত হওয়া উচিত এবং এ মুর্খতামূলক মন্তব্য থেকে তার ফিরে আসা উচিত।

প্রিয় পাঠক, আমাদের সমাজে কেউ যদি বিশুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজি বলতে পারেন, আমরা তাকে স্মার্ট বলি। বিশুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজি বলা যে সমাজে স্মার্টনেস, সে সমাজে বিশুদ্ধ উচ্চারণে আরবি বললে কেন জঙ্গিবাদ হতে যাবে? এ ডবল স্ট্যান্ডার্ড তো কোন অবস্থাতেই একজন বিবেকবান মানুষের কাছে কাম্য হতে পারে না।

প্রিয় পাঠক, ওয়াজ-মাহফিল সাধারণত মাঠে হয়ে থাকে। মাঠের প্রোগ্রামে যদি কোন বক্তা ভুল কিছু বলেন, সেটাকে মিডিয়া যেভাবে প্রচার করে থাকে। কিন্তু একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক যখন মিডিয়ার বুকে চেপে বসে মুর্খতা সূলভ মন্তব্য করছেন, ইসলামের অবমাননা হয়, আল্লাহর নামে অপমান হয়, এমন কথা বলছেন এবং যে বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না সে বিষয়ে তিনি পণ্ডিতের মতো একের পর এক জ্ঞান দিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন, সে বিষয়ে মিডিয়াগুলো নিজেদেরকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন কিনা?

মাহফিলের কোন বক্তার কারণে যদি ঢালাওভাবে ওয়াজ-মাহফিলের সমালোচনা করা যায়। তাহলে মিডিয়ায় বসে ভুল-ভাল, আপত্তিকর, হাস্যকর, আপত্তিকর এবং ইসলামবিদ্যেষী মন্তব্য করার কারণে খোদ মিডিয়া ঢালাওভাবে নিজেকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন কি?

সে প্রফেসর সাহেব তার ফেসবুক আইডিতে ইতিমধ্যে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন এবং সেখানে তিনি তার বক্তব্যের ব্যখ্যা দিতে গিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন যে, গোটা অনুষ্ঠান জুড়ে তিনি মুসলিমদের পক্ষ অবলম্বন করেছেন এবং মুসলিমদের পক্ষ হয়ে অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু তিনি যে, সালাম এবং আল্লাহ হাফেজ-এর মতো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শান্তির বাণীগুলোকে অশান্তির অস্ত্র হিসেবে তুলে ধরার অপচেষ্টা করেছেন, অপব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন এবং তিনি যে মুর্খতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন, সেজন্য তিনি একটু লজ্জিত, সেজন্য তিনি একটু দুঃখ প্রকাশ করছেন বা ক্ষমা চাইছেন, এরকম কোন কথা তিনি বলেননি।

আমরা মনে করি, তার এ স্ট্যাটাসও আমাদের কাছে কোনভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে, একজন শিক্ষক হিসেবে আমরা তার কাছে অবশ্যই আশা করব, তিনি একটি পোস্টের মাধ্যমে অথবা তার বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি যে ভুল বক্তব্য দিয়েছেন সেটাকে তিনি প্রত্যাহার করে নিন এবং তার ভুল স্বীকার করে নিন।

আর সম্মানিত দর্শক শ্রোতাদেরকে বলব, অনেক মুসলিম বা নামধারী মুসলিমদেরকে দেখা যায়। এ ধরণের ইস্যু যখন আলোচনায় আসে, তখন মন্তব্যের ঘরে কিংবা ক্যাপশনে এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করে থাকেন, যেগুলো একজন মুসলিম তো দূরের কথা একজন রুচিশীল মানুষের জন্যও কোনভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

মনে রাখা চাই, একজন মুসলিম কখনো গালমন্দ করতে পারে না। অতএব, কোন প্রকার ব্যক্তি আক্রমণমূলক অথবা গালমন্দ হয় অথবা নিচুতার প্রকাশ হয়, এমন কোন কথা একজন মুসলিমকে কখনো বলা উচিত নয়। এ বিষয়ে আমাদের সাবধান থাকা উচিত। সেই সাথে একজন মুসলিম যখন নিজেকে মুসলিম হিসেবে প্রকাশ করছেন অথবা দাবি করছেন, তার অন্তরের ভাবনা উদ্ঘাটন করতে চাওয়া বা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা আমাদের দায়িত্ব নয়। তাকে নাস্তিক বলে এবং মুর্তাদ বলে অবিহিত করা এবং এ জাতিয় অভিধায় তাকে ভূষিত করা; এটা কোনভাবেই আমাদের জন্য সমিচীন বা উচিত হবে না।

অতএব, দায়িত্বশীলতার গন্ডির মধ্য থেকেই এ সমস্ত ভুল এবং ভ্রান্তির বিরুদ্ধে আমাদেরকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে কথা বলতে হবে, তুলে ধরতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আল-আমীন আমাদেরকে সে তাওফীক দান করুন। আমীন।

– শায়খ আহমাদুল্লাহ, চেয়ারম্যান- আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন।

অনুলিখনে- ইফতিখার আহমদ (আতিক)

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।