Home ইতিহাস ও জীবনী বির তাওয়িল: যে দেশের কোনও শাসক নেই

বির তাওয়িল: যে দেশের কোনও শাসক নেই

সুপ্রাচীন অতীত থেকে পৃথিবীতে দেশ ও সীমানা নিয়ে মানুষের মধ্যে বোঝাপড়া বিদ্যমান। রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্র, কোনওকিছুই দেশ, সীমানা ও দখলদারির বাইরে নয়। কিন্তু কেমন লাগবে যদি জানা যায় এই পৃথিবীতেই এমন এক অঞ্চল রয়েছে যা মূলত কোনও দেশেরই অধিকারে নেই। ল্যাটিনে এই রকম অঞ্চলকে বলা হয় ‘টেরা নুলিয়া’, অর্থাৎ, ‘যে ভূমি বা অঞ্চলের মালিকানা কারোর হাতে নেই।’

বেশি দূর না, পৃথিবীর একমাত্র টেরা নুলিয়া দেখতে গেলে যেতে হবে মিশর ও সুদানের মধ্যবর্তী অঞ্চল বির তাওয়িল-এ। ২০৬০ বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্র বিশিষ্ট এই মরুভূমির অংশের উপর মালিকানা না রয়েছে মিশরের, না রয়েছে সুদানের। বলা যায়, বির তাওয়িল এমন এক দেশ যার মালিকানা কেউই আর চেয়ে উঠতে পারে না।

বির তাওয়িল ও হালাইব ত্রিভুজ অঞ্চলের ইতিহাস

মানচিত্রে বির তাওয়িল যতই ‘মুক্ত’ হোক, আদতে অঞ্চলটির এই অদ্ভুত অবস্থার জন্য কিন্তু দায়ী ব্রিটিশরা। বলা চলে, ব্রিটিশদের হস্তক্ষেপের জন্যই বির তাওয়িল আজ এত অনাদরের, যেখানে প্রায় একই অবস্থানে অবস্থিত হালা’ইব ত্রিভুজ অঞ্চল দুইদেশের কাছেই ভীষণ আগ্রহের একটি স্থান।

আরও পড়তে পারেন-

মিশর ও সুদান যখন ব্রিটিশ কলোনির অন্তর্গত ছিল তখন দুই দেশের সীমানা সঠিকভাবে চিহ্নিত করার জন্য ব্রিটিশ মানচিত্রকররা দুটো ম্যাপ আঁকেন। প্রথম ম্যাপটি আঁকা হয় ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে। মিশর ও সুদানের সীমানাবর্তী অঞ্চলে বিবিধ উপজাতিয় মানুষের বাস ছিল। ব্রিটিশরা প্রথমে তাঁদের ধর্তব্যের মধ্যে না এনেই সোজা ও সরল রৈখিক একটি সীমান্ত চিহ্নিত করেন। এটি রাজনৈতিক সীমানা হিসাবে পরিচিত।

এরপর, ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ অফিসারদের বোধোদয় হয়। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে সমস্ত উপজাতি মিশরে থাকতে চায় তাদের মিশরের সীমান্তের মধ্যে রাখা হবে। সুদানের ক্ষেত্রেও একই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ফলে, আবার নতুন একটি সীমানা অঙ্কিত হয়। বির তাওয়িল আসওয়ানের আবাব্দা উপজাতির চারণক্ষেত্র ছিল, তাই এই সীমানা অনুসারে সেটিকে মিশরের অন্তর্গত করা হয়। একইভাবে, ঠিক তার পাশে অবস্থিত হালা’ইব ত্রিভুজ অঞ্চলকে খার্তুমের কাছাকাছি হওয়ার কারণে সুদানের অন্তর্গত করা হয়।

পুরনো সীমানার সঙ্গে নতুন সীমানার পার্থক্য হল, এটি সরল রৈখিক সীমানা নয়। মূলত শাসনকার্যের সুবিধার জন্যই এই সীমানা অঙ্কিত হয়।

কেন বির তাওয়িল কোনও দেশের অন্তর্গত নয়?

বির তাওয়িল ও হালা’ইব ত্রিভুজের মধ্যে মূল পার্থক্য হল, দ্বিতীয়টি লোহিত সাগরের নিকটবর্তী। শুধু তাই নয়, অঞ্চলটিতে বন্দরের সুবিধা এবং তেল ও খনিজের ভাণ্ডার রয়েছে। এর ফলে, সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই মিশর ও সুদান দুই দেশই এটির অধিকার দাবী করে আসছে। শুরুতে সুদানের অধিকার কায়েম হলেও, পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসেরের সময় মিশর এক বাহিনী পাঠিয়ে এই অঞ্চলটি দখল করে নেয়। পরবর্তীতে শান্তি চুক্তিতে দুই দেশ সিদ্ধান্ত নেয় যে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে এই অঞ্চল নিয়ে সমস্যায় সমাধান করা হবে। অতঃপর, নানাবিধ আলাপ আলোচনার পরেও এখনও হালা’ইব-এর অধিকার সম্পর্কে খোলাখুলি কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি, এই অঞ্চলের উপজাতীয় মানুষ নিজেদের মিশরীয় বলে দাবী করায় ধরে নেওয়া হচ্ছে অধিকার মিশরের হাতেই ন্যস্ত হবে। যদিও, সুদান এখনও নিজের মানচিত্রে এই অঞ্চলটি সুদানের অন্তর্গত করে রেখেছে।

মূলত, ১৯০২-এর শাসনকার্যের সুবিধার জন্য ব্রিটিশরা যে সীমানা অঙ্কন করেছিল, সুদান সেই সীমানাটিই মেনে চলে। এই সীমানা অনুসারে হালা’ইব সুদানের অন্তর্গত। আর ১৮৯৯ -এর সীমানা মেনে চলে মিশর, যেখানে বিষয়টি ঠিক উল্টো। এই দুই দেশের টানাপোড়েনের ফলে অবহেলিত হয় বির তাওয়িল।

সরকারি ভাবে, যে দেশ বির তাওয়িলকে নিজের বলে মেনে নেবে, সেই দেশ আর হালা’ইব ত্রিভুজের দখল পাবে না। ঠিক এই কারণেই মিশর ও সুদান কেউই বির তাওয়িলকে নিজের দেশের অংশ হিসাবে গণ্য করে না।

লেখক আলাস্ট্যার বনেটের মতে, বির তাওয়িল পৃথিবীর একমাত্র বাসযোগ্য কিন্তু মুক্ত অঞ্চল।

তাহলে কি যে কেউ গিয়ে এই অঞ্চলের মালিকানা দাবী করতে পারে?

একেবারেই নয়। ২০১৪ থেকে শুরু করে তার পরবর্তীতে অনেক মানুষই বির তাওয়িলকে নিজেদের দেশ বলে দাবী জানিয়েছেন। কিন্তু কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থা, ইউ এন ও অন্যান্য দেশ সেই দাবীকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেনি। বেশিরভাগ দাবীই অবশ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়েছে।

সারা পৃথিবীর মানুষ তাকিয়ে রয়েছে কবে মিশর সুদানের এই সমস্যা শেষ হবে এবং কোনও এক দেশ এটিকে নিজের অংশ বলে ঘোষণা করবে। ততদিন, পৃথিবীর এই দেশ দখলের লড়াইয়ের মধ্যে বির তাওয়িল এক ঝলক মুক্তির খতিয়ান।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।