Home ইতিহাস ও জীবনী জীবন ও কর্ম: শায়খুল হাদীস ইমদাদুল হক (রাহ.)

জীবন ও কর্ম: শায়খুল হাদীস ইমদাদুল হক (রাহ.)

।। ফয়সল আহমদ জালালী ।।

সিলেটের ‘ঢাকা দক্ষিণ’ হতে শুরু করে রাজধানী ঢাকায় শায়খুল হাদীস ইমদাদুল হক ছড়িয়েছেন ইলমে হাদীসের জ্যোতি। সর্বশেষ ইংল্যান্ড ও আলোকিত হয়েছে তাঁর বিকিরিত ইলমুল হাদীসের আলোয়। বর্ণাঢ্য এক জীবন ছিল তাঁর। শিশুকাল থেকেই তাঁকে দেখে আসছিলাম। আমার তখনকার একাধিক উস্তাদের উস্তাদ ছিলেন তিনি। সিলেটের বিয়ানী বাজারস্থ বাহাদুরপুর জালালিয়া মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিলে বহুবার এসেছিলেন তিনি অতিথি হিসেবে।

শায়খুল হাদীস দিয়েই যার সূচনা

কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বোচ্চ ধাপ হল দাওরায়ে হাদীস। আর শিক্ষক পদবীর শীর্ষ পদ হল শায়খুল হাদীস। সাহীহুল বুখারীর যিনি অধ্যাপনা করেন তাকে আমাদের দেশে শায়খুল হাদীস উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ইসলামী আরবী শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে পরিপক্কতা লাভের পর পড়ন্ত জীবনে সাধারণত শায়খূল হাদীস হিসেবে বরণ করে নেয়া হয়। তবুও সেই পদ লাভ করা অনেকটা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। শুধু যোগ্যতা হলে ও হয় না। মাওলানা ইমদাদুল হক এমন এক ভাগ্য সুপ্রসন্ন ব্যক্তি ছিলেন যার শিক্ষকতা শুরুই হয় শায়খুল হাদীস হিসেবে।

শায়খুল হাদীস কাম ভাইস প্রিন্সিপাল

আমি শরহুজামী জামাতে যখন উন্নীত হই তখন তিনি ছিলেন সিলেট শহরের কাসিমুল উলূম দরগাহে হযরত শাহ জালাল মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস কাম ভাইস প্রিন্সিপাল। ইচ্ছা করলাম কাসিমুল উলূম দরগাহ মাদ্রাসায় ভর্তি হব। গিয়ে দেখি ভর্তির সময় পার হয়ে গেছে। সিলেটের ‘শহর কুতুব’ মরহুম হাফেজ মাওলানা আকবর আলী ছিলেন এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল। তিনি হজ্বের সফরে থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্বে ছিলেন মাওলানা ইমদাদুল হক । সম্পর্কে আমার তালতো ভাই মাওলানা আবদুল হাসিব ছিলেন তাঁর একান্ত প্রিয় ছাত্র।

তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল শায়খুল হাদীস ইমদাদুল হকের কাছে। আমার প্রতি তিনি এত দয়াদ্র হলেন যে, বিশেষ বিবেচনায় তাৎক্ষনিক আমার ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করলেন। তখনকার তাঁর খাস ছাত্র ছিলেন জকিগঞ্জের মাওলানা সালেহ আহমদ । তিনি দাওরায়ে হাদীস সমাপ্ত করার পরও হযরতের সংস্পর্শে থেকে মুতালা’আর (অধ্যয়ন) জন্য তাঁর রুমেই থাকতেন। তাকে ডেকে বললেন, এই ছেলেটার এখনই ভর্তি পরীক্ষার কাজটি সারতে তুমি সহযোগিতা কর। নির্ধারিত উস্তাদের কাছে নিয়ে আমার ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হল। রেজাল্ট দেখে তাৎক্ষনিক ভর্তি করিয়ে ও নিলেন। তবে আমি হতভাগা সেখানে বেশিদিন থাকতে পারিনি। চলে আসলাম কাসিমুল উলূম মেওয়া মাদ্রাসায়।

