Home ইতিহাস ও জীবনী ইবন আল বাইতার: ইসলামীয় স্বর্ণযুগের বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী এবং ঔষধ প্রস্তুতকারক

ইবন আল বাইতার: ইসলামীয় স্বর্ণযুগের বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী এবং ঔষধ প্রস্তুতকারক

ইসলামীয় স্বর্ণযুগের সম্ভবত সবথেকে বিখ্যাত ঔষধ প্রস্তুতকারকের নাম ইবন আল বাইতার। তাঁর সর্বপ্রধান কৃতিত্ব হল মধ্যযুগে মুসলিম বিজ্ঞানী-ঔষধপ্রস্তুতকারক দের কাজের খোঁজ রাখা এবং সেগুলো নথিভুক্ত করা।

তাঁকে মধ্যযুগের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদবিদ্যা এবং ঔষধ সম্পর্কীয় এনসাইক্লোপেডিয়া বা জ্ঞানকোষ রচয়িতা হিসেবে অভিহিত করা হয়।

তিনি একাই প্রায় ৪০০ রকমের ঔষধের বিবরণ নথিভুক্ত করে গেছেন যার ঐতিহাসিক মূল্য অসীম এবং যা প্রমাণ করে মধ্যযুগে মুসলিমদের কৃতিত্ব এবং পারদর্শীতা। ইবন আল বাইতার ছিলেন একাধারে উদ্ভিদবিজ্ঞানী, ঔষধ প্রস্তুতকারক এবং নামকরা ডাক্তার।

ইবন আল বাইতার-এর সংক্ষিপ্ত জীবন

১১৯৭ অব্দে ইবন আল বাইতার  স্পেনের মালাগা শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সে সময়ের বিখ্যাত উদ্ভিদবিজ্ঞানী আবু আল আব্বাস আল নাবাতির কাছে তিনি উদ্ভিদ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন।

ভিত্তিহীন গুজবে কান না দিয়ে আল নাবাতির নিজে বৈজ্ঞানিক উপায়ে যাচাই করে ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ এবং তাদের প্রয়োগ প্রক্রিয়ায় ভীষণ অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন আল বাইতার।

আরও পড়তে পারেন-

মূলত তাঁর সাথেই স্পেনের বিভিন্ন অংশ থেকে ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ সংগ্রহে হাতেখড়ি হয় আল বাইতারের। এরপর ১২১৯ অব্দে তিনি আফ্রিকার উপকূলে যাত্রা করেন উদ্ভিদ সংগ্রহ এবং তাদের সম্পর্কে জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে।

১২২৪ অব্দে তিনি আয়ুবিদ বংশের সুলতান আল কামিলের সভার প্রধান উদ্ভিদবিজ্ঞানী হিসেবে নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে আল কামিল সিরিয়া জয় করলে তিনি সিরিয়া গিয়েও ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে তাদের গুনাগুন লিপিবদ্ধ করেন। ১২৪৮ অব্দে মাত্র ৫১ বছর বয়সে সিরিয়ার দামাস্কাস শহরে তাঁর মৃত্যু হয়।

ইবন আল বাইতার-এর বিখ্যাত কাজ

ইবন আল বাইতারের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের বিস্তৃতি উত্তর আফ্রিকা থেকে সিরিয়া হয়ে আরব এমনকি প্যালেস্টাইন অব্দি বিস্তৃত ছিল। সেখানকার ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ করে তাদের গুণাবলী এবং তা থেকে ঔষধ প্রস্তুত প্রণালী তিনি অনেক মূল্যবান বইতে লিপিবদ্ধ করে গেছেন।

তাঁর লেখা সবথেকে বিখ্যাত গ্রন্থ হল কিতাব আল-জামি ফি আল-আদবিয়া আল-মুফরাদা। এই বইতে প্রায় ১৪০০ ভেষজ গুনযুক্ত উদ্ভিদের বর্ণনা তিনি দিয়ে গেছে, যাদের মধ্যে ২০০ টির উল্লেখ তাঁর আগে কোথাও পাওয়া যায় না।

এই গ্রন্থে তিনি সে সময়ের প্রায় ১৫০ জন মুসলিম উদ্ভিদবিজ্ঞানীর সাথে সাথে ২০ জন গ্রীক উদ্ভিদবিজ্ঞানীর কাজের উল্লেখ করেছেন। এই গ্রন্থটি অষ্টাদশ শতাব্দী অব্দি বহুল প্রচলিত ছিল এবং ল্যাটিন ভাষাতেও অনূদিত হয়েছিল।

তাঁর লেখা বই 

ইবন আল বাইতারের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হল কিতাব আল-মলুঘনি ফি আল-আদবিয়া আল-মুফরাদা। এই গ্রন্থটিকে মুসলিম ঔষধের জ্ঞানকোষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রায় ২০০ রকমের ঔষধ প্রক্রিয়া এবং মাথা, নাক, কান, চোখ ইত্যাদি সংক্রান্ত সমস্যায় তাদের প্রয়োগবিধি এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছেন তিনি।

এই বইটিতে অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে মুসলিম শল্যচিকিৎসক ও বিজ্ঞানী কাশিম জাহারাবির কাজের উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর গ্রন্থগুলিতে আরবিকের পাশাপাশি ল্যাটিন এবং গ্রিক ভাষায় নামকরণ করেছিলেন আর এভাবেই প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যের দেশে ছড়িয়ে গেছিল ইবন আল বাইতারের কাজ এবং নাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।