Home ইতিহাস ও জীবনী রোরাইমা পাহাড়: ভেনেজুয়েলার ‘আকাশে ভাসমান’ অদ্ভুত এক ভূখন্ড

রোরাইমা পাহাড়: ভেনেজুয়েলার ‘আকাশে ভাসমান’ অদ্ভুত এক ভূখন্ড

আচ্ছা যদি এমন কোনো জায়গার খোঁজ পাওয়া যায় পৃথিবীতে যেখানে আজও ডাইনোসরেরা দিব্যি বেঁচে রয়েছে? গল্পে-সিনেমায় এমন কতকিছু আমরা দেখেছি। তেমনই অনেকের কল্পনায় ভেনেজুয়েলার রেইনফরেস্টের মধ্যে থাকা একগুচ্ছ সুউচ্চ মালভূমির মধ্যে অবস্থিত রোরাইমা পাহাড় হল তেমন এক টুকরো ভুখন্ড।

১৮৮৪ সালে ইংরেজ উদ্ভিদবিজ্ঞানী এভারার্ড ইম থার্ন রোরাইমা পাহাড়ে উঠেছিলেন। তাঁর বিবরণ অবলম্বন করে বিখ্যাত উপন্যাসিক স্যার আর্থার কোনান ডয়েল তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস “The Lost World” লিখেছিলেন।

তাঁর কল্পনায় সেখানে ডাইনোসরেরা চরে বেড়ায়, অদ্ভুত সব গাছপালা আর অদ্ভুত জন্তু-জানোয়ারের এক বিচিত্র দেশ সেটি। এই অংশের পাহাড়গুলো সম্পর্কে প্রথম ইউরোপীয়ান ভূপর্যটক স্যার ওয়াল্টার রেলে ১৫৯৫ সালে লিখেছিলেন এক হিরে ভর্তি অদ্ভুত স্ফটিক পাহাড়ের কথা। এই সমস্ত গল্প এবং ভ্রমণ বৃত্তান্ত রোরাইমা পাহাড়কে বানিয়েছে সেই হারিয়ে যাওয়া পৃথিবী যা নিয়ে মানুষের অপরিসীম কৌতুহল।

আরও পড়তে পারেন-

রোরাইমা পাহাড় এবং তার ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য

ভেনেজুয়েলার রেইনফরেস্টের মধ্যে এক মালভূমিগুচ্ছ রয়েছে যেগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯০০০ ফুট উঁচু। সেই মালভূমির কয়েকটি চূড়া প্রায় ১৩০০ ফুট উঁচু হয়ে পাহাড়ের আকার নিয়েছে যেগুলোকে স্থানীয় ভাষায় ‘তেপুই’ বলা হয়।

এই পাহাড়ি মালভুমি গুলো আজ থেকে প্রায় ২৫ থেকে ৪০ কোটি বছর আগে গন্ডোয়ানাল্যান্ড তৈরীর সময় থেকেই বিদ্যমান। এরপর ভূত্বকের ফাটল দিয়ে লাভা বেরিয়ে তা উঁচু হয়ে পাহাড়ের চূড়া গুলো তৈরী হয় এবং বহু কোটি বছর ধরে বায়ু এবং জল দ্বারা ক্ষয় হয়ে প্রায় ২০ কোটি বছর আগে এখনকার বর্তমান রূপ ধারণ করে।

চূড়াগুলি পাদদেশের থেকে এতটাই উঁচু যে আকাশ থেকে দেখলে মনে হয় যেন একখন্ড ভূমি আকাশে ভেসে রয়েছে

এখানকার ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এমন অনন্য যে হাজার হাজার এমন সমস্ত গাছপালার এখানে যাদের বাকি পৃথিবীতে আর কোথাও পাওয়া যায় না। পাহাড়গুলি এত বেশিদিন ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে যে এখানকার জীব-বৈচিত্র্য বিবর্তনের ধাপ গুলিকে আজও ধরে রেখেছে।

জার্মানির National Geographic Society এর হয়ে সেখানকার ভূপর্যটক উয়ে জর্জ ১৯৮৯ সালে রোরাইমা পাহাড়ের মাথায় ওঠেন এবং তাঁর কথায়, “এখানে প্রাপ্ত প্রায় ১০০০০ রকমের উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি কেবলমাত্র এখানেই পাওয়া যায়। আরও নতুন প্রজাতির খোঁজ চলছে।” এই মালভুমি এবং পাহাড় গুলি এতটাই দুর্গম যে এদের ৪৪ বর্গকিমি ক্ষেত্রফলের শতাংশের নিরিখে মাত্র কয়েক শতাংশই ঘোরা গেছে।

রোরাইমা পাহাড় এবং হারিয়ে যাওয়া পৃথিবী

রোরাইমা পাহাড়কে নিয়ে ভেনেজুয়েলার স্থানীয় আদিবাসীদের মধ্যে অনেক প্রবাদ চালু আছে। এই পাহাড়কে তারা পবিত্র বলে মনে করে এবং তাদের মতে একবার যারা এতে চড়ে তারা কেউ ফিরে আসে না।

এমন মতবাদও চালু রয়েছে যেখানে বলা হয় রোরাইমা পাহাড় আসলে একটি দৈব পাহাড়ের গুঁড়ি। তাদের কোনো এক পূর্বপুরুষের জন্য সেই গাছ নষ্ট হয়ে যায় এবং এক ভয়ঙ্কর বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়।

উয়ে জর্জ তার বর্ণনায় লিখেছেন, “ইম থার্ন কে অনুসরণ করে আমরা যারা এই পাহাড় চূড়োয় ডাইনোসর খুঁজতে এসেছিলাম, তারা কোনো দেহাবশেষও পাইনি।”

যদিও এখানে ডাইনোসর বা প্রাগৈতিহাসিক জীব-জন্তুদের কোনো চিহ্ন এখনো পাওয়া যায়নি, তবে এখানে যে কালো ব্যাঙ আর ট্যারান্টুলা পাওয়া যায় তা পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। এই মালভূমিগুলি আদতে প্রচন্ড দুর্গম এবং তার সাথে প্রায় সবসময় বৃষ্টিপাত এখানে চালানো সমস্ত অভিযানকে আরো দুর্গম করে তোলে। তবে বিজ্ঞানীরা এখনও মনে করেন যে রোরাইমা পাহাড়ে আরও নতুন প্রাণী আছে, শুধু মাত্র তাদের খুঁজে পাওয়ার অপেক্ষা।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।