Home ইতিহাস ও জীবনী ইবন আন নাফিস: রক্ত চলাচলের পদ্ধতি আবিষ্কর্তার কাহিনী

ইবন আন নাফিস: রক্ত চলাচলের পদ্ধতি আবিষ্কর্তার কাহিনী

-প্রতীকি ছবি।

মধ্যযুগের অত্যন্ত বিচক্ষণ, প্রতিভাসম্পন্ন পণ্ডিত ছিলেন আলাউদ্দিন আলি ইবন আবুল হাজম আল কুরেশি ইবন আন নাফিস। তিনি একাধারে বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক ছিলেন, ইসলামিক ইতিহাসের সর্ব বৃহৎ মেডিক্যাল এনসাইক্লোপিডিয়া তাঁরই দান।

জন্ম ও শিক্ষা

৬০৭ হিজরি সনে (১২১০ খ্রিস্টাব্দে) দামাস্কাসে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সন্তানরূপে তাঁর জন্ম হয়। অল্প বয়স থেকেই জ্ঞান লাভের দিকে ছিল তাঁর আগ্রহ। কুরআন , হাদিস, উসুল সবই ছোট বয়সে তাঁর কণ্ঠস্থ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর , মুহাত্থাব আদ দীন আব্দুর রাহিম আলি বা আদ দিখাওয়ার এর কাছে তাঁর চিকিৎসাবিজ্ঞান শেখার সূচনা। আদ দিখাওয়ার বিখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ ছিলেন, নুরি চিকিৎসাকেন্দ্র তাঁর দায়িত্বে ছিল। এছাড়া তিনি সিরিয়া ও মিশরের চিকিৎসকদের প্রধান ছিলেন। তাঁর কাছে ইবন আন নাফিস সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে শুরু করেন।

দামাস্কাসসের তৎকালীন শাসক ছিল আয়ুবিদ রাজবংশ, এই বংশের শাসকেরা বিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিদ্যায় অত্যন্ত গুরুত্ব দিত। তাঁদের প্রভাবেই দামাস্কাস ও কায়রো জ্ঞানচর্চার পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল। এরকম শিক্ষামূলক পরিবেশে ইবন আন নাফিস দক্ষ চিকিৎসক হয়ে উঠলেন।

আরও পড়তে পারেন-

৬৩৩ হিজরি সনে তিনি কায়রোর নাসিরি হাসপাতালে ডাক্তার হিসাবে যোগ দেন , পরবর্তীকালে তিনি সেখানে চিকিৎসক ও শিক্ষক উভয় পদেই আসীন ছিলেন। নাসিরি হাসপাতালের পত্তন হয়েছিল ৫৭৭ হিজরি সনে, সুলতান আন নাসির সালাদিন আল আয়ুবির তত্ত্বাবধানে। ইবন আন নাফিসের দক্ষতা দেখে সুলতান তাকে ব্যক্তিগত ভাবে অনুরোধ করেন নাসিরির প্রধান হতে, তিনি তাতে সম্মত হন। কয়েকবছর পর তিনি মনসুরি হাসপাতালের প্রধান রূপে অবতীর্ণ হন।

এই মনসুরি চিকিৎসাকেন্দ্রের পত্তন করেছিলেন সুলতান আল মনসুর ইবন কোয়ালাউন, ৬৮০ হিজরি সনে। তারও বেশ কয়েকবছর পর ইবন আন নাফিস সুলতান আল তাহির বাইবারের প্রধান চিকিৎসক হয়েছিলেন। কায়রোতে বেশ প্রভাবশালী জীবনযাপন করতেন তিনি। তাঁর গ্রন্থাগারে নানা দেশ থেকে নানা বিদ্বান ব্যক্তি পড়াশুনোর জন্য আসত।

রক্তপ্রবাহ আবিষ্কার

বহু শতক ধরে সারা বিশ্বের চিকিৎসকদের ধারণা ছিল যে ১৬২৮ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম হারভে প্রথম রক্তবাহের মধ্যে রক্তচলাচল আবিষ্কার করেন। এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয় যখন ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে মুহাইদিন অত তাতাওয়ই জার্মানির ফ্রাইবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের পি এইচ ডি থিসিসে প্রমাণ করেন উইলিয়াম হারভের বহু আগে ইবন আন  নাফিস এই  বিষয়ে  আবিষ্কার করে গিয়েছেন।

বার্লিন গ্রন্থাগার থেকে তিনি ইবন নাফিসের পাণ্ডুলিপি ‘দ্য এক্স্যপ্ল্যানেশন অফ অ্যানাটমি ইন আল কানুন বুক’-এর অনুবাদ খুঁজে পান। অতঃপর জার্মান ওরিয়েন্টালিস্ট মেয়ার হুভের সাহায্যে তিনি ইবন নাফিসের আবিষ্কারের ব্যাপারটির সত্যতা প্রমাণ করেন।

এই যুগান্তকারী আবিষ্কার ছাড়াও ইবন আন নাফিস বিবিধ বই লিখেছিলেন, তার বেশিরভাগেরই অনুবাদ হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বই হল,

‘ দ্য কনসাইজ বুক ইন দ্য ফান্ডামেন্টালস অফ হাদিস সায়েন্স’

‘এক্সপ্ল্যানেশন অফ হিপ্পোক্রেটাস কালেকশন’

;দ্য কনসাইজ বুক অন্য মেডিসিন’

‘ দ্য কম্প্রিহেনসিভ বুক অন মেডিকেল প্রফেশন হুইচ ইজ দ্য গ্রেটেস্ট অফ ইবন আন নাফিস ওয়ার্ক্স’

শেষের বইটা বৃহত্তম মেডিকেল এনসাইক্লোপিডিয়া ধরা হয়।

সারাজীবন ধরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য নিজের জীবন উতসর্গ করে ৮০ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে, অসুস্থ অবস্থায় কিছু চিকিৎসক তাকে ওয়াইন খাওয়ার অনুরোধ করলে তিনি জানিয়ে দেন যে তিনি মাতাল অবস্থায় কিছুতেই আল্লাহর সম্মুখীন হবেন না। অতঃপর ৬৮৭ হিজরি সনে এক পবিত্র শুক্রবার তাঁর এন্তেকাল হয়। ইতিহাসে তিনি আজও প্রসিদ্ধ হয়ে আছেন।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।