Home ইতিহাস ও জীবনী জাবির ইবন হাইয়ান: ইসলামীয় স্বর্ণযুগের বিখ্যাত রসায়নবিদ

জাবির ইবন হাইয়ান: ইসলামীয় স্বর্ণযুগের বিখ্যাত রসায়নবিদ

জাবির ইবন হাইয়ান ছিলেন অষ্টম শতাব্দীতে ইসলামীয় নবজাগরণের এক কান্ডারী। তাকে রসায়নের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাঁর লেখা গুলি জাবিরীয়ান কর্পাস বা জাবিরীয়ান রচনাবলী হিসেবে সুবিখ্যাত।

জাবির ইবন হাইয়ান আলকেমিস্ট বা অপরসায়নবিদ হিসেবে তাঁর সময়ে সুপ্রসিদ্ধ ছিলেন এবং তাঁর কাজকর্ম থেকেই মনে করা হয় পরবর্তীতে রসায়নের প্রতিষ্ঠা হয়। ইউরোপে রসায়নের বিস্তার তাঁর হাত ধরেই হয়েছিল।

ল্যাটিন নাম ‘জিবের’ এর সঙ্কলনে তাঁরই কাজকর্ম ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। তবে তাঁর কাজকর্ম শুধুই রসায়নে সীমাবদ্ধ ছিল না, তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিষশাস্ত্র, ঔষধ, প্রাণী এবং উদ্ভিদ বিদ্যাতেও পারদর্শী ছিলেন।

আরও পড়তে পারেন-

জাবির ইবন হাইয়ান ও তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী

মনে করা হয় হাইয়ান ৭২১ অব্দে পারস্যের (বর্তমান ইরাক) টাস বলে একটি জায়গায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আব্বা সেই সময়ের নামকরা ঔষধ প্রস্তুতকারক ছিলেন এবং সেখান থেকেই রসায়নের প্রতি হাইয়ানের আকর্ষণ তৈরী হয়। হাইয়ানের আব্বা ছিলেন আব্বাসিদ খলিফতের সমর্থক এবং সেই কারণে সেই সময়ে সিংহাসনে থাকা উমায়াদরা তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেন। তখন তারা ইরাকের কুফা শহরে থাকতেন এবং তাঁর আব্বার মৃত্যুর পর তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় ইয়েমেনে তাঁর আত্মীয়দের কাছে।

সেখানেই তিনি কোরান, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, অপরসায়নে শিক্ষালাভ করেন। এরপর উমায়াদ বংশের অবসান ঘটিয়ে আব্বাসিদ খলিফতের প্রতিষ্ঠা হলে জাবির ইবন হাইয়ান বাগদাদে যাওয়া মনস্থির করেন। তাঁর কাজকর্ম এবং বিজ্ঞান গবেষণায় মুগ্ধ হয়ে বিখ্যাত আব্বাসিদ খলিফা হারুণ অল রাশিদ তাঁকে নিজের সভায় আলকেমিস্ট হিসেবে জায়গা দেন। পরবর্তীকালে তিনি কুফা শহরে ফেরত আসেন এবং ৯৪ বছর বয়সে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

জাবির ইবন হাইয়ান কী অবদান রেখেছেন?

পর্যায় সারণির সৃষ্টিকর্তা হিসেবে সবাই মেন্ডেলিভের নাম নেন, কিন্তু জাবির ইবন হাইয়ান সর্বপ্রথম রাসায়নিক মৌলগুলিকে আলাদা করে চিহ্নিত করার লক্ষ্যে প্রাচীন গ্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করে তালিকা বা সারণি বানিয়েছিলেন। হাইয়ান প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদ্ধতির আবিষ্কর্তা বা ব্যাখ্যাকারক যেমন – পাতন, ঊর্ধপাতন, স্ফটিককরণ, পরিশোধন, সংমিশ্রণ, তরলীকরণ, বাষ্পীভবন, পরিস্রাবন এবং জারণ। সালফিউরিক, নাইট্রিক এবং নাইট্রো-মিউরিয়েটিক এসিড আবিষ্কার করে রসায়নের দুনিয়ায় বিপ্লব এনেছিলেন তিনি।

জাবির ইবন হাইয়ানের আবিষ্কারের ঝুলিতে আছে ইস্পাত তৈরী, জলরোধক পোশাকের বার্নিশ, জামা কাপড়ের রং, চামড়ার ট্যান করার পদ্ধতি, কাঁচ তৈরীতে ম্যাঙ্গানিজ-ডাই-অক্সাইড এর ব্যবহার, লোহার জং রোধক ব্যবস্থা, রং এবং গ্রিজের শনাক্তকরণ পদ্ধতি। তিনি একটি সুনির্দিষ্ট ওজন মাপার যন্ত্র বানিয়েছিলেন যার সাহায্যে ১ কিলোগ্রামের ৬৪৮০ গুণ কম ওজন পরিমাপ করা যেত।

এই যন্ত্র বানিয়ে তিনি দেখিয়েছিলেন কোনো ধাতুর জারণ ঘটলে তার ওজন কমে যায়। তাঁর রচনাবলীর সংখ্যা প্রায় ১৩০০ এবং এর মধ্যে ৩০০টি লেখা দর্শন নিয়ে, ৩০০ টি যন্ত্রবিদ্যার উপর, ৫০০ টি পদার্থবিদ্যার উপর, ১১২ টি অপরসায়ন বা আলকেমির উপর। যে বিষয়ে সব থেকে বেশি দক্ষতা অর্জন করেছিলেন, সেই রসায়নের উপর লেখা ৭০টি গ্রন্থে তাঁর সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার বর্ণনা দিয়ে গেছেন জাবির ইবন হাইয়ান।

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।