রূহানী জগতের কি অদ্ভুত মিল! কিছু দিন পর সেখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত হয়ে আসেন সেই মাওলানা সালেহ আহমদ । এখানে হয়ে গেলেন তিনি আমার উস্তাদ। সালেহ আহমদ ছালিক হিসেবে তিনি খ্যাতি লাভ করেন।

ইমদাদী ইলমে আলোকিত সেই মাওলানা সালেহ আহমদ ছালিক বর্তমানে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আঙ্গুরা মুহাম্মাদপুর মাদ্রাসার স্বনামধন্য সিনিয়র মুহাদ্দিস। বহু গ্রন্থ প্রণেতা । হাদীস শাস্ত্র ও আরবী সাহিত্যের একজন স্বার্থক ভাষ্যকার। মাওলানা ছালিক বলেন, আমার উস্তাদ শায়খুল হাদীস ইমদাদুল হক সাহীহ বুখারীর যেই কপি অধ্যয়ন করেন, তাতে তিনি নিজ হতে টীকা সংযোজন করে রেখেছেন। বিভিন্ন ভাষ্যগ্রন্থ অধ্যয়নের পর সেখানে তাঁর নিজস্ব পর্যবেক্ষণ লিখে রাখতেন। শায়খুল হাদীস ইমদাদুল হক সিলেটে দীর্ঘকাল ইলমে দ্বীনের আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে চলে আসেন রাজধানী ঢাকায়। আমি ও লেখাপড়া শেষে ৭/৮ বছর শিক্ষকতা করি নিজ জেলা সিলেটে অতঃপর নিজেও ঢাকা মুখি হয়ে যাই।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সম্পাদনায়

ঢাকায় এসে আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে লেখালেখিতে যোগদান করি। এবার শায়খুল হাদীস ইমদাদুল হক রাহ.এর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভের সুযোগ হয় । তিনি ছিলেন বিভিন্ন প্রকল্পের অন্যতম সম্পাদক আর আমি ছিলাম নগণ্য লেখক । সীরাত বিশ্বকোষ সম্পাদনা পরিষদ ও “দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম” ও হাদীস গ্রন্থাদির অনুবাদ সম্পাদনা সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিষদের ও সদস্য ছিলেন তিনি। এতে আমার অনেক প্রবন্ধ সম্পাদনা করতে হয়েছে তাঁকে । মাঝে মাঝে তাঁর বাসায় ও যেতে হত। কোন কোন সময় তিনি ও ডেকে নিতেন বাসায়।

উত্তরায় তাঁর নিজস্ব ফ্লাটে ও গিয়েছি অনেকবার। একদিন প্রাসঙ্গিক আলোচনায় আমাকে বললেন, তোমার বহু লেখা সম্পাদনা করেছি আমি। একেকটি প্রবন্ধ দিয়ে স্বতন্ত্র বই রচনা করা যাবে। হযরতের কথায় আমি অবাক হয়ে যাই। কারণ কাউকে খুশি করার জন্য সামনা সামনি প্রশংসা করা তাঁর স্বভাব ছিল না। আমার ব্যর্থতার জীবনে তাঁর এই কথা আমার মনে আশার সঞ্চার করেছিল।

সর্বশেষ ইসলামিক ফাউন্ডেশনে

ইংল্যান্ডে সপরিবারে চলে যাওয়ার পর আর দেখা হয়নি তাঁর সাথে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কাজে ও যোগদান করেননি। সেদিন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অন্যতম গবেষণা কর্মকর্তা ড.আবদুল জলিল ভাই আমাকে বললেন, আল্লামা ইমদাদুল হক র.এর ইনতিকাল সম্পর্কে আপনার ফেইসবুকের লেখাটি পড়ে মরহুমের সাথের অনেক স্মৃতি আমার মনে পড়েছে। বললেন, মরহুম খুব অতিথি পরায়ণ ছিলেন।

তাঁর উত্তরার বাসায় আমাদেরকে দাওআত দিয়ে অত্যন্ত উন্নত মানের মেহমানদারী করেছিলেন। তিনি জানান, মৃত্যুর পূর্বে সর্বশেষ ইসলামিক ফাউন্ডেশনে এসে আমাদের সাথে দেখা করে গেছেন। লাঠি হাতে উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি । সহযোগী হিসেবে তাঁর এক নাতি সাথে ছিল । তখন পুরনো অনেকের খোঁজ খবর নিয়েছেন। আফসোস করলাম, হায় ! শেষবারের মত তাঁর সাথে দেখা হল না আমার।

