Home ইতিহাস ও জীবনী সুলতান প্রথম মুরাদ: ইউরোপীয় ইসলামের পিতামহ যাকে বলা হয়

সুলতান প্রথম মুরাদ: ইউরোপীয় ইসলামের পিতামহ যাকে বলা হয়

- সুলতান মুরাদের সমাধি।

কোসোভোর প্রিস্টিনা শহরের দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্ত, যেখানে চলমান গাড়ি আর হাওয়ার শব্দ ছাড়া কিছুই শোনা যায় না, তা আদতে কিন্তু ইসলামী ইতিহাসের অন্যতম এক নিদর্শনের ধারক। মূল রাস্তা থেকে খানিক দূর হেঁটে গেলেই চোখে পড়ে এলোমেলো আবর্জনা ছড়িয়ে থাকা একটা ছোট্ট মাঠ, আর সেই মাঠের একটেরে অবস্থিত দেওয়াল ঘেরা একটি স্থান।

মাঠের ধার ঘেঁষে সরু সুরকির পথ ধরে সেই দেওয়ালের দিকে এগোতে শুরু করলেই চোখে পড়বে ধুলো ধূসরিত কিশোরের দল খেলা করছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন এসে হয়ত এক পাউন্ড দু পাউন্ড চাইতেও পারে। সেসব কাটিয়ে অবশেষে পৌঁছনো যাবে সেই দেওয়ালের কাছে। বাইরে থেকে অবশ্য কিছুতেই বোঝা যাবে না যে এই দেওয়ালের আড়ালে যার সমাধি রয়েছে তাঁকে আদতে ইউরোপের সমস্ত মুসলমানদের পিতামহ বলে গণ্য করা হয়।

কালো যে গেট ঠেলে ঢুকতে হয় তা ভীষণভাবে তূর্কী ধাঁচের। ভিতরে যত্ন করে সাজানো বাগান ও ইতিউতি নানা তূর্কী হস্তনির্মিত সামগ্রী ইঙ্গিত দেয়, তুরস্ক থেকে এখনও টাকা পাঠানো হয় এই মাউসোলিয়াম তথা সমাধির পরিচর্যার জন্য। সমাধির প্রবেশের মুখে তুরস্কের পতাকাও সেই একই কথাকে নিশ্চিত করে। আসলে এটি সুলতান প্রথম মুরাদ-এর সমাধিক্ষেত্র। তিনি ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের তৃতীয় সুলতান। আনাতোলিয়ার তৃণভূমি থেকে তুর্কী মুসলমানদের তিনি বলকান প্রদেশে নিয়ে আসেন, আজ সেই তুর্কী মুসলমানরা ইউরোপকে নিজেদের দেশ হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছে।

আরও পড়তে পারেন-

সুলতান প্রথম মুরাদ-এর সমাধির গঠন

ইতিহাস অনুসারে, কোসোভোর প্রথম অটোমান তূর্কী স্থাপত্য হিসাবে এই সমাধিমন্দিরকে ধরা হয়। যদিও, তৈরি হওয়ার পর একাধিক অদলবদল ঘটেছে এর গঠনে। বর্তমানে যে স্থাপত্যটি দেখা যায় তা তৈরি করা হয় হিজরি সন ১২৬১ তে। সমাধির বাগানে প্রবেশ করার পর ডানপাশে কেয়ারটেকারের কাছে আগে নিজের নাম ও পরিচয় নথিভুক্ত করাতে হবে। এই কেয়ারটেকারদের জন্যই কিন্তু সমাধিসহ বাগান ভীষণ যত্নে থাকে। এর জন্য তাদের খানিক অর্থসাহায্যও করা উচিত আমার মতে। যদিও, টার্কিশ কো-অপারেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন এজেন্সি দায়িত্ব সহকারে এঁদের নিয়মিত বেতন দিয়ে থাকেন।

সমাধিতে প্রবেশ করতে গেলে এক বিশাল প্রাচীন গাছে নীচ দিয়ে যেতে হবে। স্থানীয় মুসলমানদের বিশ্বাস এই গাছের রোগ সারানোর অতপ্রাকৃতিক ক্ষমতা রয়েছে। একই বিশ্বাস রয়েছে গাছের ঠিক পাশের পেতলের জলসত্রটির উপর।

সেই গাছ পার হয়ে গেলে সামনে পড়বে হালকা বাদামি রঙের প্রবেশ দ্বার। এই দ্বার দিয়ে প্রবেশ করার পর মহিলাদের জন্য হিজাবের ব্যবস্থা রয়েছে। অতঃপর, জুতো খুলে সমাধির ভিতর প্রবেশ করতে হবে।

সমাধির ভিতরের বিবরণ

সমাধির মধ্যে প্রবেশ করার পর মন আস্তে আস্তে পবিত্র হয়ে ওঠে। আমার সঙ্গে দুজন মহিলাও সমাধি দর্শনে এসেছিলেন। তাঁরা শ্রদ্ধার সঙ্গে ঘরের মাঝখানের কাঠের সমাধির চারপাশ প্রদক্ষিণ করলেন। সমাধিটি বেগুনি কাপড়ে আবৃত, কাপড়ে আবার আরবি ক্যালিগ্রাফিতে কারুকাজ করা। তারপর, তাঁরা সমাধির সামনে নতজানু হয়ে বসে প্রার্থনা করতে শুরু করলেন। অস্বীকার করার জায়গা নেই, ইউরোপে ইসলামী ইতিহাস নিয়ে যদি ভাবনা চিন্তা করতে হয় তবে এই সমাধিস্থল সেই ভাবনাচিন্তায় আদর্শ ইন্ধন দিতে পারে।

সুলতান প্রথম মুরাদ-এর কৃতিত্ব

কথিত আছে, ৮০০ হিজরি সনে কোসোভোর যুদ্ধে ঠিক যে জায়গায় সুলতান প্রথম মুরাদ প্রাণত্যাগ করেছিলেন, সেই স্থানে তৈরি করা হয়েছে এই সমাধিক্ষেত্র। সুলতান মুরাদ আল্লাহর পথকে সঠিক পথ বলে মনে করতেন, তাই আনাতোলিয়া থেকে মুসলমান উম্মাহকে বলকানে নিয়ে আসেন। শুধু তাই নয়, তাঁর নিপুণ রাজনৈতিক বিবেচনায় অটোমান মুসলমানরা ধীরে ধীরে বলকান অঞ্চলের অন্যতম রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়।

কোসোভোর এই সমাধিক্ষেত্রের কথা প্রথম জানা যায় মধ্যযুগের অটোমান ভ্রামণিক এভেলিয়া সেলেবির লেখায়। তিনি ১০৭০ হিজরি সনে এই স্থানে এসে নিজের শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রদান করেছিলেন।

সুলতান প্রথম মুরাদের হাত ধরেই ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপে, তাই ইসলামী ইউরোপের পিতামহ তাঁর জন্য যথাযথ উপাধি, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

কীভাবে যাবেন

লন্ডনের গ্যাটুইক থেকে প্রিস্টিনে যাওয়ার জন্য জার্মানিয়া ফ্লাইট বুক করে নেওয়া ছাড়া আর কোণও উপায় নেই। এরপর এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে নেওয়া বাঞ্ছনীয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।