।। মুনির আহমদ ।।
ভাস্কর্য প্রশ্নে গত এক সপ্তাহ আগ পর্যন্ত আন্দোলন বলতে ধোলাইপাড়ে স্থানীয় তৌহিদী জনতার দুটি সমাবেশ এবং কয়েক জন আলেম বক্তার বক্তব্য ছাড়া বড় কোন আন্দোলনের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে কাউকে দেখিনি। এর মধ্যেই আলেমদেরকে প্রতিহত করতে দেশব্যাপী ক্ষমতাসীন দল ও তাদের ছায়ায় থাকা বাম দলগুলোর দিক থেকে যেনো রীতিমতো যুদ্ধোন্মাদনা শুরু হয়ে যায়।
আলেমবিদ্বেষী বিষোদ্গার ও মাহফিল করতে না দেওয়ার প্রেক্ষিতে গত ২৬ নভেম্বর হেফাজত মহাসচিব ভাস্কর্য নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে অত্যন্ত মার্জিত ভাষায় একটা বিবৃতি দেন- এ পর্যন্তই।
দুই দিন পর আলেমবিদ্বেষী বিষোদ্গার, একদিনেই হেফাজত আমীরের তিনটা মাহফিল করতে না দেওয়া, আরো বেশ কিছু মাহফিল বন্ধ করে দেওয়া এবং বায়তুল মোকাররম থেকে আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারের প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে চাওয়া মাদ্রাসা ছাত্রদের গ্রেফতারের প্রেক্ষিতে হেফাজত আমীর ভাস্কর্য ইস্যুতে মাহফিলে বক্তব্য দেন এবং গ্রেফতারকৃত মাদ্রাসা ছাত্রদের মুক্তি দাবি করেন।
মহাসচিবের বিবৃতি এবং আমীর কর্তৃক হাটহাজারীর মাহফিলে একদিনের বয়ান ছাড়া ভাস্কর্য ইস্যুতে হেফাজতের অন্য আর কোন অফিসিয়াল বিবৃতি বা সুনির্দিষ্ট আন্দোলনের কর্মসূচীর কোন ঘোষণা এ পর্যন্ত নাই। দেশের কোথাও হেফাজতের ব্যানারে এই নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কোন প্রতিবাদ সমাবেশ বা মিছিল হয়নি।
কিন্তু রীতিমতো হেফাজতে ইসলাম, উলামা-মাশায়েখ ও মাদ্রাসাবিরোধী বিষোদ্গার ও ওয়াজ-মাহফিলে বাধাদানের রণ হুংকার যেনো দুর্বার গতিতে বেড়েই চলতে থাকলো।
ক্ষমতাসীন দল ও তাদের আশ্রিত বামবুদ্ধিজীবিদের আলেম বিরোধী রহস্যজনক উন্মাদনার প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার আলেমগণ ভাস্কর্য বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যাদান বন্ধ করতে ও ইসলামের বিধান জানাতে সংবাদ সম্মেলন করলেন। সেখানে আলেমরা এটাও স্পষ্ট করে বলেছেন, “তারা শুধু বিধান জানাতেই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বিধান কার্যকর করার দায়িত্ব সরকারের”।
আরও পড়তে পারেন-
- ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
- কিশোর অপরাধ রোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
- আদর্শ পরিবার গঠনে যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরী
- ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার গুরুত্ব
- মানুষ মারা যাওয়ার পর, তাঁর আত্মার কি হয় ?
তাছাড়া শুরু থেকেই যে কয়জন আলেম ভাস্কর্য ইস্যুতে কথা বলেছেন, তারা সকলেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করেই কথা বলেছেন এবং ইসলামের আলোকে ভাস্কর্য নির্মাণের পরিবর্তে আরো উত্তম উপায়ে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণীয় করে রাখার উপায় নিয়ে ভাবনা-চিন্তার সুপারিশ করেছেন।
ভাস্কর্য ইস্যুতে আলেমবিদ্বেষী বিষোদ্গার, মাহফিলে বাধাদান এবং ভাস্কর্য বিষয়ে বিভ্রান্তিকর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রতিবাদে শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) বায়তুল মোকাররম থেকে ব্যানারবিহীন কিছু মাদ্রাসা ছাত্র ও তৌহিদী জনতা মিছিল বের করতে চাইল। পুলিশ লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দিল। কিন্তু এর প্রতিবাদে মৌখিক প্রতিবাদ ছাড়া পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সারা দেশে আলেমরা কিছুই তো করেননি। চুপচাপ সবর করেছেন ও মনের কষ্টের কথা নীরবে হয়তো আল্লাহকে বলেছেন।
কিন্তু আলেম-বিদ্বেষী বিষোদ্গার, রণহুঙ্কার ও তর্জন-গর্জন যেনো দিন দিন বেড়েই চলেছে। সারাদেশে মাইক বাজিয়ে সমানে আলেমবিদ্বেষী হুংকার চলছেই।
ফ্রান্সে নবী (সা.)এর অবমাননাবিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ঘটনা পরম্পরা বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টত: দেখা যাচ্ছে, কোন না কোনভাবেই যেনো আলেমদেরকে মাঠের সংঘাতে জড়াতে একটা জোর প্রচেষ্টা লক্ষ্যণীয়।
ভাস্কর্য ইস্যুতে ইসলামের আলোকে হেফাজতের দু’চার জন নেতার মৌখিক বক্তব্যদান ছাড়া তো হেফাজত অফিসিয়ালি কোন বিবৃতি প্রকাশ বা কোন আন্দোলন-সংগ্রাম, প্রতিবাদি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেয়নি। তবে কেন হেফাজতে ইসলাম ও আলেমবিরোধী এই উন্মাদনা, রণহুংকার এবং আলেমদেরকে সঙ্ঘাতে জড়াতে নগ্ন উস্কানী, কেউ কিছু বুঝেন কি?
আলেমরা বড় কি অপরাধটা করে ফেলেছেন, কেউ বলবেন কি? নাকি বাংলাদেশকে কথিত ইসলামী মৌলবাদ কবলিত প্রমাণ করে ফায়দা লুটতেই গায়ে পড়ে ঝগড়া বাঁধানোর এই আয়োজন!
[লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে]
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