তাফাজ্জুল হক (রাহ.)এর অভিব্যক্তি

তাঁর বড় ভাই মরহুম শায়খুল হাদীস তাফাজ্জুল হক ছিলেন বক্তৃতার মঞ্চে খুবই জনপ্রিয়। তাই তিনি ছিলেন সর্ব সাধারণে প্রিয় মুখ। তাঁর কণ্ঠ ও উপস্থাপন ছিল অত্যন্ত চমৎকার। তিনি ও ছিলেন প্রখ্যাত শায়খুল হাদীস ও হবিগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত একটি মাদ্রাসার মহাপরিচালক। একদা তিনি তাঁর সহোদর শায়খুল হাদীস ইমদাদুল হক র. সম্পর্কে কোন এক প্রসঙ্গে বলেন, “ইলমী গভীরতায় আমার থেকে ইমদাদ অনেক এগিয়ে”।

আরও পড়তে পারেন-

উল্লেখ্য, গত বছর (২০১৯ খ্রিস্টাব্দ) প্রায় একই সময় তাফাজ্জুল হক সাহেবের ইনতিকাল হয়। তখন আমি ছিলাম নিউ ইয়র্কে । সেখানে তাঁর বহু ভক্ত- অনুরক্ত ও গুণগ্রাহী রয়েছেন। অনেক পূর্ব থেকেই তিনি আমেরিকায় যাতায়াত করতেন। সেখানে বহু মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে তিনি দাওআতী কাজ করে গেছেন। তাঁর স্মৃতি চারণ মূলক অনেক স্মরণ সভায় আমি নিজে ও উপস্থিত ছিলাম। আল্লাহ্ ! তাঁকে ও মাফ করে দাও। দু’জনের ‘ইলমী খেদমতগুলো কবূল কর। ইহ জগতে তাঁরা হাজার হাজার আলিম তৈরি করে গেছেন। তাদের এই ইলমী খেদমতগুলো কবূল করে নাও।

ঈর্ষণীয় প্রতিভা ছিল তাঁর

শায়খুল হাদীস মাওলানা ইমদাদুল হক র.ছিলেন ছাত্র জীবন ও কর্ম জীবনে এক ঈর্ষণীয় প্রতিভার অধিকারী। কর্মজীবনে ঢাকা শহরের প্রসিদ্ধ একাধিক মাদ্রাসায় শায়খুল হাদীস পদে তিনি অধিষ্ঠিত ছিলেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল,জামেয়া হুসাইনিয়া আরজাবাদ, মালিবাগ জামেয়া ও পীরজঙ্গী মাদ্রাসা। তাঁর সঙ্গে শায়খুল হাদীস উপাধিটি ওৎপ্রোত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল। যেখানেই শিক্ষক হিসেবে তিনি গিয়েছেন সেখানেই ছিলেন শায়খুল হাদীস।

তবে পীরজঙ্গী মাদ্রাসায় তিনি একই সাথে মুহতামিমও ছিলেন। এখানকার মুহতামিমের দায়িত্ব তাঁর জন্য সুখকর ছিল না। তিনি ছিলেন স্বাধীন চেতা মানুষ। কমিটি পরিচালিত ঢাকার মাদ্রাসাগুলোতে পরিচালনা পরিষদের যথেষ্ট প্রভাব থাকে। এখানেও তাই ছিল। ফলে এখান থেকে তাঁকে অব্যাহতি নিতে হয়েছিল। সিলেটের কাসিমুল উলূম দরগাহে হযরত শাহজালাল মাদ্রাসায়ও তিনি অনাকাঙিক্ষত পরিস্থিতির শিকার ছিলেন। ঈর্ষণীয় প্রতিভাধারীদের এমনই হতে হয় ইল্লা মাররাহিমাহু রাব্বুহু।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মধ্যমণি

বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের মাদ্রাসাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হয় আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ড । আশির দশকের শুরুর দিকে এই বোর্ডের দাওরায়ে হাদীস উত্তীর্ণদের (গ্রাজুয়েটদের) প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয় সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে। অনুষ্ঠানের মধ্যমণি ছিলেন শায়খুল হাদীস ইমদাদুল হক । এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিখ্যাত ইসলামিক ব্যক্তিত্বগণ অংশগ্রহণ করেন।

