Home ইতিহাস ও জীবনী আল সুফি ছিলেন মধ্যযুগে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় সর্বশ্রেষ্ঠ

আল সুফি ছিলেন মধ্যযুগে জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চায় সর্বশ্রেষ্ঠ

“তারা কি তাদের উপরে অবস্থিত আকাশের দিকে তাকায় না, কীভাবে আমি তাকে বানিয়েছি, তাকে সুশোভিত করেছি আর তাতে নেই কোনও ফাটল নেই? [কুরআন ৫০ঃ৬]

উপরিলিখিত পবিত্র কুরআনের এই বাণী আমাদের সহিহ মুসলমানদের অনেকসময়ই আকাশের দিকে তাকাতে বাধ্য করেছে। আকাশের শত সহস্র ঝিলমিলে নক্ষত্রের সমাহার আমাদের মনে মহাকাশ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন জাগায়। একজন মুসলমান বিজ্ঞানী কিন্তু আকাশের এই ডাকে কৌতূহলী হয়ে সাড়া দিয়েছিলেন। আর তাই জন্যই প্রাচীন ইসলামে মহাকাশবিজ্ঞান তথা অ্যাস্ট্রোনমি নিয়ে এত প্রভূত পরিমাণ চর্চা হয়েছিল।

এই বিজ্ঞানীই হলেন আবিদ আল রহমান ইবন উমর আল সুফি আর রাজি। মধ্যপ্রাচ্যের এই বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও অঙ্কবিদ পাশ্চাত্য সভ্যতার কাছে আল সুফি বা ল্যাটিনে আজোফি নামে পরিচিত।

আরও পড়তে পারেন-

আল সুফি-র জন্ম ও শিক্ষা

৮ই নভেম্বর ৯০৪ খ্রিস্টাব্দে তেহরানের রায় শহরে আল সুফির জন্ম হয়। শৈশব থেকেই পড়াশুনো ও আকাশ দেখার প্রতি তাঁর ছিল অদম্য আগ্রহ। ৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি দীনাওয়ার ও ইস্ফাহান শহরে গিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান ও অঙ্ক নিয়ে বিশদে পড়াশুনো করেন। তাঁর প্রজ্ঞার কথা সারা বিশ্বে এমন ছড়িয়ে যায় যে ৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে বায়ুইদ সাম্রাজ্যের শাসক আহুদ আল দাওয়ালা তাঁকে নিমন্ত্রণ করে নিজের সভায় জ্যোতির্বিদ রূপে ঠাঁই দেন। আহুদ আল দাওয়ালার সঙ্গে আল সুফির সম্পর্ক এত মধুর ছিল যে সুলতান নিজেকে সুফির ছাত্ররূপে পরিচয় দিতেন।

আল সুফি-র জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহের সূচনা

সুফি যখন অ্যাস্ট্রোনমি নিয়ে পড়াশুনো করতে শুরু করেন তখন গ্রিক-জ্যোতির্বিজ্ঞানের ধারা অনেকাংশেই মৃত। যদিও অষ্টম শতকের দ্বিতীয়ার্ধে কয়েকজন মুসলমান জ্যোতির্বিদ যথা আবু মশহর, আল ফাজারি, আল নাইরিজি ও আল বত্তনি পুনরায় গবেষণা শুরু করেন। সুফি সেখান থেকেই অনুপ্রেরণা পান। সারাজীবন তিনি মহাকাশ ও নক্ষত্রের গবেষণায় নিমগ্ন থেকেছেন। শুধু তাই নয়, জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে অজস্র বই লিখেছেন। মূল বইগুলো আরবিতে হলেও পরবর্তীতে আরও নানা ভাষায় সেগুলো অনুবাদ করা হয়েছে। প্রিয় শিষ্য ও সুলতান আহুদের জন্য তিনি রুপোর একটি ভূগোলক তৈরি করেন যা পরবর্তী ১০৪৩ খ্রিস্টাব্দে ইবন আল সিনাবাদি কায়রো মিউজিয়ামের প্রদর্শনীতে প্রদর্শন করেন।

