Home ইতিহাস ও জীবনী মুসলমান সমাধিক্ষেত্র: স্পেনের বুকে খুঁজে পাওয়া এক প্রাচীন ইতিহাস

মুসলমান সমাধিক্ষেত্র: স্পেনের বুকে খুঁজে পাওয়া এক প্রাচীন ইতিহাস

মানবসভ্যতার বুকে ইসলাম কীভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে, তার অন্যতম নিদর্শন বিশ্বের নানা স্থানে খুঁজে পাওয়া মুসলমান সমাধিক্ষেত্র । সমাধিগুলো দাখিল করে ইতিহাসের যেস্থানে আমাদের পবিত্র ধর্ম পা রেখেছে, সেখানেই মানুষকে ঈমানের ধারনা দিয়েছে। তাই, বলা যায়, ইসলামী ইতিহাসে এই সমাধিক্ষেত্রগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সারা বিশ্বে বিভিন্ন জানা অজানা স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে এগুলি। ঠিক যেমন স্পেনের টাউস্ট শহর এর একটি উদাহরণ।

স্পেনে খুঁজে পাওয়া প্রাচীন মুসলমান সমাধিক্ষেত্র

উত্তর পশ্চিম স্পেনের জারাগোজা শহরের কাছের ছোট্ট এক মফস্বল শহর তাউস্টে। স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে রাস্তা বানানোর কাজ চলছিল। হঠাৎ মাটির স্তূপের মধ্যে উঠে এল মানুষের হাড়ের টুকরো। স্তম্ভিত শ্রমিকরা পরিদর্শকের নির্দেশে আরও খনন শুরু করলে দেখা গেল আরও হাড় উঠে আসছে।

আরও পড়তে পারেন-

স্থানীয় প্রত্নতাত্ত্বিকদের জানানো হল বিষয়টি। প্রত্নতাত্ত্বিকরা এসে আবিষ্কার করলেন, যে অঞ্চলে রাস্তা বানানো হচ্ছিল তা আদতে অষ্টম থেকে একাদশ শতক পর্যন্ত মুসলমান সমাধিক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। তাঁরা আরও জানালেন, সমগ্র স্পেনের ইসলামী ইতিহাসে এই সমাধিক্ষেত্রটি সবচেয়ে পুরনো ও প্রায় অক্ষত।

প্রায় ৪০০ সমাধি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে এই ইসলামী সমাধিক্ষেত্রে। সম্পূর্ণ ক্ষেত্রটি পাঁচ অথবা ছয় একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। তাউস্টের অধিবাসীদের মতে, আগে এখানে ইসলামী ইতিহাসের কোনও প্রমাণ বা নিদর্শন পাওয়া যায়নি। তাঁরা মনে করতেন এই শহরে হয়তো ইসলাম পা রাখেনি। কিন্তু এই আবিষ্কার তাঁদের ভুল ভেঙ্গে দিয়েছে।

তাউস্টের এল পাতিয়াজ সংস্কৃতি কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নৃতত্ববিদ মরিয়ম পিনা পার্দো জানালেন, “ এই মুসলমান সমাধিক্ষেত্র প্রমাণ যে অষ্টম শতকে এই তাউস্টে শহর ইসলামী জনবসতি ছিল। শহরের নানা অংশ অস্পষ্ট বেশ কিছু প্রমাণ আগে পাওয়া গেলেও, এই সমাধিক্ষেত্রই সবচেয়ে প্রকট নিদর্শণ।” তিনি আরও জানান যে প্রত্যেকটি দেহ নাকি সহি ইসলামী মতে দক্ষিণ পূর্বে মক্কামুখী করে সমাধি দেওয়া হয়েছিল।

তাউস্ট শহরে ইসলামী জনসমাগমের ইতিহাস

৭১১ অব্দে আইবেরিয় উপদ্বীপের দখল নেয় মুর উপজাতি, তারাই প্রথম স্পেন ও তৎসন্নিহিত অঞ্চলের নাম দেয় আল আন্দালুস বা আন্দালুসিয়া। মুর উপজাতি মূলত ইসলাম ধর্মাবলম্বি ছিল। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে মাত্র সাত বছরে পুরো আইবেরিয় উপদ্বীপের দখল নেয় ইসলাম।

এই সময়েই একদল আরব বণিকের হাত ধরে তাউস্ট ও জারাগোজায় ইসলামী চিন্তাধারার সূচনা। আল আন্দালুসে প্রথম সুগঠিত রাজশাসনের সূচনা করে উম্মাইয়াদ রাজবংশ। কিন্তু পরবর্তীকালে আভ্যন্তরীণ মতবিরোধের জন্য এই রাজবংশে ফাটল দেখা যায়। ছোট ছোট স্বাধীন শাসকদলের পত্তন হয় এই সময়, তাদের বলা হত তৈফা। প্রত্নবিদদের মতে, এই মুসলমান সমাধিক্ষেত্র ঐ সময়কারই।

তারপর সমুদ্রপৃষ্ঠে অজস্র জোয়ার ভাঁটা হয়েছে। অসংখ্য বার আল-আন্দালুসে দেখা গিয়েছে ঈদের চাঁদ। মুসলমান শাসন থেকে ক্ষমতা খ্রিস্টানদের হাতে এসেছে ১৪৯২ সালে। কিন্তু তবু, ইসলাম স্পেন পর্তুগালের জীবন বোধ ও দেশের মাটিতে রেখে গিয়ে অজস্র প্রভাব।

মুসলমান শাসনের সময় আল আন্দালুসের সামাজিক অবস্থাকে বলা হত “সহাবস্থানের উদাহরণ”। যে সমাজে মুসলমান, খ্রিস্টান ও ঈহুদিরা বন্ধুত্বপূর্ণভাবে বাস করতেন। কিন্তু অনেক ঐতিহাসিকের মতে, এটি অনেকাংশেই সঠিক নয়।

বর্তমানে সমাধিক্ষেত্রটি সম্পর্কে যা সিদ্ধান্ত হয়েছে

আবিষ্কার হওয়ার এক মাসের মধ্যেই সমাধিগুলি থেকে প্রাচীন দেহাবশেষ যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সংগ্রহশালায়। মাত্র ১০ শতাংশ দেহাবশেষ নিয়ে প্রত্নবিদ ও বিজ্ঞানীরা গবেষণা করবেন। তাঁদের আশা এই গবেষণার ফলে আল আন্দালুসের ইসলামের প্রসার ও প্রভাব সম্পর্কে নতুন অনেক তথ্য জানা যাবে।

একটি প্রাচীন ধর্ম ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে গেলে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে সেই ধর্ম ও সমাজের মানুষ। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেই মানুষের দেহাবশেষ। তাই বলা যায়, আল আন্দালুসের ইসলামী ইতিহাসে নতুন কিছু আঙ্গিক যোগ করবে ৪০০ বছরের প্রাচীন এই মুসলমান সমাধিক্ষেত্র।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।