বিশ্ব বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার আবুল হাসান আলী নদবী র.ও এতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূতগণ ও তাতে অংশগ্রহণ করেন। আরব দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতগণকে মঞ্চে স্বাগত জানানো, তাদেরকে বক্তৃতার জন্য আমন্ত্রণ, তাদের সাথে মতবিনিময় ইত্যাদি কাজগুলোর দায়িত্ব প্রাপ্ত ছিলেন তিনি। তাদের সাথ আরবীতে অনর্গল কথা বলে তিনি সুচারুরূপে মঞ্চ পরিচালনা করেন । রাষ্ট্রদূতগণের সামনে আরবীতে এই শিক্ষা বোর্ডের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। বিদায় কালে তাদের হাতে এদারার বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকী তুলে দেন। উপস্থিত দর্শক শ্রোতা তাঁর এই প্রাণবন্ত পারফরম্যান্স দেখে অভিভূত হয়।

আদর্শ পিতা

মরহুম আল্লামা ইমদাদুল হক ইলমে দ্বীনের বিভিন্ন ধরনের খেদমতে নিয়োজিত হওয়ার পাশাপাশি সন্তান -সন্ততির ভবিষ্যত সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। ছেলেদের সম্পর্কে জানি, তিনি দুজনকেই ইলমে দ্বীনের শিক্ষায় শিক্ষিত করে গেছেন। তাদের জন্য ঢাকা শহরে স্থায়ী একটি বাসস্থান রেখে যেতে প্রাণপণে চেষ্টা করেন। অবশেষে তাতে তিনি সফল ও হয়েছিলেন। আমার দেখা মতে উত্তরা মডেল টাউনে তাঁর নিজস্ব একটি ফ্ল্যাট ছিল। এ প্রসঙ্গে স্মরণ হয় পারস্য বিজয়ী সা’দ ইবন ওয়াক্কাস রা. এর কথা। মহানবী সা,এর বিদায় হজ্জের সফর সঙ্গী ছিলেন এই বীর মুহাজির সাহাবী । মক্কায় অবস্থান কালে তিনি অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর আশংকা করেন । তখন তিনি ছিলেন একমাত্র মেয়ের পিতা। ফলে তাঁর সকল সম্পদ সাদাকাহ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন মহানবী সা.এর কাছে । উত্তরে রাসূলুল্লাহ সা. তাঁকে যেই ঐতিহাসিক পরামর্শ দিয়েছিলেন । সেখান থেকে পাওয়া যায় সন্তানাদিকে স্বাবলম্বী রেখে যাওয়ার বিষয়টি। মহানবী সা, তাঁকে বলেছিলেন-

ان تذر ورثتك أغنياء خير لك من ان تذرهم عالة يتكففون الناس
তোমার সন্তানদেরকে সচ্ছল রেখে যাওয়া অতি উত্তম, তাদেরকে দরিদ্ররূপে রেখে যাওয়া থেকে। এতে তারা মানুষের কাছে হাত পাতবে।

এটি বুখারী ও মুসলিম কর্তৃক বর্ণিত হাদীস। শায়খুল হাদীস ইমদাদুল হক বহুবার এই হাদীসটির পাঠ দান করেছেন। তাঁর সচেতনতা অবশ্যই প্রশংসনীয় একটি কাজ। এখন তাঁর মেয়েরা ও ছোট ছেলেটি ব্রিটিশ নাগরিক । বড় ছেলে আরব আমিরাতে এক মসজিদের ইমাম ও খতীব।