তবে যে বইয়ের জন্য আল সুফি বিশ্ববন্দিত তা হল ‘সুয়ার আল কওয়াকিব’। ৬১ বছর বয়সে আল সুফি এই বইটি লেখেন এবং নিজের শিক্ষকদের উতসর্গ করেন। এই বইতে ৪৮টি নক্ষত্রমণ্ডলের নিখুঁত বিবরণ দেওয়া রয়েছে। এই বিবরণ কিন্তু মূলত একজন আকাশদর্শক বা ‘স্টারগেজার’এর ভাবনা চিন্তার ক্ষেত্র থেকে উদ্গত।

‘সুয়ার আল কওয়াকিব’-এর বিবরণ

এই বইয়ের মূল উদ্দেশ্য যারা আকাশ দেখতে ভালবাসে তাদেরকে সঠিকভাবে নক্ষত্র চেনানো। তিনি টলেমির আবিষ্কৃত নক্ষত্রপুঞ্জ সম্পর্কে নানা তথ্যের ভুল সংশোধন করেন। এবং তারপর ৪৮টি নক্ষত্রপুঞ্জের প্রত্যেকটির নিখুঁত বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। শুধু তাই নয়, একটি চার্টে প্রত্যেকটি নক্ষত্রপুঞ্জ দেখা যাবে যে যে স্থান থেকে তার অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ, নক্ষত্তের রঙ, এবং প্রত্যেক নক্ষত্রের আয়তন সম্পর্কে সম্যক ধারনা দিয়েছেন তিনি।

এছাড়াও তিনি তাঁর বইয়ে ‘ লার্জ ম্যাগেলানিক ক্লাউড’-এর ধারণা দিয়েছিলেন। যা কয়েক শতক পর আমেরিগো ভেস্পুচি ও ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান আবিষ্কার করবেন। এই বইয়ের সবচেয়ে ইউনিক ব্যাপার হল, আল সুফি প্রত্যেকটা নক্ষত্রপুঞ্জের দুটি করে ছবি এঁকেছিলেন। প্রথম ছবিটি পৃথিবী থেকে আকাশে নক্ষত্রপুঞ্জ দেখার সময়।

দ্বিতীয় ছবিটি পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্য থেকে নক্ষত্রপুঞ্জ দেখার সময়।

তিনি কনস্টেলেশান বা নক্ষত্রপুঞ্জকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছিলেন, প্রথম, একুশটি উত্তুরে নক্ষত্রপুঞ্জ, বারোটি রাশিচক্রের নক্ষত্রপুঞ্জ ও পনেরোটি দক্ষিনী নক্ষত্রপুঞ্জ।

আল সুফি এই বইতে অ্যাস্ট্রোল্যাব নিয়েও লিখেছিলেন

অ্যাস্ট্রোল্যাবকে আধুনিক কম্পাসের প্রাচীন রূপ বলা যেতে পারে। বলা হয়, সারা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় রেখে বুঝতে জ্যোতির্বিজ্ঞানে অ্যাস্ট্রোল্যাব যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়। তিনি অ্যাস্ট্রোলাব যন্ত্রের ১০০০ টি ব্যবহার দেখিয়েছেন, এর মধ্যে সালাত্‌ রাশিচক্র ও কিবলার দিক নির্দেশের মত ব্যবহারও রয়েছে।

আল সুফির এই বইয়ের সাহায্যে পরবর্তীতে বহু মুসলমান পণ্ডিত জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করেছেন। এর মধ্যে প্রসিদ্ধ হল উলুঘ বেগ।

মধ্যযুগের ইসলাম জ্ঞানে বিজ্ঞানে ও সংস্কৃতিতে সর্বাঙ্গসুন্দর এক রূপ ধারণ করেছিল। আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সাঃ ) ইসলামের উন্নতি সম্পর্কে যা স্বপ্ন দেখেছিলেন তার অনেকাংশই সফল করেছিল মধ্যযুগ। তাই আজও সেই সময় আমাদের উম্মাহকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাথেয়।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।