Home ইতিহাস ও জীবনী শালিমার বাগ, ইসলামিক স্থাপত্য-শৈলীর বৈশিষ্ট্য

শালিমার বাগ, ইসলামিক স্থাপত্য-শৈলীর বৈশিষ্ট্য

ভারতবর্ষে সুলতানি এবং মোঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস বরাবরই ঐতিহাসিকদের বিস্মিত করেছে। তাঁদের সাম্রাজ্য পরিচালননীতি, প্রজাকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি, একইসঙ্গে তাঁদের নন্দনতাত্ত্বিক এবং স্থাপত্যশৈলীর প্রতি এক আত্মিক টান বরাবরই সুপ্রসিদ্ধ। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, ক্রমবর্ধমান এই বিশ্ব-উষ্ণায়ন তথা গ্লোবাল ওর্য়ামিং-এর সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা যদি ফিরে যেতে পারি সেই মোঘল সাম্রাজ্যের কালে, তাহলে হয়তো পেতে পারি একটুকরো সবুজ, সতেজ হাওয়া।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এবং আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের জীবনযাত্রার নানা পরিবর্তন ঘটলেও প্রকৃতির প্রতি আমাদের আত্মিক যোগাযোগ চিরন্তন। আজকের এই ব্যস্ত সময়ে দাঁড়িয়েও মানুষ যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছোঁয়া বা আভাস পেতে চায়, মোঘল শাসকেরাও ঠিক তেমনইভাবে প্রকৃতিকে দেখেছে এবং প্রাকৃতিক সংরক্ষণের প্রতি এক সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। শালিমার বাগ তার আদর্শ উদাহরণ। 

শালিমার বাগের ইতিহাস

এই প্রসঙ্গেই আমাদের মনে পড়ে মোঘল সম্রাট বাবরের কথা। সম্রাট বাবর বাগান ভালবাসতেন। তাঁরই আমলে একটি নির্দিষ্ট জমিকে চারভাগে ভাগ করে বাগান বানানো হত, একে বলা হত ‘চাহার বাগ’। চাহর বাগ শব্দটি হল ফারসি শব্দ, হিন্দিতে একে চার বাগ বলা হয়। এই বাগানে ফুলের গাছ লাগিয়ে মনোরম পরিবেশ তৈরি করা হত। মোঘল শাসকেরা তাঁদের সাম্রাজ্য বিস্তারের পাশাপাশি অন্যান্য নন্দনতাত্ত্বিক বিষয় সম্প্রসারণেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

আরও পড়তে পারেন-

সুদূর মধ্যএশিয়া এবং পারস্য থেকে এ ধরনের বাগানের ধারণা তাঁরাই প্রথম ভারতবর্ষে নিয়ে এসেছিল বলে অনুমান করা হয়। মোঘল সাম্রাজ্যের নন্দনতাত্ত্বিক এই বিষয়ভাবনা পরবর্তী উত্তরসূরিদের মধ্যেও দেখা গিয়েছিল। মোঘল সম্রাট আকবর, জাহাঙ্গির, শাহজাহান বাগানের প্রতি খুবই আগ্রহী ছিলেন। সেকালের ভারতের চাহর বাগের নির্দশন বললে প্রথমেই মনে পড়বে পাকিস্তানের লাহোরে অবস্থিত শালিমার বাগের কথা।

শালিমার বাগের অবস্থান

লাহোর শহরের ৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডে পাশে বাগবানপুরা এলাকায় এ উদ্যানের অবস্থান। মধ্য এশিয়া, কাশ্মির, পাঞ্জাব, পারস্য ও দিল্লি সালতানাতের চিত্রশৈলী এতে প্রাধান্য পেয়েছে। শালিমার বাগের একটি ইতিহাস রয়েছে। বাগবানপুরার আরাইন মিয়া পরিবারের ভূমিতে এ স্থাপত্যটি নির্মিত হয়েছে।  মুঘল সাম্রাজ্যকে অনবদ্য সেবা দেয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি রাজকীয় উপাধি ‘মিয়া’ লাভ করেন। তৎকালীন সময়ে গৃহস্বামী মিয়া মোহাম্মদ ইউসুফ সম্রাট শাহজাহানকে ইশাক পুরার এ জমিটিতে রাজ প্রকৌশলী কর্তৃক উদ্যান তৈরিতে ভাল অবস্থান ও মাটির গুণাগুণের কারণে স্বত্ত্বত্যাগ করেন। বিনিময়ে সম্রাট শাহজাহান পরিবারটিকে শালিমার উদ্যান পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করেন। এখনও পর্যন্ত এ উদ্যানটি মিয়া পরিবার কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।

এই উদ্যানের সৌন্দর্য

যদিও এই উদ্যানের সার্বিক উৎকর্ষতা এবং নান্দনিকতার জন্য সম্রাট জাহাঙ্গিরকেই কৃতিত্ব দেওয়া যেতে পারে। শালিমার বাগের নির্মাণ কৌশলেও রয়েছে ইসলামিক স্থাপত্য-শৈলীর বৈশিষ্ট্য। পার্সিয়ান গার্ডেনের আদলে এটি তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ এই বাগে রয়েছে অসংখ্য ঝরণা এবং কৃত্রিম জলপ্রপাত। সমগ্র বাগিচার আয়তন প্রায় ৩১একর। যার বিস্তীর্ণ পথ সবুজ ঘাসে মোড়া। দূর থেকে দেখলে সবুজ গালিচা বলে মনে হতেই পারে। সবুজ গালিচায় কিঞ্চিৎ বিশ্রাম দেওয়ার স্বাদ ভ্রমণকারীদের মনে জাগতেই পারে। লাল-নীল-কমলা-সাদা রং-বেরঙের এবং বহুবিচিত্র প্রজাতির ফুল এবং অর্কিডের শোভা যেন বাগানটিকে আরও বেশি পরিমাণে উৎকর্ষতা দিয়েছে। শালিমার বাগের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হল সারিবদ্ধ ম্যাপেল গাছ, শুকনো ম্যাপল গাছের পাতা যখন বাগানের রাস্তায় ইতি-উতি ছড়িয়ে থাকে, তখন তাঁর নন্দনতাত্ত্বিক সৌন্দর্য সত্যিই মনকে শান্ত করে, আনন্দ দেয়।

শালিমার বাগের মধ্যেই চোখে পড়বে সুদৃশ্য ‘দেওয়ান-ই-আম ‘-এর দরবার। কার্যত এই দরবার হলেই সম্রাট সকলের সঙ্গে দেখা করতেন, প্রজাদের আর্জিও তিনি শুনতেন। এটি একেবারে বাগের শেষপ্রান্তে অবস্থিত। মোটের উপরে শালিমার বাগের সৌন্দর্য দেখে যদি একে একটুকরো বেহেস্ত বলে মনে হয়, তাহলে বোধহয় খুব ভুল হবে না।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।