তাঁর পিছনে সালাত আদায়ের আগ্রহ

মাওলানা শায়খ আবদুল গনী রা. ছিলেন সিলেটের এক বুযুর্গ আলিমও বিশিষ্ট বক্তা । সিলেটের বিয়ানী বাজার উপজেলা শহরস্থ বড় মসজিদের জুমুআর খতীবও ছিলেন তিনি। শিরক বিদআতের বিরুদ্ধে ছিলেন সর্বদা উচ্চ কণ্ঠ। এক ওয়াজ মাহফিলে বিশিষ্ট উলামায়ে কিরামের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত। সেখানে শায়খ আবদুল গনী এবং শায়খুল হাদীস ইমদাদুল হক ও উপস্থিত ছিলেন। মাহফিলে সালাতের ওয়াক্ত হলে, শায়খ আবদুল গনী সাহেব বললেন, আমি একজন শায়খুল হাদীসের ইমামতিতে সালাত আদায়ের আগ্রহ পোষণ করছি। তাই ইমদাদুল হক সাহেব সেখানে ইমামতি করেন। সেই শায়খুল হাদীস ইমদাদুল হক ঢাকায় সপরিবারে বসবাসের জন্য আসার পর জাতীয় ঈদগাহে ইমামতি ও খোৎবা প্রদানে ধন্য হয়েছিলেন। এছাড়া উত্তরার মাসজিদুল গোফরানে ও তিনি এক সময় জুমুআর খতীব ছিলেন। আশকোনায় হাজী ক্যাম্প নির্মিত হলে প্রথম দিকে তিনি ইমাম ও মুআল্লিমুল হুজ্জাজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

রচনাবলী

  • হিদায়াতুস সারী ইলা দিরাসাতি’ল বুখারী
  • তরিকুস সুলূক
  • ইসলাম ও তাসাওউফ ১ম ও ২য় খণ্ড
  • রাসূলুল্লাহ সা,এর শান ও মর্যাদা ও তাঁর প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনের পরিণতি
  • হায়াতুল আমবিয়া সা,
  • The Bible and christianity
  • বাইবেলের স্বরূপ ও খৃস্টধর্ম

তাঁর কয়েকজন উস্তাদ

  • হযরত মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ রাহ.
  • হযরত মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম রাহ.
  • হযরত মাওলানা আব্দুল আযীয রাহ.
  • হযরত মাওলানা আহমাদুল হক রাহ.
  • হযরত মাওলানা আবুল হাসান চাটগামী রাহ.
  • হযরত মাওলানা আহমদ শফী’ রাহ. প্রমুখ খ্যাতনামা মনিষীগণ।

তাসাওউফ ও সুলূক

উপমহাদেশের হাক্কানী উলামায়ে কিরাম ইলমে হাদীস ও ইলমে তাসাওউফের মাঝে কোন বিরোধ আছে বলে মনে করেন না। তাসাওউফের নামে যারা ভণ্ডামি করে তাদের কথা ভিন্ন। তাদেরকে আরবরা কেন, এদেশের আহলে হক উলামায়ে কিরামও বিভ্রান্ত মনে করেন। তাই আমরা দেখতে পাই, এ অঞ্চলের শীর্ষ স্থানীয় মুহাদ্দিসগণ একদিকে ইলমে হাদীসের দরস দিচ্ছেন আর অপর দিকে সবক দিচ্ছেন তাযকিয়ায়ে নফসের।

শায়খুল হাদীস ইমদাদুল হক শুধু সবকই না, তাসাওউফ শাস্ত্রে দুই খণ্ডের গ্রন্থও রচনা করে গেছেন। মরহুম প্রথমে খলীফায়ে থানবী. মুফতী ফয়জুল্লাহ রাহ. এর নিকট বায়আত হন। তাঁর ইন্তেকালের পর খলীফায়ে মাদানী হযরত মাওলানা আব্দুল মতীন চৌধুরী শায়খে ফুলবাড়ী রাহ. এর নিকট বায়আত হন। প্রচুর সাধনায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করে অবশেষে তিনি হযরত শায়খে ফুলবাড়ী রাহ. হতে খেলাফত লাভে ধন্য হন। শায়খের ইনতিকালের পর তাঁর মুরীদগণ হযরত ইমদাদুল হক কে উত্তম বিকল্প হিসেবে বরণ করে নেন।

ইন্তেকাল

ইলমে হাদীসের এই কাণ্ডারির ইনতিকাল সংবাদে খুবই মর্মাহত হয়েছি। গত ৬ ডিসেম্বর ২০২০ ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে তাঁর ইনতিকাল হয়। আল্লাহ্ ! তোমার ইলমে দ্বীনের এই নিরলস খাদিমকে জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে দাও।

লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস- দারুল উলূম, মিরপুর-১৩, ঢাকা এবং গবেষক- ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।